শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

অবশেষে টাকার বান্ডেলের ওপর ঘুমিয়ে থাকা ডিবির উপ-পরিদর্শক (এসআই) আরিফুর রহমানকে প্রত্যাহার (ক্লোজড)

স্টাফ রিপোর্টার নারায়ণগঞ্জ থেকে | প্রকাশের সময় : ১১ নভেম্বর, ২০১৯, ৫:২৫ পিএম

অবশেষে টাকার বান্ডেলের ওপর ঘুমিয়ে থাকা ডিবির উপ-পরিদর্শক (এসআই) আরিফুর রহমানকে প্রত্যাহার (ক্লোজড) করা হয়েছে। জেলা পুলিশ প্রশাসন কর্তৃপক্ষ তাকে ডিবি থেকে ক্লোজড করে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করেছে। রোববার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বিভিন্ন সময় নানা ধরণের বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়া এই পুলিশ কর্মকর্তাকে সর্বশেষ গেলো সপ্তাহে গাড়ির ভেতরে টাকার বান্ডেলের ওপর বসে ঘুমিয়ে থাকার ঘটনায় বিতর্ক সৃষ্টি হলে তাকে প্রত্যাহর (ক্লোজড) করার সিদ্ধারাত নেয় জেলা পুলিশ প্রশাসন।
যদিও জেলা পুলিশ প্রশাসন থেকে বলা হচ্ছে, প্রশাসনিক কারণে তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে জেলা পুলিশেরই একটি সূত্র জানিয়েছে, টাকার বান্ডেলের ওপর ঘুমিয়ে থাকার ঘটনায় যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিলো সেই সূত্র ধরেই তাকে প্রত্যাহার করা হয়।
প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহে হাইয়েস মাইক্রোবাসের ভেতরে সিটে হেলান দিয়ে ক্লান্ত দেহে টাকার ব্যান্ডেলের ওপর হেলে পড়েন এস AvB আরিফুর রহমান। কখন ঘুমিয়ে গেছেন খেয়াল নেই, বেরসিক পাবলিক ওই অবস্থায় তাকে ক্যামেরা বন্দি করেন। গত বুধবার সকাল থেকে এই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। ডিবি পুলিশের এসআই আরিফ নারায়ণগঞ্জের সদ্য বিদায়ী পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদের ঘনিষ্ঠ বলে নারায়ণগঞ্জ পুলিশের পরিচিত ছিল।
এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এসআই আরিফের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি টাকার উৎস সর্ম্পকে কিছু না জানিয়ে বলেছিলেন, এ ব্যাপারে ‘স্যার’ জানেন। কোন ‘স্যার’ জানতে চাইলে তিনি আবারও ‘স্যার’ জানেন বলে ফোন কেটে দেন। এদিকে ছবিটি প্রকাশ পাওয়ার পর তোলপাড় শুরু হয় জেলা পুলিশের ভেতর। আলোচিত পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদের বদলী অর্ডারের পর তার বিদায় বেলায় টাকা ওপর ঘুমিয়ে থাকা ডিবি কর্মকর্তার ছবি নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করে ডিবি পুলিশের ভুমিকা নিয়ে।
ওদিকে নারায়ণগঞ্জ ডিবি পুলিশের বিরুদ্ধে নিরপরাধ মানুষকে তুলে এনে মোটা অংকের টাকা উৎকোচ নেওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এতদিন কেউ সাহস করে না বললেও ডিবি পুলিশের এই কর্মকর্তার টাকার ওপর ঘুমিয়ে থাকার ছবি ভাইরাল হওয়ার পর অনেকেই গণমাধ্যমকর্মীদের ফোন করে তাদের সঙ্গে ডিবি পুলিশের আচরণ তুলে ধরেন। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে তারা নাম প্রকাশ থেকে বিরত থাকেন।
এদিকে এসআই আরিফের বিরুদ্ধে ছিলো নানা ধরণের বিতর্ক। মাদক ব্যবসায়ীদের আটক করে সময় মতো আদালতে প্রেরণ না করে ডিবি কার্যালয়ে রেখে দেনদরবার করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। পাশাপাশি চিহ্নিত শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও তার বেশ ঘনিষ্ঠতাও রয়েছে বলে অভিযোগ উঠছে।
এছাড়া এই আরিফের বিরুদ্ধে গত ৪ অক্টোবর ফতুল্লার পঞ্চবটির হরিহর পাড়ায় অবস্থিত ইউনাইটেড ক্লাবে হানা দিয়ে ক্লাবের সভাপতি শিল্পপতি তোফাজ্জল হোসেন তাপুসহ ৭ জনকে অহেতুক ধরে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। কোন অন্যায় না করলেও তাদের মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে ৩০ লাখ টাকা আদায় করে আরিফ। এরপর জুয়া আইনে মামলা দিয়ে তাদের আদালতে সোর্পদ করা হয়। আদালত থেকে তারা ২০০ টাকা জরিমানা দিয়ে জামিন পান।
তবে এসআই আরিফের দাবি, গাড়ির ভেতরে থাকা টাকাটা তার বৈধ উপায়ে নেওয়া এবং ঘটনাটি ৫ মাস পূর্বের। এবং সেসময় তার মা অসুস্থ ছিলেন। মূলত সেই জন্যই ১ লাখ ২০ হাজার টাকা তিনি একজনের কাছ থেকে ধার নিয়েছিলেন। তিনি নিজেও সেদিন অসুস্থ এবং চিন্তিত ছিলেন। ওই সময় গাড়িতে ঘুমিয়ে পড়লে কেউ ছবি তুলে ছড়িয়ে দেয়।
ওই বান্ডেলে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা ছিল বলে আরিফ দাবি করলেও জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, টাকাটা বৈধ নাকি অবৈধ তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি টাকার অংকটা আরো বেশি হতে পারে বলে ধারণা করছেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন