বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

মাছে পানি ঢুকিয়ে ওজন বৃদ্ধি

| প্রকাশের সময় : ১৭ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

খাদ্যপণ্যে ভেজালের বিষয়টি নতুন কিছু নয়। প্রায় সব ধরনের খাদ্য কোনো না কোনোভাবে ভেজালযুক্ত। এ থেকে পরিত্রাণের যেন কোনো উপায় নেই। পরিস্থিতি যখন অসহনীয় হয়ে উঠে তখন মাঝে মাঝে ভ্রম্যমাণ আদালত বিভিন্ন মার্কেটে গিয়ে ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে। কাউকে কাউকে জরিমানা করে। কিছুদিন না যেতেই পুনরায় ভেজাল ফিরে আসে। ভেজালকারীরাও নানা উপায়ে ভেজাল অব্যাহত রাখে। কোনোভাবেই তা প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। একটা সময় মাছে ফরমালিন মিশিয়ে তাজা রাখার বিষয়টি প্রকাশ্যে ছিল। ভেজালবিরোধী অভিযান ও জনসচেতনতায় তা কমে আসে। তবে যারা এসব অপকর্মের সাথে যুক্ত, তারাও বসে নেই। লাভ তাদের করতেই হবে-এমন বাসনা নিয়ে তারা ভেজালের নতুন প্রক্রিয়া অবলম্বন করে। মাছে ভেজাল দেয়ার ক্ষেত্রে এবার জানা গেল এক অভিনব পদ্ধতি। ওজন বৃদ্ধির জন্য বেছে নেয়া হচ্ছে, মাছের মধ্যে সিরিঞ্জ দিয়ে পানি পুশের প্রক্রিয়া। জানা যায়, মাছের জন্য বিখ্যাত অঞ্চল ভৈরব, কিশোরগঞ্জ এলাকায় একশ্রেণীর মাছ ব্যবসায়ী মাছে সিরিঞ্জের মাধ্যমে পানি পুশ করে ওজন বাড়িয়ে বিক্রি করছে। বিশেষ করে চিংড়ি এবং বোয়ালসহ বড় মাছে পানি ঢুকিয়ে বিক্রি করছে। এতে এক কেজির মাছ প্রায় দেড় কেজি হয়ে যাচ্ছে। ক্রেতারা পানি পুশ করা এসব মাছ কেজি হিসেবে কিনে প্রতারিত হচ্ছে। 

একটা সময় মাছসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্যে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ফরমালিন, কার্বাইড দেয়া অনেকটা সাধারণ বিষয় ছিল। অপরিপক্ক আম ও ফলফলাদি কার্বাইড দিয়ে পাকানোর বিষয়টিও ব্যাপক হারে ছিল। ভেজালবিরোধী অভিযান ও জনসচেতনতার কারণে তা ধীরে ধীরে কমে আসে। এখনও তা পুরোপুরি শেষ হয়নি। গোশতের ক্ষেত্রে বিক্রেতারা দীর্ঘ সময় পানিতে গোশত ভিজিয়ে ওজন বাড়িয়ে বিক্রি করে। মাছে কৃত্রিম রং দিয়ে তাজা দেখানোর প্রক্রিয়া অবলম্বন করে। এখন শুরু করেছে, সিরিঞ্জ দিয়ে মাছে পানি ঢুকিয়ে ওজন বৃদ্ধির পন্থা। অর্থাৎ ভেজালের এক পথ বন্ধ হলে ভেজালকারীরা নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করে চলেছে। সাধারণত হাওড় অঞ্চল ও ভৈরবের মাছের প্রতি মানুষের বিশেষ আকর্ষণ রয়েছে। এ অঞ্চলের মাছ অত্যন্ত সুস্বাদু হওয়ায় ভোক্তাদের আগ্রহ বেশি থাকে। অন্যান্য অঞ্চলের মাছের তুলনায় এখানের মাছের দাম বেশি। ভোক্তাদের আগ্রহ এবং দাম বেশি হওয়ায় কিছু অসাধু মাছ ব্যবসায়ী বেশি লাভের আশায় সিরিঞ্জের মাধ্যমে পানি পুশ করে ওজন বাড়াচ্ছে। এতে ভোক্তারা যেমন প্রতারিত হচ্ছে, তেমনি মাছে কী ধরনের পানি পুশ করছে, তা কতটা স্বাস্থ্যকর-এ বিষয়টি অজানা থেকে যাচ্ছে। এতে ক্রেতাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে, প্রতারিতও হচ্ছে। মাছের ওজন বৃদ্ধির বিষয়টি এর আগেও ঘটেছে। কয়েক বছর আগে ইউরোপে চিংড়ি রপ্তানির চালানে চিংড়ির ভেতর লোহার গজাল ঢুকিয়ে ওজন বৃদ্ধি করার বিষয়টি ধরা পড়ে। এ নিয়ে সে সময় বেশ তোলপাড় হয়। এবার মাছে পানি পুশ করে ওজন বৃদ্ধির বিষয়টি ধরা পড়েছে। এর ফলে অতি মুনাফালোভী কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে মৎস্য খাতটি বদনামের ভাগিদার হচ্ছে। অথচ মৎস্য উৎপাদনে দেশ এখন স্বাবলম্বি। বিশ্বে আট নম্বর দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে চিংড়ি, বোয়ালসহ অন্যান্য মাছে যদি পানি পুশ করে ওজন বৃদ্ধি করা হয়, তবে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। বলার অপেক্ষা রাখে না, শুধু মাছ, গোশত, শাক-সবজিতে নয়, অন্যান্য ভোগ্যপণ্যে ভেজাল দেয়া এখনও অব্যাহত রয়েছে। এই ভেজাল পণ্য গ্রহণ করে মানুষ নানা রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে।
সড়ক দুর্ঘটনার চেয়ে খাদ্যে ভেজালের বিষয়টি কোনো অংশে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। ভেজাল খাদ্য খেয়ে মানুষ তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়। দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ ব্যক্তি পরিবারের বোঝায় পরিণত হয়। অসুস্থ ব্যক্তির চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে গিয়ে অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়ে যায়। আমরা মনে করি, যে খাবার খেয়ে মানুষ জীবন ধারণ করে সে খাবার যারা বিষযুক্ত করছে, তাদের কঠোর শাস্তি দেয়া ছাড়া বিকল্প নেই। সড়ক দুর্ঘটনার জন্য যে কঠোর আইন করা হয়েছে, খাদ্য ভেজালকারীদের দমনে তার চেয়ে অধিক কঠোর আইন তৈরি করতে হবে। ভেজাল খাদ্য বিক্রিকারীদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে। ভ্রম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। বড় ধরনের শাস্তির ব্যবস্থা ছাড়া শুধুমাত্র জরিমানা করে খাদ্যে ভেজাল রোধ করা যাবে না। বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের বিবেচনায় নিয়ে প্রতিকারের স্থায়ী ব্যবস্থা করতে হবে। উন্নত বিশ্বে ভেজাল খাদ্য উৎপাদন এবং বিপণনের বিরুদ্ধে কঠোর আইন রয়েছে। আমাদের দেশেও এ ধরনের আইন প্রয়োজন। সুস্থ, সক্ষম ও কর্মপোযোগী জাতি গড়ে তুলতে ভেজালমুক্ত খাদ্য নিরাপত্তা গড়ে তুলতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন