শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহানগর

খোঁড়াখুঁড়ির কবলে পুরান ঢাকা : জনদুর্ভোগ চরমে

প্রকাশের সময় : ২২ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সায়ীদ আবদুল মালিক : ঢাকা দুই সিটি কর্পোরেশনের ছোট-বড় সাত শতাধিক সড়কে একযোগে চলছে খোঁড়াখুড়ি। সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে নেই কোন সঠিক তদারকি। ঠিকাদারেরা যে যেমন খেয়ালখুশি মত কাজ করছে। একটু বৃষ্টিতেই কাদা-পানিতে একাকার হয়ে রাস্তায় চলাচলের উপায় থাকে না। রাস্তার মাঝখানে যখন তখন বিকল হয়ে যাচ্ছে গাড়ি। প্রতিনিয়তই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। অফিস আদালত মুখি মানুষ ও স্কুল মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা সকাল বেলায় ঘর থেকে বের হয়েই পড়ছে ভোগান্তিতে। কোথায়ও অসহনিও যানজটে পড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে আবার কোথায় যানবাহনেরে সঙ্কটে পড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। অন্যদিকে রোদ উঠলে বাতাসে ধুলা-বালি উড়ে চোখ-মুখ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। নিঃশ্বাসের সাথে এ ধুলা-বালি নাক দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে শ্বাসকষ্ট ও এজমাসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে নগরবাসী।
বিশেষ করে রমজানে রাজধানীতে বেড়েছে যানজট। তার ওপর বিভিন্ন সড়কে চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। ঘনবসতিপূর্ণ পুরান ঢাকার বিভিন্ন রাস্তা ঘুরে দেখা গেছে অসহনীয় ভোগান্তির চিত্র। নবাবপুর, ইসলামপুর, বাদামতলী ও শ্যামবাজারের অনেক সড়ক বন্ধ হয়ে গেছে। কাদামাটি-পানিতে একাকার এসব সড়কে পায়ে হেঁটে পথচলাই কষ্টকর। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এসব এলাকার মানুষ। উন্নয়নপ্রত্যাশী হলেও রমজানে এ বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি চান রাজধানীবাসী। এ বিষয়টি নিয়ে যেন একেবারেই নির্বিকার ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের দয়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তারা।
সরেজমিন দেখা গেছে, সায়েদাবাদ থেকে দয়াগঞ্জ বাজার, নারিন্দা গৌড়ীয় মঠ থেকে শাহসাহেব লেন, নবাবপুর রোড থেকে বনগ্রাম, ভিক্টোরিয়া পার্ক থেকে লক্ষ্মীবাজারসহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন সড়কে চলছে স্যুয়ারেজ লাইন মেরামতের কাজ। এপ্রিলে শুরু হওয়া এসব কাজ জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু কাজের যে ধীরগতি তাতে আগস্টের আগে শেষ হওয়ার কোনো লক্ষণ নেই। খোঁড়াখুঁড়ির কারণে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হেঁটেই পথ চলতে হয় স্থানীয়দের। বিশেষ করে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী-অভিভাবক ও ব্যবসায়ীদের পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ। রমজানে এ ভোগান্তির মাত্রা আরও বেড়েছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ নুরুল আমিন বলেন, একসাথে অনেকগুলো সড়কে উন্নয় কাজ চলার কারণে এলাকাবাসী একটু বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে। তা আমরা দেখতেছি। কিন্তু আমাদেরকে তো উন্নয়ন কাজ করতেই হবে। তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কাজ সম্পন্ন করে এলাকাবাসীকে ভোগান্তি থেকে মুক্ত করা। এ বিষয়ে মেয়র ও প্রধান প্রকৌশলী রাত-দিন যোগাযোগ করে যাচ্ছেন যার এ কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট তাদেরকে তাড়া দিচ্ছেন ও সরজমিনে গিয়ে কাজ পরিদর্শন করছেন।  
পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারের বাসিন্দা তারকা নাথ বলেন, গত কয়েক দশকেও এসব স্যুয়ারেজ লাইনের কাজ হয়নি। এবার কাজ শুরু হয়েছে, এটা ভালো। কিন্তু উন্নয়ন কাজের জন্য দীর্ঘদিন রাস্তা বন্ধ থাকায় অনেক ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। ছেলে-মেয়েরা ঠিকমতো স্কুলে যেতে পারছে না।
ওসব এলাকার ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ঈদকে সামনে রেখে ব্যবসার মৌসুমে দোকানের মালামাল সরবরাহকারী ভ্যান আসতে পারে না, যেতেও পারে না। বেচা-বিক্রি কম। ভাড়াটিয়াদের বাসা পাল্টাতে গেলেও বিড়ম্বনা। অনেক দূরে পিকআপ রেখে মালামাল বয়ে নিয়ে যেতে হয়।’
নারিন্দা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আরাফাত রহমান জানায়, সড়ক বন্ধ থাকায় তাদের স্কুলভ্যান আসে না। পায়ে হেঁটে স্কুলে যেতে হয়। বৃষ্টি হলে কাদামাটি-পানিতে একাকায় হয়ে যায়। হেঁটে পথ চলাও কঠিন হয়ে পড়ে।
জনগণের এমন দুর্দশা হলেও সমস্যার সমাধানে কোনো উদ্যোগ নেই স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের। ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের সাথে কথা বলে যানা যায়, কাজ করেন ঠিকাদাররা, দেখভাল করেন সরাসরি মেয়র ও প্রকৌশলীরা। এখানে কাউন্সিলরদের কোনো কাজ নেই, ক্ষমতাও নেই।
৪০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মকবুল ইসলাম টিপু বলেন, মানুষের কষ্ট হচ্ছে জানি। কাজেও ধীরগতি আর ফাঁকিবাজি হচ্ছে। কিন্তু আমার কিছু করার নেই। কারণ আমি চাইলেও ঠিকাদারদের কিছু বলতে পারব না। কারণ এখানে আমার কোনো অফিসিয়াল ক্ষমতা নেই।
একই সুরে কথা বললেন ৩৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবু আহমেদ মন্নাফির। তিনি বলেন, কোনো ক্ষমতা নাই, তারপরও দায়িত্বের কারণে খোঁজ-খবর রাখি। মানুষের সমস্যা তো দেখতে হয়। কিন্তু প্রশাসনের কেউ কথা শুনে না। আর কাজ পাওয়ার পর ঠিকাদাদের পাওয়া যায় না। জটিল সমস্যা। দেশটা সবার, কেউ এটা ভাবে না।
তবে কাজে কোনো গাফিলতি হচ্ছে না বলে দাবি করে ঠিকাদার গোলাম সরওয়ার কবির বলেন, ভালো গতিতেই কাজ চলছে। এর চেয়ে বেশি চাপাচাপি করা যাবে না। এতে লাভও নেই। কারণ এসব রাস্তা এত সরু যে, রাস্তা খনন করে মাটি তুলে রাখার কোনো জায়গা নেই। এমনও সুযোগ নেই যে, মাটিগুলো গাড়ি দিয়ে বাইরে নিয়ে রাখব।
এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী বোরহান উদ্দিন বলেন, জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা কিন্তু ঠিকাদাররা তা করেনি; বরং প্রকল্প পরিচালক বরাবর সময় চেয়ে আবেদন করেছেন।
এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, আমাদের মনিটরিং আছে। আমরা উন্নয়ন বিড়ম্বনা কমাতে চাই। তবে কাজে ধীরগতি বা বিলম্বেরও অনেক সঙ্গত কারণ আছে। তিনি বলেন, ঈদে নতুন কাজ বন্ধ থাকবে। চলমান কাজ তো আর বন্ধ রাখা যাবে না। এগুলো বন্ধ থাকলে ভোগান্তি আরও বাড়বে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন