ট্রেনের টিকিট নিয়ে যাত্রীদের চরম ভোগান্তি
নেত্রকোনা থেকে এ কে এম আব্দুল্লাহ : নেত্রকোনায় আন্তঃনগর ‘হাওর এক্সপ্রেস’ ট্রেনের টিকিট বিক্রি নিয়ে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও অধিক মূল্যে কালোবাজারে টিকিট বিক্রির ফলে যাত্রীসাধারণকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার জানানোর পরও এর কোনো প্রতিকার না পাওয়ায় যাত্রীসাধারণের মধ্যে ক্রমশ ক্ষোভ দানা বেঁধে উঠছে। যে কোনো সময় এ ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।
ভুক্তভোগী যাত্রীদের অভিযোগ, ঢাকা-নেত্রকোনা-মোহনগঞ্জ রেলপথে চলাচলকারী আন্তঃনগর হাওর এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রীসাধারণ এখন রেল স্টাফ ও তাদের সহায়তায় গড়ে ওঠা সুবিধাবাদী সিন্ডিকেট চক্রের কবলে জিম্মি হয়ে পড়েছে। নেত্রকোনা জেলাবাসীর অনেক আন্দোলন, সংগ্রাম ও গণদাবির ফসল হচ্ছে আন্তঃনগর হাওর এক্সপ্রেস ট্রেন। অথচ এটি উদ্বোধনের সময় থেকেই রেল কর্তৃপক্ষের বৈষম্যমূলক সিট বণ্টনের কারণে অদ্যাবধি নেত্রকোনা জেলাবাসী হাওর এক্সপ্রেস ট্রেনের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। নেত্রকোনা থেকে ঢাকাগামী যাত্রীদের জন্য সকল শ্রেণী মিলিয়ে সিট বরাদ্দ রাখা হয়েছে মাত্র ৬০টি। অথচ মোহনগঞ্জ যাত্রীদের জন্য দ্বিগুণ ও ময়মনসিংহ যাত্রীদের জন্য ২০০ সিট বরাদ্দ রাখা হয়। নেত্রকোনার বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এই বৈষম্যমূলক সিট বরাদ্দের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় প্রতিবাদ জানালেও সংশ্লিষ্ট রেল কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি। টিকিট কাউন্টার থেকে লোক দেখানো কিছুসংখ্যক টিকিট দিয়ে টিকিট নেই বলে কাউন্টার বন্ধ করে দেয়া হয়। এছাড়াও স্টেশন মাস্টার শাহাবুদ্দিন ও ক্লার্ক নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে একাধিক আসনে ডাবল টিকিট বিক্রি করায় নির্ধারিত সিটে বসা নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে বাদানুবাদ ও হাতাহাতির ঘটনাও ঘটছে। স্টেশন মাস্টারের সহযোগিতায় সরকারদলীয় হোমড়া-চোমড়ারা এই সিন্ডিকেট চক্রের সাথে জড়িত থাকায় স্থানীয় প্রশাসনও এই সিন্ডিকেট চক্রের বিরুদ্ধে কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে সাহস পাচ্ছে না বলে স্থানীয় ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।
নেত্রকোনা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার হায়দার জাহান চৌধুরী বলেন, হাওর এক্সপ্রেস ট্রেনকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে যে অনিয়ম, দুর্নীতি চলে আসছে তা প্রতিকার হওয়া একান্ত বাঞ্ছনীয়। দফায় দফায় টিকিটের দাম বাড়ানো হবে অথচ যাত্রীদের সেবা না বাড়িয়ে ভোগান্তির কবলে পড়তে হবে তা কিছুতেই হতে পারে না। নেত্রকোনার উন্নয়নে নাগরিক আন্দোলনের আহ্বায়ক খানে আলম খান বলেন, নেত্রকোনাবাসীর দীর্ঘদিনের আকাক্সিক্ষত হাওর এক্সপ্রেস ট্রেন নিয়ে দুর্নীতি, নৈরাজ্য ও যাত্রীদের হয়রানি বন্ধ করা না হলে প্রয়োজনে আমরা আবারো আন্দোলনে নামব।
নেত্রকোনা স্টেশন মাস্টার শাহাবুদ্দিন বলেন, এ বিষয়ে আমাকে বলে কোনো লাভ নেই, আপনারা ওপরে যোগাযোগ করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, হাওর এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট নিয়ে দুর্নীতির বিষয়টি সম্পর্কে আমরা অবহিত আছি কিন্তু নানা জটিলতার কারণে এর বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন