খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস আজ। মহানগরী খুলনা থেকে ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক সংলগ্ন ময়ূর নদীর পাশে এক মনোরম পরিবেশে গল্লামারীতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও সংলগ্ন এলাকাটি ছিলো ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়কার এক বধ্যভূমি। প্রতিষ্ঠাকালের দিক থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান নবম। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় একটি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়।
এদিকে, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমের ২৯ বছর পূর্তিতে বর্ণাঢ্য আয়োজন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আজ রোববার খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে শোভাযাত্রাসহ বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, বাদ যোহর বিশ্ববিদ্যালয় জামে মসজিদে দোয়া মাহফিল, বিকেল ৩ টা থেকে রাত সাড়ে ৭ টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তমঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সন্ধ্যা সাড়ে ৫ টায় শহীদ মিনার চত্ত্বর, অদম্য বাংলা ও কটকা স্মৃতিসৌধে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন। এছাড়া ক্যাম্পাসে আলোকসজ্জার আয়োজন করা হয়েছে।
খুবি’র জনসংযোগ ও প্রকাশনা বিভাগের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) এস এম আতিয়ার রহমান জানান, ২৫ নভেম্বর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে আছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জনগণের নিরলস প্রচেষ্টা ও দীর্ঘদিনের আন্দোলন। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পর ১৯৮৭ সালের ৪ জানুয়ারি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত সরকারি সিদ্ধান্ত গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। ১৯৮৯ সালের ৯ মার্চ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তি প্রস্তুর স্থাপন করা হয়। ১৯৯০ সালের জুন মাসে জাতীয় সংসদে ‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় আইন-১৯৯০’ পাশ হয়, যা গেজেট আকারে প্রকাশ হয় ওই বছর ৩১ জুলাই। ১৯৯১ সালের ৩০ আগস্ট প্রথম ওরিয়েন্টেশন এবং ৩১ আগস্ট ক্লাশ শুরুর মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রমের শুভ সূচনা হয়।
তবে সময়ের চাহিদা অনুযায়ী এখানে বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তিবিদ্যা, চারুকলাসহ অন্যান্য বিষয়ের প্রতিও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বুয়েটের পরই ১৯৯৭-৯৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোর্স ক্রেডিট পদ্ধতি চালু হয়।
বর্তমানে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬টি স্কুল (অনুষদ) ও ২টি ইনস্টিটিউট রয়েছে। এখানে মোট ২৯টি ডিসিপ্লিনে (বিভাগ) শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়মিত ব্যাচেলর ডিগ্রি, ব্যাচেলর অব অনার্স ডিগ্রি, মাস্টার্স ডিগ্রি, এম ফিল এবং পিএইচডি প্রদান করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষক সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪শত। ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে প্রায় সাত হাজার। এছাড়া কর্মকর্তা রয়েছেন আড়াই শতাধিক এবং কর্মচারি রয়েছে দুই শতাধিক।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রয়েছে ৩টি একাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন, ভাইস-চ্যান্সেলরের বাসভবন, পাঁচটি আবাসিক হল, মেডিকেল সেন্টার, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের জন্য ৫টি বাসভবন, অগ্রণী ব্যাংক ভবন, ডাকঘর ও মসজিদ। ছাত্র-ছাত্রী এবং শিক্ষকদের জ্ঞান সহায়তায় রয়েছে সমৃদ্ধ কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ভবন ও শার্লী ইসলাম গ্রন্থাগার ভবন।
বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান শুভেচ্ছা বার্তায় বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অমিত সম্ভাবনা রয়েছে। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ বিশ্ববিদ্যালয়কে সামনে এগিয়ে নিতে আমরা সর্বাতœক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় দিবস প্রকৃতঅর্থে বিগত সময়ের কার্যক্রম মূল্যায়নের দিন। আমাদেরকে অতীতের অভিজ্ঞতায় বর্তমানের প্রচেষ্টায় আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নতুন উদ্যমে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন এবং অবকাঠামোগত সুবিধা বৃদ্ধির দিকে জোর দেওয়া হয়েছে। চলতি প্রায় দুইশত কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ২০২১ সালের মধ্যে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দেশের অন্যমত শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পূর্ণাঙ্গরূপ পরিগ্রহ করবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন