আইয়ুব আলী : ঈদকে সামনে রেখে চট্টগ্রামে ভেজাল পণ্যের রমরমা ব্যবসা শুরু করেছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। ফলে প্রতারিত হচ্ছে রোজাদার সাধারণ ক্রেতারা। হরেকরকমের সেমাই, নুডলসসহ ঈদে অতি প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের বাজার দখল করে চলেছে নকল ও ভেজালকারীরা। চট্টগ্রাম মহানগরীর কিছু কিছু এলাকা এবং উপজেলা পর্যায়ের হাটবাজারগুলোকে টার্গেট করে এরা চটকদার মোড়কে সেমাই, নুডলসের চালান প্রস্তুত করছে। গ্রামাঞ্চলে চলে যাচ্ছে এসব চালান।
দেশের বৃহত্তম ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের আশপাশের কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে বেশ কিছু নকল ও নিম্নমানের বাংলা ও লাচ্ছা সেমাই, নুডলস, মসলার গুঁড়া, লবণ ও ঘি উৎপাদনের কারখানা গড়ে উঠেছে। রাজাখালী, বাকলিয়া, চরচাক্তাই, ডিসি রোড, খাতুনগঞ্জ, আসাদগঞ্জ, কোরবানিগঞ্জ, খলিফাপট্টি, বউবাজার এলাকায় রয়েছে কিছু সেমাই-মসলা ও ঘি তৈরির ভ্রাম্যমাণ কারখানা। পশ্চিমমাদারবাড়ি ও বহদ্দারহাট এলাকায় কিছু লাচ্ছা সেমাই কারখানা গড়ে উঠেছে। ভেজাল কেক ও পাউরুটি কারখানা ছড়িয়ে আছে নগরজুড়ে।
এ সব ভেজাল ও মানহীন ভোগ্যপণ্য উৎপাদনে এখন ব্যস্ত হয়ে পড়েছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। ভেজাল, নকল, মানহীন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রকমারি সেমাই উৎপাদনের পাশাপাশি পাকা কলা, ফলমূল, মাছ, শুঁটকিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক পণ্যে জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর নানা উপকরণ ও রাসায়নিক মেশানো হচ্ছে। বেশ কিছু কারখানা ও বিক্রয়কেন্দ্রে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালিত হলেও এর বাইরে বহু কারখানা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। খাদ্যপণ্যে সূতা রাঙানোর বিষাক্ত রং, ভেজাল পাম তেল, সেন্ট, পচা ডিম মিশিয়ে বাজারজাত করা হচ্ছে।
রমজান ও ঈদে সেমাইর পাশাপাশি হরেকরকম ইফতার ও নাশতা তৈরির জন্য ঘিয়ের চাহিদা বেড়ে যায়। এ ছাড়া বছরব্যাপী বিয়ে, মেজবানসহ নানা আয়োজনেও পণ্যটির চাহিদা থাকে। এ চাহিদাকে পুঁজি করে নগরীর বায়োজিদের বিসিক, রাজাখালী, হামজারবাগ, মাদারবাড়ি, চকবাজারসহ জেলার বাড়বকু-, দোহাজারী, পটিয়া, আনোয়ারা, ফটিকছড়ি, রাউজান গড়ে উঠেছে অর্ধ শতাধিক ঘি কারখানা। এ ছাড়া অলিগলিতে ছড়িয়ে আছে বেশকিছু ‘ভ্রাম্যমাণ’ ঘি কারখানা।
ঘি উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত এক ব্যক্তি জানান, বাঘাবাড়ি ঘিয়ের সুনামকে পুঁজি করে ২ ডজনেরও বেশি নকল ঘি বাজারে রয়েছে। এ ছাড়া আসল ব্রান্ডগুলোর কাছাকাছি নামে শতাধিক ঘি এখন বাজারে পাওয়া যাবে। লেবেল, কৌটা, সুগন্ধ দেখে সাধারণ মানুষের আসল-নকল পার্থক্য বোঝা কঠিন। অন্যদিকে খোলা ঘিয়ের বাজারে একচ্ছত্র আধিপত্য নকল ঘি উৎপাদকদের।
প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে কিছু কিছু মৌসুমী কারখানা কয়েকমাস পরপরই স্থান পরিবর্তন করে। অনেক কারখানায় দিনের বেলা বাইর থেকে তালা ঝুলিয়ে ভেতরে শ্রমিকেরা পণ্য উৎপাদন করে। কোনো কোনো কারখানা দিনের বেলা বন্ধ থাকে, শুধু রাতের বেলা বেশি শ্রমিক লাগিয়ে কাজ চালানো হয়। এসব কারখানার চকচকে মোড়কজাত পণ্য দেখে সাধারণ মানুষের বোঝার উপায় থাকে না আসল না নকল। বেশিরভাগ মোড়কে বিএসটিআইর লোগো (মনোগ্রাম) ও পণ্যের গুণগানসমৃদ্ধ সেøাগান ছাপিয়ে ক্রেতাদের সাথে প্রতারণা করা হচ্ছে।
নগরীর রাজাখালী এলাকায় বাংলা সেমাই উৎপাদনের ধুম পড়েছে। বাইরে তালা ঝুলিয়ে নোংরা পরিবেশে উৎপাদিত হচ্ছে সেমাই। শ্রমিকদের ঘাম অবাধে মিশে যাচ্ছে সেমাইর খামিতে (কাঁচামাল)। ডায়াসের (যন্ত্র) ঢালার সময় যেসব খামি মেঝেতে পড়ে যাচ্ছে সেসব পুনরায় ডায়াসে দেয়া হচ্ছে। ছোট ছোট বাঁশের কঞ্চিতে কাঁচা সেমাই সাজিয়ে শুকানো হচ্ছে বদ্ধ ঘরে মাচা বানিয়ে। কিছু কারখানায় সেমাই লাল করা হচ্ছে বিস্কুট তৈরির চুল্লিতে। পরে বিভিন্ন ব্রান্ডের লেবেল সেঁটে টুকরি ভরে নগরী ও জেলায় বাজারজাত করা হচ্ছে। এদিকে নগরীতে রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা মাঠে নেমেছে। প্রতিবছর রমজান এলেই কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দ্রব্যমূল্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে ভোগপণ্যের বাজারকে অস্থিতিশীল করে তোলে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন