শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

যশোরের ভবদহে ফের পানিবদ্ধতার আশঙ্কা দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে পানিবন্দি হবে ১৮৪ গ্রাম

প্রকাশের সময় : ২৩ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা, যশোর : আবারো পানিবদ্ধতার পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছে যশোরের ভবদহ অঞ্চলের বাসিন্দারা। চার বছর ধরে টিআরএম প্রকল্প না থাকায় এই অঞ্চলের মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদী পলি পড়ে ভরাট হয়ে গেছে। ভবদহ স্লুইসগেটও পলি পড়ে ভরাট হয়ে গেছে। এ অবস্থায় চলতি বর্ষা মৌসুমে এ অঞ্চলে পানিবদ্ধতার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ভবদহ অঞ্চলে পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হলে যশোরের অভয়নগর, মণিরামপুর, কেশবপুর ও সদর উপজেলার ১৮৪টি গ্রাম এই দুর্যোগের কবলে পড়বে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে অন্তত ৪ লাখ মানুষ। এ অবস্থায় দ্রুত এ অঞ্চলে টিআরএম (টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট বা জোয়ারাধার) প্রকল্প চালুর দাবি স্থানীয়দের। ভবদহ সমস্যার স্থায়ী সমাধান ও অবিলম্বে বিল কপালিয়ায় টিআরএম চালুর দাবিতে ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটি বুধবার দুপুরে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেছে।
যশোর ওয়ার্কার্স পাটি কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় পলিট ব্যুরো সদস্য ইকবাল কবির জাহিদ, সমিতির মণিরামপুর উপজেলা শাখার সভাপতি গাজী আব্দুল হামিদ, কেশবপুরের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট আবু বকর সিদ্দিকী প্রমুখ। মতবিনিময়কালে নেতৃবৃন্দ ভবদহ সমস্যার স্থায়ী সমাধানে ১৩ দফা দাবি তুলে ধরেন। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, অবিলম্বে গোটা বিল কপালিয়ায় টিআরএম চালু করতে হবে; গ্রামরক্ষা বাঁধ দিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রেখে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে; দ্রুত ও সহজ পদ্ধতিতে ক্ষতিপূরণের টাকা দিতে হবে; বিল এলাকার ভাগচাষী ও দিনমজুরদের ভিজিএফ ভিজিডি কার্ড প্রদান করতে হবে; প্রকল্প কাজের সকল দুর্নীতি অনিয়ম বন্ধ করতে হবে। নেতৃবৃন্দ দাবি আদায়ের লক্ষ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে এলাকায় জনমত তৈরি করছেন, এর পরপরই আন্দোলন কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে বলে তারা জানান।
 ভবদহ অঞ্চল ঘুরে ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, যশোর-খুলনার ২৭ বিলের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র প্রবাহ পথ ভবদহ স্লুইসগেটের মুখে পলি জমায় আসন্ন বর্ষা মৌসুমে বিলপাড়ের ১৮৪ গ্রামে স্থায়ী পানিবদ্ধতার আশংকা সৃষ্টি হয়েছে। টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট (টিআরএম) বাস্তবায়ন না হওয়ায় এমন আশংকা করছেন বিলপালের এলাকাবাসী। এর ফলে একদিকে হাজার হাজার হেক্টর মাছের ঘের পানিতে তলিয়ে যাবে, ক্ষতিগ্রস্ত হবে ৪ লক্ষাধিক মানুষ।
কালিশাহকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুকুমার মন্ডল জানালেন, টিআরএম না হওয়ায় পলি জমে যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে তাতে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে বাড়ি-ঘরে থাকা যাবে না। বৃদ্ধ ভুবন মল্লীক বলেন, কুচক্রী মহলের কারণে টিআরএস বাস্তবায়িত হলো না। সরকার আর্মি দিয়ে হলেও টিআরএম করানো দরকার ছিলো।
সূত্র মতে, ১৯৬১ সালে ভবদহ অঞ্চলে যশোরের মণিরামপুরের আড়পাতা, বিল কপালিয়া, অভয়নগর উপজেলার দামুখালি, ভবানিপুর, দত্তগাতি, বারান্দি, চুমড়ডাঙ্গা ও খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার কাটেঙ্গা, চেঁচোড়ি, বরুণাসহ ২৭ বিলের পানি নিস্কাশনে স্লুইচ গেট নির্মাণ করা হয়।
বর্ষা মৌসুমে ২৭ বিলের আকাশ বৃষ্টির পানি ভবদহের এই স্লুইচ গেট দিয়ে নিষ্কাশিত হয়। ১৯৮৬ সালে স্লুইচ গেটে পলি জমায় পানি নিস্কাশিত না হওয়ায় এ অঞ্চলে স্থায়ী পানিবদ্ধতা দেখা দেয়। ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যায় ভবদহ অঞ্চলের বিলপাড়ের কুলটিয়া, মশিয়াহাটি, মহিষদিয়া, পোড়াডাঙ্গা, সুজাতপুর, ডুমুরতলা, হাটগাছা, সুন্দলীসহ কয়েক’শ গ্রামের মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়ে। স্থায়ী পানিবদ্ধতার শিকার হয়ে বিলে ফসল না হওয়ায় দেখা দেয় চরম খাদ্য সংকট। তখন পানি নিষ্কাশনে এলাকার ভুক্তভোগীরা আন্দোলন-সংগ্রাম করেন।
মণিরামপুর উপজেলার পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির সভাপতি গাজী আব্দুল হামিদ বলেন, আন্দোলনের এক পর্যায়ে তৎকালীন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সরকারের আমলে পলি সরাতে ড্রেজার ও স্কেভেটর মেশিন ব্যবহার করা হয়। কিন্তু পানি নিষ্কাশনের নামে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করে সংশ্লিষ্টরা। ফলে মানুষ সুফল পাননি।
এ প্রসঙ্গে পাউবো’র যশোর জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্মামী বলেন, বর্তমানে জোয়ার-ভাটা সৃষ্টি না হওয়ায় ভবদহ স্লুইস গেট সংলগ্ন হরিনদী, শ্রীনদী ভদ্রাসহ অসংখ্য খাল পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে। এর ফলে পানিবদ্ধতা আশংকা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, মণিরামপুর উপজেলার বিলকপালিয়ায় একই সমস্যা দেখা দিলে প্রাথমিক পর্যায় প্রায় সাড়ে ৭ কোটি ব্যয় নির্ধারণ করে টিআরএম বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়।
পরবর্তীতে প্রকল্প ব্যয় বাড়িয়ে প্রায় ৪৪ কোটি টাকা নির্ধারণ করে ওই বিলে টিআরএম চালু করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়। কিন্তু এলাকার কিছু স্বার্থান্বেষী মহলের কারণে টিআরএম বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। ২০১৪ অর্থ বছরের বরাদ্দের টাকাটাও ফেরত যায়। ওই সময় ১৪৯ জন কৃষকের মাঝে ক্ষতিপূরণের টাকা বিতরণ করা হয়। এখন পর্যন্ত প্রায় ৮ কোটি টাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পড়ে আছেও বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এ ব্যাপারে যশোর-৫, মণিরামপুরের সংসদ সদস্য স্বপন ভট্টাচার্য্য বলেন, ইতোমধ্যে এ বিষয়ে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে তিনি নিজে উপস্থিত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, একটি বিশেষজ্ঞ টিম শীঘ্রই ভবদহ এলাকায় সমীক্ষা চালাবে। তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী বরাদ্দের পর পুনরায় টিআরএম চালু হবে বলে তিনি জানান।
























































 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন