বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ২০২৪, ০৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৪ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

লন্ডন ব্রিজে সন্ত্রাসী হামলকারী মানবতার দুশমন

| প্রকাশের সময় : ২ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

লন্ডন ব্রিজে সন্ত্রাসী হামলায় একজন পুরুষ ও একজন নারী নিহত ও তিনজন আহত হয়েছে। ছুরিকাঘাতে এই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। বিবিসি জানিয়েছে, হামলাকারী শুক্রবার বেলা দুইটার দিকে এ হামলা চালায়। খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে ব্রিজে সব ধরনের চলাচল বন্ধ করে দেয় এবং এক পর্যায়ে হামলাকারীর ওপর গুলি চালায়, যাতে সে নিহত হয়। হামলাকারী পাকিস্তানী বংশোদ্ভূত উসমান খান। হামলার সময় সে ভূয়া সুইসাইড ভেস্ট পরিহিত ছিল। নির্দোষ পথচারীদের ওপর এরূপ হামলা চালিয়ে হতাহত করার ঘটনা অত্যন্ত মর্মান্তিক ও বেদনাদায়ক। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। হামলাকারী উসমান খান সম্পর্কে ব্রিটিশ পত্রিকা টেলিগ্রাফ বলেছে, সন্ত্রাসী কাজের সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে সাত বছর আগে তার জেল হয়। লন্ডন স্টক একচেঞ্জে বোমা হামলার ষড়যন্ত্রে সংশ্লিষ্ট থাকার দায়ে সে একটি আদালতে অভিযুক্ত হয় এবং ১৬ বছরের জেলদন্ডে দন্ডিত হয়। আল কায়েদার সঙ্গে যুক্ত একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সদস্য হিসাবে সে ওই হামলার প্রস্তুতি নেয়। রায় ঘোষণার সময় বিচারক উসমান খানকে ‘ভয়ংকর জিহাদী’ বলে অভিহিত করেন এবং তাকে মুক্তি দেয়া ঠিক হবে না বলে অভিমত প্রকাশ করেন। বিচারককথিত এই ভয়ংকর জেহাদীকে বছর খানেক আগে বিশেষ শর্তে মুক্তি দেয়া হয়। শর্তমতে, তাকে সর্বক্ষণ অবস্থান শনাক্তকারী ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস পরে থাকতে হবে এবং সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদে জড়িতদের পুনর্বাসন সংক্রান্ত সরকারি কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে হবে। ওইদিন এরকমই একটি কর্মসূচীতে অংশ নেয়ার পর হঠাৎই উসমান খান পথচারীদের ওপর চড়াও হয়। বুঝতে অসুবিধা হয় না, অতীতের অপরাধমূলক কাজকর্ম বা তৎপরতার সঙ্গে যুক্ত থাকার ব্যাপারে তার মধ্যে কোনোরূপ অপরাধবোধ বা অনুশোচনা ছিল না। সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদে জড়িতদের পুনর্বাসন কর্মসূচীও তার মধ্যে কোনো শুভ পরিবর্তন আনতে পারেনি। সন্ত্রাসী-জঙ্গীরা কার্যত ‘অবিবেচক এবং অন্ধ’, এ ঘটনায় সেটা, আরো একবার প্রমাণিত হলো। ঘোষিত দন্ডভোগের আগে তার শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেয়া উচিৎ হয়েছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন স্বয়ং এ বিষয়ক আইন-পদ্ধতি রিভিউ করার ওপর গুরুত্ব প্রদান করেছেন।

উসমান খান যা করেছে, তা মানবতার বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধ হিসাবে গণ্য। তার নাম মুসলমান হওয়ায় এই হামলার জন্য মুসলমানরা একইসঙ্গে দু:খিত ও বিব্রত। এর জন্য অনেকেই দুর্নাম ও দোষ তাদের ওপর চাপিয়ে দিতে পারে। ইসলাম ও মুসলিমবিদ্বেষীরা সুযোগ নিতে পারে। এতে ইসলাম বা মুসলমানদের কোনো লাভ হয়নি। বরং অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। ব্রিটেনে ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষ ক্রমাগত বাড়ার প্রেক্ষাপটে এ হামলা তাকে আরো গভীর ও বিস্তৃত করে দিতে পারে। ব্রিটেনে নির্বাচন আসন্ন। নির্বাচনে সেখানকার সংখ্যালঘু বিশেষ করে ইহুদী, হিন্দু, শিখ ও মুসলমানরা সক্রিয় ও তৎপর। সংখ্যালঘু ভোটারদের মধ্যে নানা হিসাব-নিকাশ ও মেরুকরণ হচ্ছে। এর আগের নির্বাচনগুলোতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলোকে এতটা সংশ্লিষ্ট হতে দেখা যায়নি। এ মুহূর্তে এই সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা নির্বাচনের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে অনেকের ধারণা। নির্বাচনের সঙ্গে এর সম্পর্ক আছে কিনা বা থাকতে পারে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এ হামলার প্রতিক্রিয়া হিসাবে ইসলাম ও মুসলিমবিদ্বেষ চাঙ্গা হতে পারে, মুসলমানদের মধ্যে ভীতি-শংকা বাড়তে পারে। সে অবস্থায় তাদের চলাচল ও নির্বাচনী তৎপরতার অংশগ্রহণ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

উসমান খান ইসলাম ও মুসলমানদের মিত্র নয়। সে মানবতা ও মানুষের দুশমন। কোনো অবস্থাতেই তার কিংবা তার মতো সন্ত্রাসে জড়িতরা রেহাই বা অনুকম্পা পেতে পারে না। আসলে এই ধরনের সন্ত্রাসীরা বিপথগামী ও বিভ্রান্ত। ইসলামের নামে, ইসলামী খেলাফতের নামে, ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার নামে তারা সন্ত্রাস ও মানুষ হত্যার পথ বেছে নিয়েছে। পর্যবেক্ষকদের ধারণা, ইসলাম ও মুসলমানদের চিরাচরিত শত্রুদের প্ররোচনা, পৃষ্ঠপোষকতা ও অর্থায়নে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গঠন গড়ে উঠেছে। অনেকেই বুঝে না বুঝে এসব সংগঠনের সদস্য হয়ে সন্ত্রাস করছে, মানুষ হত্যা করছে। এতে তারা নিজেরা যেমন ধ্বংস হচ্ছে, তেমনি ইসলাম ও মুসলমানদের ক্ষতি সাধন করছে। ইসলাম যে কোনো ধরনের সন্ত্রাস, বিশৃংখলা ও অশান্তি সৃষ্টির বিরুদ্ধে, নির্দোষ নিরীহ মানুষ হত্যার বিরুদ্ধে। আল্লাহপাক নির্দিষ্ট কয়েকটি ক্ষেত্র ছাড়া হত্যকান্ড নিষিদ্ধ করেছেন। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে: ‘নরহত্যা বা দুনিয়াতে ধ্বংসাত্মক কাজ করার জন্য কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেন পৃথিবীর সকল মানুষকে হত্যা করলো। আর কেউ কারো প্রাণ রক্ষা করলো সে যেন সকল মানুষের প্রাণ রক্ষা করলো।’ (সূরা মায়িদা)। আল্লাহপাকের একথা অত্যন্ত স্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন। এই হলো তার বিধান। কিন্তু উসমান খান বা তার মতো সন্ত্রাসীরা এই বিধানের তোয়াক্কা করছে না। অতএব, তাদের কঠোর সাজা হতে হবে। আলেম-ওলামা ও মুসলিম উম্মাহকে একযোগে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। পাশাপাশি ইসলামের বিধান ও নির্দেশনা প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় তৎপর হতে হবে, যাতে কেও সন্ত্রাস বা জঙ্গীবাদে আকর্ষিত ও দিক্ষিত হতে না পারে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন