অর্থনৈতিক রিপোর্টার : সব আর্থিক সূচকেই উন্নতিতে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংক। এ কারণে শ্রেণীকৃত ঋণ, মন্দ ঋণ, সন্দেহজনক ঋণ ও নি¤œমানের ঋণের পরিমাণ অনেকটাই কমেছে। এছাড়া ব্যবসা বৃদ্ধি, লোকসানি শাখা হ্রাস, ঋণ বিতরণ করা, নতুন শাখা খোলা, রেমিট্যান্স বৃদ্ধি, অনলাইন ব্যাংকিং, এটিএম সার্ভিস চালু, লোকবল নিয়োগসহ প্রায় সব বিষয়ের অগ্রগতি হয়েছে। কমে এসেছে লোকসানি শাখার পরিমাণ। একই সঙ্গে রূপালী ব্যাংকের ২৭৭টি অডিট আপত্তিতে জড়িত ২৬০ কোটি টাকা আদায় করেছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ চলতি মাসে ৭৬টি অডিট আপত্তিতে ১১৬ কোটি আদায় করেছে রূপালী ব্যাংক। অন্য সব রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের তুলনায় অডিট আপত্তিতে রূপালী ব্যাংকে জড়িত টাকার পরিমাণ সবচেয়ে কম। এদিকে গত মে মাস পর্যন্ত প্রায় ১৫০ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ নগদে আদায় করতে সক্ষম হয়েছে রূপালী ব্যাংক। যা কেপিআই লক্ষ্যমাত্রা (অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা) শতভাগ অর্জন। এ ধারা অব্যাহত থাকলে এ অর্জন আরো বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, রূপালী ব্যাংকের ২০১৩ সালে ঋণ ও অগ্রিমের স্থিতি ছিল ১০ হাজার ৭৪২ কোটি টাকা। ২০১৪ সালে উন্নীত হয় ১২ হাজার ৫০১ কোটি টাকা। এই স্থিতি বাংলাদেশ ব্যাংকের এমওইউ চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত সীমার মধ্যে বিদ্যমান। ২০১৩ সালে শ্রেণীকৃত ঋণের স্থিতি ছিল ১ হাজার ৭৯৯ কোটি টাকা এবং ২০১৪ সালে এই স্থিতি কমে আসে ১ হাজার ৫১৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ ব্যাংকের শ্রেণীকৃত ঋণের পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে, যা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের দূরদর্শিতা এবং ব্যাংকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সমন্বিত প্রচেষ্টার ফসল বলে মনে করছে রূপালী ব্যাংক। ব্যাংকের মন্দ বা কুঋণের পরিমাণ ২০১৩ সালে ছিল ১ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা। ২০১৪ সালে আরো কমে দাঁড়ায় ১ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা। এ বিষয়ে রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম ফরিদ উদ্দিন বলেন, খেলাপি ঋণের বিষয়ে শাখা ও জোনভিত্তিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে তা মনিটরিং করা হচ্ছে। এছাড়া বড় ঋণ গ্রহীতাদের সঙ্গে আমি নিজেই আলোচনা করছি। এভাবে চলতে থাকলে চলতি বছরই খেলাপি ঋণ কমিয়ে অন্যান্য ব্যাংকের চেয়ে ভালো অবস্থানে যাবে রূপালী ব্যাংক।
রূপালী ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালে রূপালী ব্যাংক শ্রেণীকৃত ঋণ থেকে ১০৩ কোটি টাকা আদায় করেছে। ২০১৫ সালে আদায় হয়েছিল ১১২ কোটি টাকা। তবে ২০১৬ সালে শ্রেণীকৃত ঋণ আদায়ে অর্থ মন্ত্রণালয় ১৫০ কোটি টাকা টার্গেট বেঁধে দেয়। ওই টার্গেটের মধ্যে পাঁচ মাসে (জানুয়ারি-মে পর্যন্ত) আদায় হয়েছে ১৪৫ কোটি টাকা। শতকরা হিসাবে শ্রেণীকৃত ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার ৯৬ শতাংশ অর্জিত হয়। ব্যাংকের রিকভারি বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, শ্রেণীকৃত ঋণ আদায়ের লক্ষ্যে রূপালী ব্যাংক ৫০ দিনের মধ্যে ৪শ’ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছে। এর মধ্যে ব্যাংকের শ্রেণীকৃত ঋণ থেকে নগদ আদায় হবে ১৭০ কোটি টাকা। অবলোপনকৃত ঋণ থেকে নগদ ৩০ কোটি টাকা এবং অশ্রেণীকৃত ঋণ থেকে নগদ ২০০ কোটি টাকা আদায় করা হবে।
সূত্র মতে, ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণ স্থিতি ছিল সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংক বিক্রির পাঁয়তারার কারণে দীর্ঘদিন ঋণপ্রবাহ স্থবির ছিল। তবে ধীরে ধীরে ঋণপ্রবাহে গতি সঞ্চার হয়। যার ফলে ব্যাংকে ধারাবাহিকভাবে মুনাফা বৃদ্ধি হয়েছে। ২০১৩ সালে ব্যাংকটির মুনাফা ছিল ২০৫ কোটি। ২০১৪ সালে ২৫৩ থেকে ২০১৫ সালে হয়েছে ২৭০ কোটি টাকা। তবে ২০১৪ সালে দেশের বিরাজমান সঙ্কট ও আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যমান অস্থিতিশীল থাকায় শিল্প মালিকগণ আশানুরূপ মুনাফা অর্জন করতে পারেননি। ফলে ওই সময়ে ঋণের কিস্তি যথাসময়ে পরিশোধ করতে পারেননি ব্যবসায়ীরা। জানতে চাইলে ব্যাংকের ব্যবস্থপনা পরিচালক বলেন, খেলাপি ঋণ আদায়ে রূপালী ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বিনিয়োগও করা হচ্ছে গ্রাহক যাচাই করে। এ কারণে ব্যাংকের মুনাফাও ধারাবাহিকভাবে বেড়ে চলেছে।
জানা গেছে, বর্তমানে রূপালী ব্যাংকের লোকসানি শাখার সংখ্যা ৮টি, যা অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় সবচেয়ে কম। তাছাড়া শাখাগুলো নতুন খোলা হওয়ায় তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণে কিছুটা সময়ের প্রয়োজন ছিল। সাধারণত নতুন খোলা শাখাগুলো ব্যবসা সম্প্রসারণের অভাবে প্রথম বছরে ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এদিকে ১৯৭২ সাল হতে পুঞ্জীভূত মোট ৬৩২টি উত্থাপিত আপত্তির মধ্যে ২৭৭টি অডিট আপত্তিতে জড়িত ২৬০ কোটি টাকা আদায় করেছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। অবশিষ্ট অমীমাংসিত ৩৫৫টি আপত্তির ক্ষেত্রে দেখা যায়, একই বিষয়ে শাখা পর্যায়ে এবং প্রধান কার্যালয় নিরীক্ষায় আপত্তি দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ চলতি মাসে ৭৬টি অডিট আপত্তিতে ১১৬ কোটি আদায় করেছে রূপালী ব্যাংক। সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের জুনভিত্তিক বাণিজ্যিক নিরীক্ষায় অগ্রণী, জনতা ও সোনালী ব্যাংকের তুলনায় রূপালী ব্যাংকে জড়িত টাকার পরিমাণ সবচেয়ে কম।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন