সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : ঈদের দিনের সোনালি সকালে গায়ে নতুন পাঞ্জাবি জড়িয়ে ঈদগাহে নামাজ পড়ার মধ্যে রয়েছে পরম আনন্দ। দেশীয় শিল্পের এ পণ্যটি এখন আর সাধারণ্যে নেই। শৈল্পিক স্পর্শে বর্ণময় রঙ ও নকশায় পাঞ্জাবি এখন পোশাকের শীর্ষ স্থানে রয়েছে। কেননা ঈদের কেনাকাটায় ঘরের ছোট-বড় সবার জন্য আগে চাই সুন্দর একটি পাঞ্জাবি। তাই তো ফুরিয়ে যাওয়ার আগে রোজার দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে মনের মতো পাঞ্জাবির খোঁজে ক্রেতাদের ভিড় বেড়েছে কুমিল্লা নগরীর পাঞ্জাবি বিক্রির দোকানগুলোতে। এবারে কুমিল্লার তৈরি ঐতিহ্যের খাদি কাপড়ের পাঞ্জাবির কারুকাজে আনা হয়েছে শৈল্পিকতা।
কুমিল্লা নগরীর মনোহরপুর ও লাকসাম সড়কের প্রায় দুইশ’ পাঞ্জাবির দোকানের সাইনবোর্ডে নামের আগে পরে খাদি শব্দ ব্যবহার হয়ে আসছে। কুমিল্লার ঐতিহ্যের সঙ্গে ওতোপ্রতোভাবে জড়িয়ে রয়েছে শতবর্ষের খাদি শব্দটি। খাদি কাপড়ের পাঞ্জাবির আগের কদর এখনো রয়েছে। আবার সময়ের পরিক্রমায় দেশীয় ফ্যাশন হাউজগুলোর চোখ জুড়ানো নানান রঙ ও ডিজাইনের পাঞ্জাবি ঈদে ও বাঙালির অন্যান্য উৎসবে বাজারে স্থান করে নিচ্ছে।
এবারের ঈদকে সামনে রেখে উন্নতমানের পাঞ্জাবির মধ্যে ফুলকটন, এন্ডি সিল্ক, এন্ডি কটন, কুমিল্লার ঐতিহ্য মটকা খাদি, হাতে ও মেশিনে বোনা পাতলা খাদি, তাঁত, রাজশাহি সিল্ক, সেঞ্চুরী কটন, আদি, ইউনিটিকা এবং বাহারি কাজের শেরওয়ানি, কিউজি ব্র্যান্ডের নজরকাড়া পাঞ্জাবি এবারের বাজারে স্থান পেয়েছে। বর্ণময় কারুকাজে ভরা সেমিলং পাঞ্জাবি এবং মানানসই হালকা কাজের লং পাঞ্জাবির চাহিদা রয়েছে এবারে। এবারে শটপাঞ্জাবির চাহিদা আগের মতো নেই। পাঞ্জাবির ফ্যাশন এখন সেমিলংয়ে দাঁড়িয়েছে। কেবল বড়দেরই নয়, ছোটদের পাঞ্জাবি, কাবুলিসেট ও শেরওয়ানী সেটে কারুকাজের ক্ষেত্রে নতুনত্ব আনা হয়েছে।
নগরীর মনোহরপুরের খাদি বিতানের পরিচালক হুমায়ুন কবীর হিমু জানান, ‘কুমিল্লার ঐতিহ্য খাদি ও তাঁতের পাঞ্জাবিতে এবারে বৈচিত্র্য আনা হয়েছে। এখানকার বুননো পাতলা খাদি কাপড়ের তৈরি পাঞ্জাবিতে চোখ জুড়ানো এম্বয়ডারির কাজে এক ব্যতিক্রমি শৈল্পিকতা ফুটে উঠেছে। এছাড়া এবারেও কিউজি ব্যান্ডের উন্নতমানের অসংখ্য ডিজাইনের লং, সেমিলং পাঞ্জাবি ক্রেতাদের বিপুলভাবে আকৃষ্ট করছে। তরুণ-যুবকদের কাছে পাঞ্জাবি এখন হালের ঈদ ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে।
কুমিল্লা নগরীর পাঞ্জাবি বিক্রির দোকান ও শপিংমলের পোষাকঘরগুলোতে গতকাল ছুটির দিন হওয়ায় বেশ ভীড় ছিল। দেখা গেছে বেশ আত্মতৃপ্তির সঙ্গে ক্রেতারা নিজের জন্য ছাড়াও সন্তান, বাবা, চাচা, দাদা, নানা, শ্বশুরের কিংবা ছেলেবেলার শিক্ষকের জন্যও পাঞ্জাবি কিনছেন। আবার পাঞ্জাবি পছন্দের জায়গায় স্বামীর সঙ্গে স্ত্রীরাও যোগ দিচ্ছেন দোকানের ডিসপ্লেতে। তরুণীরাও প্রিয়জনের জন্য পছন্দের পাঞ্জাবির খোঁজে এক দোকান থেকে আরেক দোকানে ঘুরছেন। ঈদের সময় যতোই ঘনিয়ে আসছে ততোই শিশু-কিশোরসহ সব বয়সী পুরুষের আনন্দের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে মনের মতো পাঞ্জাবি কেনার মুহূর্ত ঘিরে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন