বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

রোহিঙ্গাদের ফেরাতে ১৫ সদস্যের প্রতিনিধিদল কক্সবাজারে

হেগ আদালতের চাপে মিয়ানমার

বিশেষ সংবাদদাতা কক্সবাজার : | প্রকাশের সময় : ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:২৪ এএম

কক্সবাজারের উখিয়া টেকনাফে অবস্থানরত মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের সাক্ষ্য নিতে মিয়ানমারের ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল এখন কক্সবাজারে। প্রতিনিধিদলটি বুধবার সকালে কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছালে শরণার্থী ত্রাণ ও পুনর্বাসন কমিশনের কর্মকর্তারা তাদের স্বাগত জানান। এসময় কক্সবাজারের জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও আরআরআরসি অফিসের কর্মকর্তাসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার দায়িত্বশীল কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। সেখান থেকে প্রতিনিধি দলটি হোটেল রয়েল টিউলিপে বিশ্রামে যান।
জানা গেছে, এই প্রতিনিধিদলে মিয়ানমার সরকারের ৯ জন এবং আসিয়ানের ৭ জন সদস্য রয়েছেন। মিয়ানমারের এই প্রতিনিধি দলটি বুধ ও বৃহস্পতিবার দুই দিন ধরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শতাধিক রোহিঙ্গার সাথে কথা বলবেন এবং আরআরসি ও জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন বলে জানা গেছে।
এদিকে মিয়ানমারের এই প্রতিনিধি দলটি এমন সময়ে কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের সাথে সাক্ষাত করছেন এবং তাদের সুবিধা-অসুবিধা জানতে এসেছেন যখন হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা গণহত্যা ও নির্যাতনের বিচার চলছে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে মিয়ানমারের আরাকান রাখাইনে কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার অজুহাতে মিয়ানমার সেনাবাহিনী হত্যা-ধর্ষণসহ পোড়ামাটি নীতি অবলম্বন করে রোহিঙ্গা জাতিসত্তা নির্মূলের ষড়যন্ত্র করে। এতে করে লাখ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে কক্সবাজার উখিয়া টেকনাফে আশ্রয় নেয়। এর আগে ১৯৮২ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা সাড়ে তিন লাখ রোহিঙ্গাসহ বর্তমানে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছেন।
কিন্তু বাংলাদেশের পক্ষে এই রোহিঙ্গার বোঝা বহন করা সম্বব নয়। তাই সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে চেষ্টা চালিয়ে আসছে। ২০১৮ সালের আন্তর্জাতিক চাপের মুখে বাংলাদেশ মিয়ানমার প্রত্যাবাসন চুক্তি সম্পন্ন হয়। একই বছরের ১৬ জুন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর মধ্যে সমঝোতা চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী গত বছরের ১৫ নভেম্বর নির্ধারণ করা হয় প্রত্যাবাসনের দিনক্ষণ। তবে আবারো হামলার মুখে পড়ার আশঙ্কায় রোহিঙ্গারা ফিরিয়ে যেতে অস্বীকৃতি জানালে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ভÐুল হয়ে যায়।
সর্বশেষ চলতি বছরের জুলাই মাসে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নতুন করে উদ্যোগের অংশ হিসেবে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেন মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিবের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল। রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে কথা বললেও মিয়ানমার সেই উদ্যোগের আশ্বস্ত হতে না পেরে রোহিঙ্গারা ফিরতে না চাইলে আবারো প্রত্যাবাসন স্থগিত হয়।
গত ২২ আগস্ট রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে দ্বিতীয় দফা নির্ধারিত সময়ে ৩ হাজার ৪৫৫ রোহিঙ্গা নাগরিকের তালিকা পাঠানো হয়েছিল মিয়ানমার সরকারের হাতে। এতে টেকনাফের ২৩-২৪ -২৬-২৭ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ১০৩৭ পরিবারের ৩ হাজার ৪৫৫ জন রোহিঙ্গাদের নাম তালিকাভুক্ত ছিল। কিন্তু মিয়ানমারের উদ্যোগে তারা আশ্বস্ত হতে না পেরে ফিরে যেতে রাজি না হওয়ায় এ পর্যন্ত প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আটকে আছে।
বুধবার মিয়ানমার সরকারের ১৫ জন প্রতিনিধি দল আবার রোহিঙ্গাদের ফেরাতে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে এসেছেন। তবে এবারের রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদল আসার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি হওয়া মিয়ানমার সরকার কিছুটা নমনীয় হয়েছেন বলে ধারণা করছেন পর্যবেক্ষকরা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন