রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহানগর

উত্তরা মডেল টাউন ভাঙাচুরা রাস্তা আর ময়লা আবর্জনার মডেল

প্রকাশের সময় : ২৬ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সায়ীদ আবদুল মালিক : উত্তরা এখন নামেই মাত্র মডেল টাউন। বাস্তবে মডেল টাউনের চিহ্ন কোথাও খুঁজে পাওয়ার উপায় নেই। এ এলাকার রাস্তাগুলো বর্তমানে চলাচলে প্রায় অযোগ্য হয়ে পড়ে আছে। যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা। রাস্তায় নেমে নাক চেপে চলাচল করতে হয়। রয়েছে অসহনীয় মশার যন্ত্রণা। রাস্তাগুলোর অবস্থা বেহাল। বিশেষ করে মাস্কট প্লাজার সামনের রাস্তা, ৭ নং সেক্টরের ১৩ নং রাস্তা ও ৬ নং সেক্টরসহ সব কয়টি রাস্তারই অবস্থা করুণ। বড় বড় গর্তের কারণে এসব রাস্তা দিয়ে জনসাধারণের চলাচলে চরম অসুবিধার সৃষ্টি হচ্ছে। একটু বৃষ্টিতেই পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। আবার রোদ উঠলে ধুলাবালির জন্য রাস্তায় চলাচল অসম্ভব হয়ে পড়ে।
নাগরিক সকল সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার পরিকল্পনা নিয়েই ১৯৬৫ সালে উত্তরা মডেল টাউনের যাত্রা শুরু। এরপর অর্ধ শতক কেটে গেলেও পরিকল্পিত সেই শহর রয়েছে শুধু কথায়। প্রায় পাঁচ লাখ জনঅধ্যুষিত এই জনপদে শুধু নেই আর নেইয়ের হাহাকার। দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে সে হাহাকার শুধু বেড়েই চলেছে, সমস্যার কাক্সিক্ষত সমাধান এখনও অনেক দূরের পথ।
এই সেই মডেল টাউন, যেখানে একটি জায়গার নাম পরিচিতি পেয়েছে ময়লার মোড় নামে। এ নামেই বোঝা যায়, কতটা নাজুক অবস্থায় রয়েছে এই জনপদের মানুষ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ কুদরাতুল্লাহ ইনকিলাবকে বলেন, উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় সব কয়টি রাস্তায় এখন মেরামতের কাজ চলছে। আমরা যতদ্রুত সম্ভব মেরামতের কাজ শেষ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, উত্তরা মডেল টাউনের রাস্তাগুলো রাজউকের ছিল, সেগুলো ক্রমে ক্রমে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের কাছে হস্তান্তর হচ্ছে। এই রাস্তাগুলোর আগের কাজে অনেক ত্রুটি ছিল। যে কারণে ওই এলাকার রাস্তাঘাটের অবস্থা অনেকটাই বেহাল। ডিএনসিসি’র কাছে আসার পর আমরা রাস্তাগুলো টেকসই ও মজবুত করে রিপেয়ারিং করার চেষ্টা করছি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উত্তরার আবদুল্লাহপুর খালে দু’পাশ থেকেই ফেলা হচ্ছে বর্জ্য। ৩, ৪, ৫, ৮, ৯, ১১, ১৩ ও ১২ নম্বরসহ বেশ কয়েকটি সেক্টরে গৃহস্থালির বর্জ্য সরাসরি খালে ফেলা হচ্ছে। অন্যদিকে পাইপের মাধ্যমে ফেলা হচ্ছে খালের এবং পাশের ফুলবাড়িয়া ও হরিরামপুর প্রামের মানববর্জ্য। ফেলা হচ্ছে পোল্ট্রি খামারের বর্জ্যও। এছাড়া বেসরকারি হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকের চিকিৎসা-বর্জ্যরে ভাগাড়েও পরিণত হয়েছে খালটি। এই খালটির মতো বাউনিয়া খালও দূষিত হয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, বাদ যাচ্ছে না পরিকল্পিত লেকও। সেখানেও দখল-দূষণ হচ্ছে। লেকের অনেকাংশ সবুজ কচুরিপনা পানিকে আড়াল করলেও সেগুলো সরানো হচ্ছে না ঠিক সময়ে। এ কারণে দুর্গন্ধযুক্ত বর্জ্যরে ভাগাড়ে জন্ম নেয়া পোকা-মাকড় ও মশার জ্বালায় অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে দুর্বিষহ জীবন-যাপন করতে হচ্ছে এখানকার মানুষের।
অন্যদিকে ১২নং সেক্টর মোড়ে সোনারগাঁ জনপদের এক পাশে ময়লা-আবর্জনা স্তূপ করে ফেলা হচ্ছে অনেক বছর ধরে। এখানে ফেলা ময়লা-আবর্জনা ফুটপাত ছাড়িয়ে রাস্তার অনেকটা অংশ দখল করে থাকছে। অনেকটা এলাকাজুড়ে এভাবে ময়লার স্তূপ আর কোথাও পাওয়া যাবে তা জানা নেই কারও। বছরের পর বছর এভাবে চলে আসায় ওই জায়গার নামই বদলে গেছে। বর্তমানে জায়গাটি ময়লার মোড় নামে পরিচিত। এর পাশ দিয়ে গেলেই নাকে রুমাল বা হাত চেপে ধরতে হয় যাত্রী ও পথচারীদের। ময়লার মোড়ের আশপাশের বাসিন্দাদের জীবন দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ। দিন-রাত তীব্র গন্ধ সহ্য করে বাধ্য হয়ে দূষিত এ পরিবেশে বসবাস করতে হচ্ছে তাদের।
স্থানীয় বাসিন্দা আলিউল ইসলাম বলেন, একটা জায়গার নাম প্রতিষ্ঠা করতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়, পয়সা খরচ করতে হয়। অথচ কি দুর্ভাগ্য আমাদের, অবলীলায় ময়লার নামে একটি জায়গার নামকরণ হয়ে গেল চোখের সামনে। এ থেকেই বোঝা যায়, উত্তরা মডেল টাউনের কি জীর্ণদশা বিরাজ করছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, অর্ধ শতকে এই জনপদে ২০ শতাংশ উন্নয়ন কাজও সম্পন্ন হয়নি। প্লট বরাদ্দ পাওয়ার পর তিন বছরের মধ্যে সেগুলো উন্নয়নের শর্ত থাকলেও অনেকেই তা মানেননি। চরম আবাসন সঙ্কটের এ শহরে এখনও প্রায় ৩০ শতাংশ প্লট উন্নয়নের বাইরেই রয়ে গেছে।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি নেই। উত্তরার উন্নয়নে রাজউক, সিটি কর্পোরেশন ও ওয়াসার বনিবনা না হওয়ায় বাসিন্দাদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। সঠিক পরিকল্পনার অভাবকেও এক্ষেত্রে দায়ী করেন অনেকে।
উত্তরা অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও ১১ নম্বর সেক্টর কল্যাণ সমিতির সভাপতি ডা. মঈনউদ্দিন আহমেদ বলেন, উত্তরা শহর নিয়ে সঠিক পরিকল্পনা হয়নি। এত বড় শহর করা হয়েছে অথচ ময়লা কোথায় ফেলা হবে, তা নিয়ে চিন্তা করা হয়নি। পরিকল্পনা সঠিক হলে আজকে এ দশা হতো না।
উত্তরা ১০ নং সেক্টরের বাসিন্দা ই¯্রাফিল আলম বলেন, সোনারগাঁও জনপদ থেকে চৌরাস্তা পর্যন্ত সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে এবড়ো-খেবড়ো হয়ে আছে। সড়কের দুইপাশে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু মেরামতের কোনো উদ্যোগই দেখা যাচ্ছে না। যে কারণে মাস্কট প্লাজা থেকে খালপাড় পর্যন্ত রাস্তাটি এখন চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে মাস্কট প্লাজা থেকে চৌরাস্তা পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশের পলেস্তরা উঠে বিশাল রাস্তাটি সরু রাস্তায় পরিণত হয়ে গেছে।
৬ নং সেক্টরের আশপাশের রাস্তাগুলোরও বেহাল দশা। সংস্কার কাজ হয় না গত এক বছর ধরে। ৩ ও ৪ নং রোডের আবস্থা সবচেয়ে বেশি করুণ। রাস্তার ইট-পাথর উঠে জায়গায় জায়গায় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়ে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। একটুখানি বৃষ্টি হলেই পানি আর কাদা মিলে একাকার হয়ে পড়ে।
৭ নং সেক্টরের রাস্তাগুলোতো চেনার কোনো উপাই নেই। বিশেষ করে ১৩ নং রোডের অবস্থা এতই করুণ যে, এটা কি রাস্তা নাকি গরু-ছাগলের বেচা-কেনার হাট! পুরা রাস্তাটি কাদা-পানি, ইট-কঙ্করে এমন বেহাল দশা হয়েছে যে এখান দিয়ে সুস্থ সবল মানুষেরই চলাচল করা বিপজ্জনক। এখানে রয়েছে বেশকিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আসা-যাওয়া করে থাকে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন