মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

ডাকসুর ভিপির ওপর ন্যক্কারজনক হামলা

| প্রকাশের সময় : ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি নুরুল হক নুর ও সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ এবং মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামের একটি সংগঠনের নেতাকর্মীরা। গত রবিবার দুপুরের দিকে এ হামলা চালানো হয়। প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, হামলাকারীরা ডাকসু ভবনে নুরের কক্ষে প্রবেশ করে লাইট বন্ধ করে হাতুড়ি, রড, লাঠি ও বাঁশ নিয়ে হামলা চালায়। এক পর্যায়ে নুর অজ্ঞান হয়ে পড়ে। একই সময়ে ডাকসু ভবনের সামনে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতাকর্মীদের ওপরও হামলা চলে। এ সময় ডাকসু ভবনের ছাদ থেকে একজনকে ফেলে দেওয়া হয়। তাকে ও নুরসহ ১৪ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের একজনকে রাখা হয়েছে লাইফ সাপোর্টে। দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ হামলা যে পরিকল্পিত, তাতে সন্দেহ নেই। আমরা এ হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড হিসাবে একদা সুখ্যাত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচিত ভিপি ও তার সংগঠনের নেতাকর্মীরা এভাবে বর্বরোচিত হামলার শিকার হবে, তা কল্পনা করতেও কষ্ট হয়। আরো দুঃখজনক, ছাত্রলীগের মতো ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা এই হামলা চালিয়েছে এবং তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামের নবীন একটি সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তারা একই সঙ্গে ছাত্রলীগ ও মুক্তিযুদ্ধের গৌরবকে খাটো করেছে। উল্লেখ করা যেতে পারে, ভিপি নুর ও তার সঙ্গী-সাথীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা এটাই প্রথম নয়। ক’দিন আগেও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চও তার ওপর হামলা চালায়। এ নিয়ে তার ওপর হামলা হয়েছে ৯ বার। সাম্প্রতিক হামলার কারণ, ভারত সম্পর্কে তার বিরূপ মন্তব্য বলে অনেকে মনে করেন। তাদের মনে এ প্রশ্নও দেখা দিয়েছে: তাহলে কি ভারতের ন্যয়সঙ্গত কোনো সমালোচনাও করা যাবে না?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গণতন্ত্রের সুতিকাগার হিসাবে খ্যাত। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা যুদ্ধ অবধি এদেশে যত আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছে, তা সূচিত হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। আর এসব আন্দোলন-সংগ্রাম সংগঠন ও পরিচালনায় ছাত্রলীগের রয়েছে অগ্রবতী ভূমিকা। স্বাধীনতা যুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের অবদান অবিস্মরণীয়। সে সময়ের ছাত্র লীগ ও ডাকসুর কথা এ প্রসঙ্গে বিশেষভাবে উল্লেখ্য। তখন ছাত্রলীগ ও ডাকসুর নেতৃত্ব দিয়েছেন নূরে আলম সিদ্দিকী, শাহজাহান সিরাজ, আসম আবদুর রব, আব্দুল কুদ্দুস মাখন, তোফায়েল আহমেদ প্রমুখ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নেতা তৈরির ক্ষেত্র হিসাবেও স্বনামখ্যাত। স্বাধীনতার আগে ও পরে এবং এখন পর্যন্ত যারা সরকারি ও বিরোধীদল পরিচালনা করছেন, তাদের বেশিরভাগই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য়ের শিক্ষার্থী। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্র লীগের নেত্রী ছিলেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছিলেন ছাত্রলীগের সভাপতি। ছাত্রলীগের মর্যাদা, গৌরব, ঐতিহ্য ও অহংকার আজ ধুলায় মিশে যেতে বসেছে। গত ১২ বছরে ছাত্র লীগ মারাত্মকভাবে পতিত হয়েছে। সন্ত্রাস, হানাহানি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, কমিশনবাজি, ছিনতাই, রাহাজানি, ধর্ষণসহ এমন কোনো অপরাধ নেই, যার সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের জড়িত থাকার অভিযোগ নেই। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। এ কারণেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক’বছর আগে ছাত্র লীগের অভিভাবকত্ব ত্যাগের ঘোষণা দিয়েছিলেন। পরে তাকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিরস্ত করা হয়। কিন্তু ছাত্রলীগের এতটুকু পরিবর্তন হয়নি। ছাত্রলীগের সর্ব শেষ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে টাকা-পয়সা কামানোর অভিযোগে যেভাবে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাতেই বুঝা যায়, তাদের নৈতিক অবক্ষয় কোন পর্যায়ে গেছে।

কদিন আগে আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নবম বারের মতো সভানেত্রী এবং ওবায়দুল কাদের দ্বিতীয়বারের মতো সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া দলের আগের নেতৃবৃন্দই কার্যত এবারও নেতৃত্ব লাভ করেছেন। ওবায়দুল কাদের তার এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো, নির্বাচনী ইশতেহার বা প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করা। পর্যবেক্ষক মহল এ ব্যাপারে সহমত পোষণ করেও মনে করে, দল এবং সহযোগী সংগঠনসমূহ বিশেষ করে ছাত্রলীগ-যুবলীগকে নিয়ন্ত্রণ করার চ্যালেঞ্জও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ছাত্রলীগ-যুবলীগ যেভাবে পেশীশক্তি প্রদর্শন ও দুর্নীতিপ্রিয়তা দেখিয়ে আসছে তাতে সরকারের সুনাম-সুখ্যাতি ও অবদান কোনো গ্রাহ্যতা পাবে না। এব্যাপারে সরকারকে সতর্ক হতে হবে। উচ্ছৃংখল, হামলাবাজ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ও আইনী ব্যবস্থা নিতে হবে। এদেশের মানুষ একটি সহৃদয়, গণতান্ত্রিক, সুশাসিত, শৃংখলাপূর্ণ, নিরাপদ ও সহনশীল সমাজ দেখতে চায়। সরকারকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে এই জনআকাক্সক্ষা পূরণে ব্রতী হতে হবে। দুর্নীতি, অনিয়ম, দুর্বৃত্তাচার ও সন্ত্রাসকে যে কোনো মূল্যে প্রতিহত করতে হবে। নুরের ওপর হামলার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং বিশেষ আমলে নিয়েছেন। তার নির্দেশে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাছিম তাকে হাসপাতালে দেখতে যান। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জাহাঙ্গীর কবির নানক আশ্বস্থ করেছেন। আমরা আশা করবো, নুর ও তার সহকর্মীদের ওপর পরিচালিত ন্যক্কারজনক হামলার যথাযথ তদন্ত হবে এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন