শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহানগর

খুলনার অভিজাত শপিং সেন্টারগুলোতে ক্রেতা ঠকানোর ফাঁদ

প্রকাশের সময় : ২৭ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আশরাফুল ইসলাম নূর, খুলনা থেকে : ঈদ কেনাটাকা জমে উঠেছে খুলনায়। বৈচিত্র্যময় নতুন পোশাকের খোঁজে ক্রেতারা ছুটছেন অভিজাত সব শপিং সেন্টারগুলোতে। আর সেখানেই কোড বা নম্বর পরিবর্তন করে অধিক মূল্য আদায়ের ফাঁদে পড়ছেন তারা। সম্প্রতি খুলনা জেলা প্রশাসন পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে খুলনার অন্তত ১০টি অভিজাত শপিং সেন্টারে লাখ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
সর্বশেষ, খুলনা মহানগরীর নিউ মার্কেট এলাকার সেইফ এন সেইভ, ময়নামতী ও জালাল শপিং হাউজে পৃথক ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তিন প্রতিষ্ঠানকে এক লাখ ৯০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। গতকাল রোববার বিকালে খুলনা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুল ইসলাম ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মসিউর রহমান পৃথক এ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, নগরীর নিউ মার্কেট এলাকার সেইফ এন সেইভ শপিং সেন্টারের ৭টি ফ্রিজে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর উপায়ে খাদ্য সংরক্ষণ, দীর্ঘ দিনের শুকিয়ে যাওয়া ও পচা আপেল, আনার ফল বিক্রি করার অপরাধে মালিককে এক লাখ টাকা অর্থদন্ড অনাদায়ে এক মাসের কারাদ- প্রদান করা হয়। জেলা প্রশাসন খুলনার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুল ইসলাম এ মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন।
অপরদিকে, জনসাধারণের অনেক অভিযোগের প্রেক্ষিতে রোববার খুলনার নিউ মার্কেটের ময়নামতি, জালাল শপিং হাউজ ও ওমেনস সিটিতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসব দোকানে অধিক মূল্যে পোশাক বিক্রির প্রমাণ পাওয়া যায়। জালালে প্রতিটি পোষাকে শতভাগের উপরে মুনাফা করছে। ৪০০ টাকার শার্ট এক হাজার ৪০০ টাকা, দেড় হাজার টাকার প্যান্ট ৪ হাজার টাকায় বিক্রি করছে। এ অপরাধে জালালকে ৮০ হাজার অর্থদন্ড প্রদান করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মসিউর রহমান। এছাড়া ময়নামতীকে ১০ হাজার টাকা অর্থদ- প্রদান করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুল ইসলাম। এপিবিএন, ৩ খুলনার সদস্যরা এ অভিযানে সহায়তা প্রদান করেন। গত শুক্রবার নিউ মার্কেটের সামনের অঞ্জনস এবং পিচকার প্যালেস মোড়ের আবুল ব্রাদার্সে অভিযান পরিচালনা করায় সতর্ক হয়ে অনেকেই পোশাকের দাম কমিয়ে এনেছে।
খুলনা মহানগরীর নিউমার্কেট, সেফ এন সেভ, আড়ং, প্রাইড, আবুল ব্রাদার্স, খুলনা শপিং কমপেক্স, জলিল মার্কেট, সোহরাওয়ার্দী মার্কেট, রেলওয়ে মার্কেটসহ বিভিন্ন মার্কেট ও ফ্যাশন হাউজ ঘুরে দেখা গেছে, ভারতীয় পোশাক ‘বাজিরাও মাস্তানি’ নামের পোশাকটির মূল্য ২ হাজার থেকে ৪৪ হাজার টাকা পর্যন্ত। আবার ‘সারাহ’ ও ‘জারা’ নামে ভারতীয় লং কামিজ বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে। এর বাইরে হুররাম, শিপন জর্জেট, গুজরাটি, সারারা ও ফ্লোটাস গাউন চলছে এবারের ঈদ ফ্যাশনে। ঈদ বাজারে শিশুদের জন্য রয়েছে ফ্রক, লং ফ্রক, ফ্লোর টাচ, রাণী ফ্রক, লেহেঙ্গা, স্কার্ট টপস, ফতুয়া, ঘাগড়া ধাঁচের শাড়ি। এছাড়া সিল্ক, টিস্যু, কাতান ও মসলিনের ওপর কাজ করা স্যালোয়ার-কামিজ। অথবা ফ্রিল ও লেইস বসানো জমকালো ফ্রক। রয়েছে ভারতীয় মুভি সিরিয়ালের নাম অনুযায়ী বিভিন্ন পোশাক। এর মধ্যে দিলওয়ালে, মাস্তানী, বাজরঙ্গি ভাইজানের মুন্নিসহ বিভিন্ন বাহারি পোশাক। এসব পোশাকের দাম অভিজাত্যের প্রতিষ্ঠান অনুযায়ী এক হাজার ৫০০ থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকারও বেশি। এছাড়া হাতের কাজ, কারচুপি, অ্যাপিক রিবনের তৈরি পোশাকের প্রভাবও রয়েছে কমবেশি। আর ছেলেদের ফতুয়া, পাঞ্জাবি, শার্ট-প্যান্ট, টি শার্ট, শর্ট পাঞ্জাবি, কোট সংযুক্ত মোদি স্যুট ও শেরওয়ানি কাটের পাঞ্জাবি রয়েছে। এসব পোশাক সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ছয় হাজার টাকারও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে ছেলেদের শার্ট বা ফতুয়ায় হাফহাতা এবং হাতাকাটা, লং প্যান্টের বদলে কোয়ার্টার প্যান্ট। সাদা পাঞ্জাবির পাশাপাশি রঙিন দেশীয় পোশাকে ভয়েল, বেক্সি ভয়েল, কটর জর্জেট, অ্যান্ডি কাপড়ের পাঞ্জাবিও পাওয়া যাচ্ছে। তবে দামও গলাকাটা।
ক্রেতা ফাতেমা-তুজ-জোহরা বলেন, তুলনামুলক এবার কাপড়ের মূল্য অত্যন্ত বেশি চাওয়া হচ্ছে। দরদাম করলে আকাশচুম্বী মূল্য থেকে ক্রয়সীমার মধ্যেও আসছেন অনেকেই। তাহলে অধিক মূল্য কেন হাকা হচ্ছে? জেলা প্রশাসনের অভিযান ঈদ পর্যন্ত চলমান থাকলে খুলনাবাসী উপকৃত হবেন বলে মনে করেন ওই শিক্ষিকা।
খুলনা জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান বলেন, খুলনার অভিজাত শপিংমল গুলোতে ক্রেতা ঠকানোর ফাঁদ দেখে আশ্চার্য হবার মতোই। তাই ক্রেতাসাধারণ যাতে প্রতারণার শিকার না হন; সে বিষয়টি মাথায় রেখেই অভিযান চলমান থাকবে। আশা নয়, দৃঢ় বিশ্বাস খুলনাবাসী তাতে উপকৃত হবেই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন