শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

ঘন কুয়াশার সাথে শীতের অকাল বর্ষণে বিপর্যস্ত দক্ষিণের জনজীবন

জনস্বাস্থ্য ও কৃষি অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৯, ২:১৭ পিএম

মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রার সাথে অসময়ের বৃষ্টিপাতে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের স্বাভাবিক জনজীবন থেকে শুরু করে শীতকালীন সবজি ও প্রধান রবি ফসল বোরো ধানের বীজতলা ব্যাপক ক্ষতির কবলে পড়তে যাচ্ছে। কুয়াশা আর অসময়ের বৃষ্টিপাতে দক্ষিণাঞ্চলের নৌ, সড়ক ও আকাশ পরিবহন ব্যবস্থাও বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে ঘন ঘন। ইতোমধ্যে বরিশালে মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০.১২ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে গত ২৬ডিসেম্বর। যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৩.১ ডিগ্রী কম । এমনকি সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও ইতোমধ্যে ২০ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেছে। যা স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৫ ডিগ্রী কম।

বছরের শেষভাগের বেশীরভাগ সময় যুড়ে ডেঙ্গু আতংকের পরে বৈরী আবহাওয়ায় ঠান্ডাজনিত কারনে নিউমোনিয়া সহ ব্যাপক সর্দি কাশী ও জ্বরের কবলে পড়ছে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। বিশেষকরে শিশু ও বয়স্কদের জন্য এ বৈরী আবহাওয়া যথেষ্ঠ ঝুকি বয়ে আনছে। সরকারী বেসরকারী হাসপাতালগুলোতে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্তের ভীড় ক্রমশ বাড়ছে। গত তিনদিন ধরে দক্ষিণাঞ্চলের আকাশে সূর্যোর দেখা নেই। এর সাথে অসময়ের বৃষ্টিপাতে পরিস্থিতি আরো নাজুক। বরিশালে শুক্রবার দুপুর ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত ১১.২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতে জনজীবনে চরম বিপর্যয় নেমে আসে।

বৃহস্পতিবার বরিশালে তাপমাত্রার পারদ ১২ডিগ্রী সেলসিয়াস থেকে শুক্রবার সকালে ১৩.৩ ডিগ্রী সেলসিয়াসে বৃদ্ধি পেলেও শণিবার তা আবার ১৩ ডিগ্রীতে নেমে গেছে। পৌষের প্রথমভাগের এ বর্ষন দক্ষিণাঞ্চলের উঠতি আমন ফসলের জন্য মারাত্মক বিপর্যয় সষ্টি করছে। মাঠে থাকা ফসল তোলা থেকে শুরু করে ঘরে তোলা ফসল শুকাতে গিয়েও চরম বিপাকে পড়ছেন চাষিরা। ফলে ধানের দাম পাওয়া নিয়েও সংকট সৃষ্টি হতে যাচ্ছে।

অসময়ের বর্ষনের সাথে ঘন কুয়াশায় বোরো বীজতলা ‘কোল্ড ইনজুরী’র কবলে পড়ছে। ফলে এবার বোরো আবাদ নিয়েও কৃষকদের চরম সংকটে পড়তে হতে পারে বলে মনে করছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগন। চলতি রবি মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলের ১১টি জেলায় প্রায় সাড়ে ৪ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের মাধ্যমে ২০ লক্ষাধীক টন চাল পাবার লক্ষ রয়েছে।

ঘন কুয়াশায় শীতকালীন শাক-সবজি উৎপাদন সহ এর মান নিয়েও দুঃশ্চিন্তায় দক্ষিণাঞ্চলের কৃষককুল। কুয়াশার কারনে ফুলকপি ও বাঁধা কপির গায়ে কালো দাগ পড়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অন্যান্য শাক-সবজির উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে।

ফলে ‘ফণি’ ও ‘বুলবুল’এর পরে শীতের বৈরী আচরনে দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি অর্থনীতিতে নতুন সংকট সৃষ্টি হতে চলেছে। এ অবস্থায় কৃষকদের জন্য সঠিক দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা সহায়তা প্রদানের পরামর্শ দিয়েছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগন। এ ব্যাপারে শণিবার কৃষি ম্প্রসারন অধিদপ্তরের বরিশাল কৃষি অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিাচলকের সাথে আলাপ করা হলে তিনি ‘পরিস্থিতি এখনো খুব ঝুকিপূর্ণ না হলেও মাঠ পর্যায়ের বøক সুপারভাইজারদের কৃষকদের সাথে নিবিড় যোগাযোগ রেখে প্রয়োজনী পরামর্শ প্রদানের নির্দেশ দেয়া’র কথা জানান। হয়েচে।

এদিকে গত কয়েকদিনের ঘন কুয়াশায় দক্ষিণাঞ্চলের অভ্যন্তরীন প্রায় ২০টি নৌপথ ছাড়াও বরিশালের সাথে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও মোংলা-খুলনা নৌপথে যোগাযোগ ব্যবস্থায় যথেষ্ঠ বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। রাত বাড়ার সাথে কুয়াশার চাঁদরে ঢাকা পড়ছে মেঘনা অববাহিকার নৌপথগুলো। ফলে মারাত্মক ঝুকি নিয়ে নৌযানগুলো চলাচল করছে। শুধুমাত্র বরিশালÑঢাকা নৌপথের হাতে গোনা কয়েকটি বেসরকারী যাত্রীবাহী নৌযান ছাড়া সিংহভাগ নৌযানেই কোন রাডার ও জিপিআরএস না থাকায় নৌযানগুলো চলছে সীমাহীন ঝুকির মধ্যে।

কুয়াশার কারনে বরিশালে দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র বিমান বন্দরে ফ্লাইট পরিচালন ব্যাহত হচ্ছে গত কয়েকদিন ধরে। শণিবার নির্ধরিত সময়র প্রায় দেড় ঘন্টা পরে বেসরকারী নভো এয়ারের একটি ফ্লাইট বরিশাল বিমান বন্দরে অবতরন করতে গিয়ে ঘন কুয়াশার সাথে সন্ধা ঘনিয়ে আসায় মারাত্মক ঝুকির কবলে পড়ে। দু দফার চেষ্টায় ব্যার্থ হয়ে তৃতীয় দফায় রানওয়েতে সদ্য সংজোযিত ‘পাপি লাইট’এর ওপর নির্ভর করে ৭৪ জন যাত্রী নিয়ে ফ্লাইটটি বরিশাল বিমান বন্দরে অবতরনে সক্ষম হয়।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন