বিয়ের প্রলোভনে দুই বছর ধরে ধর্ষণের শিকার হয়েছে দশম শ্রেণির এক ছাত্রী। অবশেষে বিয়ে না করায় আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে সে। গতকাল বৃহস্পতিবার নওগাঁ সদর উপজেলার চকবুলাকি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এদিকে দফায় দফায় বৈঠক করেও বিষয়টি সমাধান না হওয়ায় গলা ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলো ঐ ছাত্রী।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই ছাত্রীর বাবা দিনমজুর। স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে বার বার প্রেমের প্রস্তাব দেয় ওই গ্রামের প্রভাবশালী ইয়াছিন আলীর ছেলে ইমরান হোসেন ইমন। পরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরপর ইমরান হোসেন বিয়ের প্রলোভনে দুই বছর ধরে ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করে।
গত ৩ জানুয়ারি রাতে ওই ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করলে ধরা পড়ে যায় ইমরান। এরপর বিষয়টি নিয়ে গ্রামবাসী ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বৈঠকের মাধ্যমে বিয়ে দিয়ে সমাধানের চেষ্টা করলে ছেলের পরিবার তা অর্থের মাধ্যমে সমাধান করতে চায়। কিন্তু মেয়ের পরিবার টাকার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান না করে বিয়ের কথা বললে অস্বীকার করে ছেলের পরিবার।
এভাবে বৈঠকের নামে তারা সময় পার করায় মঙ্গলবার রাতে থানা পুলিশে অভিযোগ করে ভুক্তভোগীর পরিবার। এমতাবস্থায় মেয়ে লোকলজ্জা থেকে মুক্তির জন্য বৃহস্পতিবার সকালে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। পরে তাকে উদ্ধার করে রানীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়।
ভুক্তভোগী ছাত্রীর বাবা অভিযোগ করে বলেন, ৩ জানুয়ারি রাতে ইমরান হোসেন মেয়েকে ধর্ষণ করতে এলে বিষয়টি জানাজানি হয়। আমার মেয়েকে দুই বছর ধরে ধর্ষণ করা হয়েছে। গ্রাম্য সালিশে মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে ছেলে পক্ষ অস্বীকার করে।
টাকার বিনিময়ে আপসের প্রস্তাব দেয় তারা। মেয়ে ক্ষোভে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। সুবিচারের আশায় থানায় গেছি। আসামির পরিবার প্রভাবশালী হওয়ায় আমরা সুষ্ঠু বিচার পাচ্ছি না। থানায় অভিযোগ দেওয়ার কয়েকদিন পার হলেও আসামীকে আটক করতে না পারায় আমরা সুষ্ঠু বিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কিত।
স্থানীয় একটি স্কুলের প্রিন্সিপাল ইকবাল সাইদুল কবির বলেন, আমরা এই বিষয়টি বিয়ের মাধ্যমে সমাধান করতে চাইলেও ছেলের পরিবার তা অর্থের মাধ্যমে সমাধান করতে চায়। তাই আমরা বিষয়টি সমাধান করতে না পারায় সুষ্ঠু বিচারের আশায় থানায় অভিযোগ দিয়েছি। আশা করি থানা পুলিশ একটি শান্তিপূর্ন সমাধান করে দেবে এবং ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করবে।
চন্ডিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়্যারম্যান বেদারুল ইসলাম মুকুল জানান, আমি ঘটনার জানার পর একাধিক বৈঠকে বিয়ের মাধ্যমে সমাধান করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ায় ভুক্তভোগী পরিবারকে আইনের আশ্রয়ে যাওয়ার পরামর্শ প্রদান করি।
নওগাঁ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সোহরায়ার্দী হোসেন বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর মেয়ের জবানবন্দি নিয়েছি। এছাড়াও ডাক্তারী প্রতিবেদন অচিরেই হাতে পাওয়া যাবে। আর ঘটনার পর থেকে আসামী ইমন পলাতক থাকায় তাকে এখনোও আটক করা সম্ভব হয় নাই। আমি আশা রাখি অতিদ্রুত আসামীকে আটক করা সম্ভব হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন