বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

সেতুর টোল আদায়ে লুটপাট বন্ধ করতে হবে

প্রকাশের সময় : ২৯ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুর টোল আদায়ে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হরিলুটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত এক রিপোর্টে জানা যায়, ১৯৯৮ সালে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর থেকে দর প্রস্তাবের মাধ্যমে ৫ বছরের জন্য টোল অপারেটর নিয়োগ করে টোল আদায় কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। সর্বশেষ ২০১০ সালে ইউডিএস নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে রাজস্ব আদায়ের কাজ দেয়ার পর তারা সফলভাবেই ৫ বছর দায়িত্ব পালন করে। গত বছর অক্টোবরে তাদের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ৬ মাসের জন্য মেয়াদ বর্ধিত করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু সেতুর টোলপ্লাজার জন্য মে মাসে পুনরায় দরপ্রস্তাব আহ্বান করার কথা থাকলেও উন্মুক্ত প্রতিযোগিতামূলক দরপ্রস্তাবের বদলে টোল আদায়ের বর্তমান ব্যয়সীমার ১০ গুণ বাড়িয়ে একটি কোম্পানিকে কাজ দিতে সেতু বিভাগের একটি সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে বলে জানা যায়। গত ৫ বছর ধরে টোল আদায়কারী ইউডিএস যেখানে বছরে সর্বোচ্চ ৬ কোটি টাকার বিনিময়ে টোল আদায় করেছে, সেখানে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেমস (সিএনএস) নামের একটি প্রতিষ্ঠান যে দরপ্রস্তাব করেছে তার পরিমাণ ইউডিএসকে পরিশোধিত অর্থের ১০ গুণ বেশি বলে জানা যায়। বঙ্গবন্ধু সেতুর টোল আদায়ে ইউডিএসকে প্রতিমাসে গড়ে ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকা পরিশোধ করা হলেও আলোচ্য সিএনএস আদায়কৃত টোলের ১২ শতাংশ দাবি করছে। সিএনএসের দরপ্রস্তাব মেনে নিলে এবং বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে গত মাসে আদায় করা টোলের পরিমাণকে গড় ধরলে ১২ শতাংশ হারে সিএনএসকে মাসে ৪ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে বলে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা গেছে।
কথিত সিএনএস আরো একাধিক বিভাগে রাজস্ব আদায়ের কাজ করছে এবং তাদের বিরুদ্ধে রাজস্বের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠলেও সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। উপরন্তু সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট অস্বাভাবিক বেশি দরে সিএনএসকে কাজ পাইয়ে দিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুর টোল আদায় প্রক্রিয়ায় বিদ্যমান প্রযুক্তি দিয়ে ঢাকার সেতু ভবনে বসেই সরাসরি টোল আদায়ের প্রক্রিয়া দেখা ও মনিটরিং করা সম্ভব হওয়ায় এই প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা অনেকটাই নিশ্চিত করা সম্ভব বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। কথিত সিএনএস তাদের দরপ্রস্তাবে নিজস্ব প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রস্তাব করেছে এবং সেই প্রযুক্তি সেতু বিভাগ রেখে দিতে চাইলে তাদেরকে ১২৫ কোটি টাকা দিতে হবে বলে শর্ত দেয়া হয়েছে। কোনো অপরীক্ষিত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে টোল আদায় প্রক্রিয়ায় অস্বচ্ছতা সৃষ্টির মাধ্যমে বড় ধরনের চুরির আশঙ্কা করা হচ্ছে। টোল আদায়ে অস্বাভাবিক ব্যয় ও অস্বচ্ছ প্রক্রিয়া পরিহার করার বদলে ১০ গুণ বেশি খরচে লুটপাটের সুযোগ নিশ্চিত করার পেছনে সেতু বিভাগের যেসব কর্মকর্তা বা সিন্ডিকেট সক্রিয় আছে তাদের সম্পর্কে কর্তৃপক্ষকে সজাগ থাকতে হবে।
এমনিতেই বাংলাদেশে অবকাঠামো নির্মাণব্যয় প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে তো বটেই, যে কোনো উন্নত দেশ থেকেও অনেক বেশি। অস্বাভাবিক ধীরগতিতে কাজের বাস্তবায়ন, ভুল নকশা অনুসরণ এবং নানাবিধ দুর্নীতির কারণে অবকাঠামো নির্মাণব্যয় বেড়ে যায়। বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুতেও উদ্বোধনের পরপরই মারাত্মক ফাটল সৃষ্টির খবর পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। জনগণের কাছ থেকে আদায় করা রাজস্ব এবং বৈদেশিক ঋণের হাজার হাজার কোটি টাকায় বাস্তবায়িত এসব অবকাঠামো নির্মাণের আগে যেমন সারচার্জ হিসেবে জনগণের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হয়। আবার অবকাঠামো ব্যবহারকারীদেরও নির্দিষ্ট হারে টোল দিতে হয়। আদায়কৃত টোল রাজস্ব আকারে উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থের জোগান নিশ্চিত করতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। টোল ও রাজস্ব আদায় প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত করা গেলে বাজেট ঘাটতি কমিয়ে আনার পাশাপাশি জাতীয় উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা সম্ভব। তবে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোতে ঘাপটি মেরে থাকা দুর্নীতিবাজ চক্র জনগণের অর্থ লোপাটে নানাভাবে সক্রিয় থাকে। বঙ্গবন্ধু সেতুর টোল আদায়ে কথিত সিএনএসকে কাজ দেয়ার পেছনে তেমন কোনো দুর্নীতিবাজ চক্র বা সিন্ডিকেটের যোগসাজশ রয়েছে কিনা সেতু বিভাগের সর্বোচ্চ কর্তাদের সে বিষয়ে আগেই নজর দিতে হবে। টেকনিক্যাল ইভ্যালুয়েশনের দায়িত্বে নিয়োজিত কমিটি যেন কর্তৃপক্ষকে বিভ্রান্ত করে রাষ্ট্রের রাজস্ব লোপাটের সুযোগ করে দিতে না পারে সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে। গত বছরের অক্টোবরে আগের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই টোল আদায়ে পুনরায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরুর কথা থাকলেও তা না করে ইউডিএসকে ৬ মাস সময় বর্ধিত করা, এই ৬ মাসেও নতুন ঠিকাদার নিয়োগ চূড়ান্ত না করে আবারো আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে অন্তর্বর্তীকালীন অপারেটর নিয়োগের সিদ্ধান্ত এবং সর্বশেষ সিএনএসের ১০ গুণ বেশি খরচে টোল আদায়ের প্রস্তাবের মধ্যে পরিকল্পিত দুর্নীতি ও লুটপাটের আলামত পাওয়া যায়। সার্বিক বিষয়ে প্রয়োজনীয় তদারকি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে আমরা সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগের সময়োপযোগী উদ্যোগ প্রত্যাশা করি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন