মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

চট্টগ্রামে পরিবহন সঙ্কটকে পুঁজি করে ভাড়া নৈরাজ্য

প্রকাশের সময় : ৩০ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

রফিকুল ইসলাম সেলিম : চট্টগ্রাম থেকে ঈদে ঘরে ফেরা শুরু হয়েছে। রেল, বাস ও লঞ্চে টিকিটের সঙ্কট। রাস্তায় পর্যাপ্ত বাস নেই। দুর্ভোগে পড়েছেন দূরপাল্লার যাত্রীরা। বাস সঙ্কটকে পুঁজি করে রীতিমতো ভাড়া নৈরাজ্য চলছে। কোনো কোনো রুটে স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ ভাড়া আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। টিকিট নেই, এমন অজুহাতে কয়েক গুণ বেশি ভাড়ায় দেয়া হচ্ছে দূরপাল্লার বাসের টিকিট।
রেলের অগ্রিম টিকিট দেয়া শেষ। টিকিট নামে সোনার হরিণ ধরতে পারেননি অনেকে। রেলপথে যাদের যাতায়াত সুবিধা তারা অপেক্ষায় আছেন কখন ট্রেনে অতিরিক্ত বগি সংযোজন করা হবে অথবা বিনা সিটের টিকিট কখন বিক্রি হবে। রেল কর্তৃপক্ষ প্রতিবারের মতো এবারও চট্টগ্রাম থেকে বেশ কয়েকটি রুটে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে। প্রতিটি ট্রেনের সাথে অতিরিক্ত বগি সংযোজন করা হচ্ছে। সিট ছাড়াও যাত্রীদের কাছে টিকিট বিক্রি করা হবে।
দূরপাল্লার বাসের অগ্রিম টিকিটও বিক্রি শেষ। পরিবহন কোম্পানির লোকজন জানান, ঈদে যাত্রীর তুলনায় দূরপাল্লার বাসের সংখ্যা একবারেই হাতেগোনা। সড়ক-মহাসড়কে যানজটের কারণে যথাসময়ে বাস গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। অগ্রিম টিকিট শেষ হলেও বাসপ্রাপ্তি সাপেক্ষে তাৎক্ষণিক টিকিট বিক্রি করা হবে। চট্টগ্রাম থেকে বৃহত্তর রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ অঞ্চলের বিভিন্ন রুটে যাত্রীর অতিরিক্ত চাপ থাকলেও নেই পর্যাপ্ত বাস।
চট্টগ্রাম নগরীর কদমতলী ও অলংকার মোড় থেকে বৃহত্তর নোয়াখালী ও কুমিল্লার দেড় শতাধিক রুটের বাস চলাচল করে। নানা অজুহাতে এসব বাসের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। আসার পথে খালি আসতে হচ্ছে, পথে পথে চাঁদা গুনতে হচ্ছে এমন সব অজুহাতে ভাড়া বাড়ানোর যুক্তি তুলে ধরছেন পরিবহন সার্ভিসের কর্মীরা। নগরীর স্টেশন রোড, বিআরটিসি বাস টার্মিনাল, বায়েজিদ, এ কে খান গেট, ইপিজেড মোড়সহ কয়েকটি পয়েন্ট থেকে দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যাচ্ছে। এসব বাসেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে প্রতিটি রুটে তিনশ’ থেকে পাঁচশ’ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে বিলাসবহুল কোনো বাসে টিকিট নেই। অগ্রিম বিক্রি হয়ে গেছে এসব বাসের টিকিট। রেন্ট-এ কারের গাড়ি ভাড়াও বাড়ানো হয়েছে। এতে করে মানুষ চরম বিপাকে পড়েছে।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর মহানগরী বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে জনসংখ্যা প্রায় ৬০ লাখ। যাদের বেশিরভাগ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেছে। চাকরি, ব্যবসাসহ নানা কাজে তারা এই মহানগরীতে বসবাস করছেন। কিন্তু প্রতি বছর ঈদে প্রিয়জনদের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করতে তারা ছুটে যান আপন ঠিকানায়। আজ বৃহস্পতিবার অফিস শেষে সরকারি অফিসে ছুটি শুরু হবে। টানা ৯ দিনের সরকারি ছুটি উপভোগ করতে সরকারি চাকরিজীবীরা আজ থেকে গন্তব্যে ছুটবেন। দেশের সর্ববৃহৎ ইপিজেড চট্টগ্রাম ইপিজেড ও কর্ণফুলী ইপিজেডের বিভিন্ন কারখানায় সোমবার এবং মঙ্গলবার থেকে শুরু হবে ঈদের ছুটি। তখন ঘরমুখো মানুষের ¯্রােত নামবে রাস্তায়।
ঈদে ঘরে ফেরা মানুষের এই ¯্রােতকে কেন্দ্র করে পরিবহন মালিকেরা রীতিমতো ভাড়া নৈরাজ্য শুরু করেছে। ভাড়া নৈরাজ্য প্রতিরোধে তাই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার দাবি উঠেছে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, দেশে চলাচলরত যাত্রীদের চাহিদার বিপরীতে স্বাভাবিক সময়ে গণ-পরিবহনে ৩৭.৪৪ শতাংশ ঘাটতি রয়েছে। প্রতি বৃহস্পতিবার বা জোড়া সরকারি ছুটির আগের দিন এই ঘাটতির আকার ৫১.৩২ শতাংশে পৌঁছায়। প্রতি ঈদে ২২ রমজান থেকে ২৭ রমজান পর্যন্ত এই গণপরিবহনে ঘাটতির আকার ৮৭.৮৯ শতাংশ হলেও ২৭ রমজান থেকে ঈদের দিন পর্যন্ত বিদ্যমান গণপরিবহনের ৬ গুণ বেশি যাত্রী যাতায়াত করে থাকে। এই সময় যাত্রীদের চাহিদার তুলনায় গণপরিবহনের সংকট দাঁড়ায় ২২২.৬৪ শতাংশ পর্যন্ত। এই সংকটকে পুঁজি করে ঘটে থাকে নানা অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা ও হয়রানি। প্রকৃতপক্ষে গণপরিবহনের চাহিদার বিপরীতে বিশাল ঘাটতি সামাল দিতে গিয়ে প্রশাসন, পুলিশ, মালিক সমিতি, শ্রমিক সমিতিকে গলদঘর্ম হতে হয়।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাবে এবারের ঈদে লম্বা ৯ দিনের ছুটিতে চট্টগ্রাম মহানগর থেকে ৩১ লাখ মানুষ দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যাবে। এর মধ্যে ৬০ হাজার যাত্রী বিদেশে ঈদ করবে, ১৬ লাখ যাত্রী চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন উপজেলায়, বাকি ১৪ লাখ যাত্রী দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করবে। এর মধ্যে শুধু ভোলা বা বরিশালে যাবে ৩ লাখের বেশি যাত্রী।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চলমান উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে বিভিন্ন স্পটে রাস্তার সৃষ্ট গর্ত, চট্টগ্রাম মহানগরীতে চলমান ফ্লাইওভার নির্মাণ, কালুরঘাট সেতু, চট্টগ্রাম- হাটহাজারী রোডে বিভিন্ন স্পটে রাস্তার ওপর বসা হাটবাজার এবারের ঈদযাত্রায় ভোগান্তি বাড়াবে। নৌপথে লঞ্চ সংকট। চট্টগ্রাম থেকে বরিশাল রুটে সরাসরি যাত্রী পরিবহন বন্ধ দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে। বরিশাল অঞ্চলের যাত্রীরা চট্টগ্রাম থেকে সড়ক পথে ল²ীপুর হয়ে নৌপথে বাড়ি ফিরছে। এতে করে তাদের কয়েক গুণ বেশি ভাড়া গুনতে হচ্ছে। তাছাড়া নৌপথে নেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা। চট্টগ্রাম থেকে স›দ্বীপ রুটে যাত্রীদের সবার জন্য লাইফ জ্যাকেট দাবি করেছে একটি সংগঠন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন