ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসছে সিরাজগঞ্জের রেলসেবা। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে শহরের বাজার রেলওয়ে স্টেশন হয়ে চলাচল করা একমাত্র লোকাল ট্রেন। কেটে নেয়া হয়েছে সিরাজগঞ্জ-ঢাকা রুটে চলাচলকারি আন্তঃনগড় সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের এসি বগি। এছাড়াও স্টেশনে অনলাইন টিকেটিং ব্যাবস্থা না থাকা, জনবল সংকটসহ ট্রেন চলাকালিন নানা অব্যবস্থাপনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন যাত্রিরা। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের এসব সমস্যা সমাধানে কার্যকর কোন উদ্যোগ না থাকায় নিরাপদ ও আরামদায়ক রেলসেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন সিরাজগঞ্জবাসি। সিরাজগঞ্জ বাজার, জামতৈল ও শহীদ এম মনসুর আলী রেলওয়ে স্টেশন, সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেসের যাত্রি ও স্বার্থরক্ষা সংগ্রাম কমিটি সূত্র জানায়, ১৯১৫ সালে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ চালু হবার পর ব্রিজ থেকে সিরাজগঞ্জ বাজার পর্যন্ত রেল লাইন নির্মিত ও রেল যোগাযোগ শুরু হয়। এর কিছুদিন পর টাঙ্গাইলের জগন্নাথগঞ্জ ঘাট থেকে ঢাকার কমলাপুর রেলসংযোগ চালু হলে বাংলাদেশের রেল নেটওয়ার্কে সিরাজগঞ্জের গুরুত্ব বেড়ে যায় বহুগুন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হবার পর শহরের ৭ কিলোমিটার বাইরের সদানন্দপুর শহীদ এম মনসুর আলী রেলওয়ে স্টেশন ব্যবহার করে ঢাকা-উত্তর-দক্ষিনবঙ্গে ট্রেন চলাচল করতে থাকে। এতে রেল নেটওয়ার্কে গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার স্টেশনগুলি। এক সময় সিরাজগঞ্জ শহরের সকল রেল যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়।
এ অবস্থায় রেলসেবা বঞ্চিত সিরাজগঞ্জবাসি স্বার্থরক্ষা সংগ্রাম কমিটির ব্যানারে ২০০০ সাল থেকে ‘হয় রেল-নয় জেল’ স্লোগানে আন্দোলন শুরু করে। এ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ২০০৯ সালের ৯ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিরাজগঞ্জ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ মাঠের জনসভায় সিরাজগঞ্জকে রেলনেটওয়ার্কের আওতায় আনার ঘোষণা দেন। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার বাস্তবায়ন করতে ২০১৩ সালের ২৭ জুন সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস চালু হয়। ঐ সময়ে পুরাতন ইঞ্জিন ও বগি সম্বলিত ট্রেনটি সকাল ৭ টায় পাবনার ঈশ্বরদি থেকে ছেড়ে বেলা ১০টায় সিরাজগঞ্জ বাজার হয়ে ঢাকার কমলাপুরে যাতায়াত শুরু করে। যাত্রি আকৃষ্ট করতে ব্যর্থ হওয়ায় আবারও ২০১৫ সালের ১৩ ডিসেম্বর ট্রেনের সময় ও রুট পরিবর্তণ করে ভোর ৬ টায় সিরাজগঞ্জ বাজার থেকে যাত্রা শুরু করে সরাসরি ঢাকায় আবার বিকেল পাঁচটায় ঢাকার কমলাপুর থেকে ছেড়ে রাতে সিরাজগঞ্জ বাজারে আসা যাওয়া শুরু করে। যাত্রি সুবিধার কথা মাথায় রেখে সময়সূচি পরিবর্তন ও নতুন কোচ সংযোজন করায় সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে ও লাভজনক ট্রেন হিসেবে চলতে শুরু করে।
অদৃশ্য কারনে আচমকা ২০১৭ সালে সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস থেকে কিছু জনবল ও এসি স্পিপার কোচ প্রত্যাহার করা হয়, একই সাথে প্রত্যাহার করা হয় সিরাজগঞ্জ বাজার রেলওয়ে স্টেশনের জনবলও। একই সময়ে নতুন আসন বন্টন করা হয়। নতুন বন্টনে প্রারম্ভিক স্টেশন সিরাজগঞ্জ থেকে আসন সংখ্যা কমিয়ে তা বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব, টাঙ্গাইল ও জয়দেবপুর স্টেশনের অনুকুলে প্রদান করা হয়। সর্বশেষ একটি ইঞ্জিন, দুটি পাওয়ার কার, একটি এসি বগি ও আটটি শোভন চেয়ার শ্রেনীর বগি নিয়ে চলাচল করছিল আন্তঃনগড় সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেন। এর মধ্য থেকে গত ২২ ডিসেম্বর এসি বগি কেটে নেয়া হয়। বর্তমানে ট্রেনের প্রারম্ভিক স্টেশন শহরের বাজার রেলওয়ে স্টেশনের অনুকুলে টিকিট বরাদ্দ রয়েছে মাত্র ২১০টি। কেটে নেয়া এসি বগি আদৌ ফেরত আসবে কিনা তার কোন সদুত্তর নেই এই স্টেশন কর্মকর্তাদের কাছে।
আন্তঃনগড় সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস ছাড়াও বাজার রেলওয়ে স্টেশন হয়ে ঈশ্বরদি রুটে একটি মাত্র লোকাল ট্রেন চলাচল করত দীর্ঘদিন যাবৎ। প্রতিদিন বিকেল সাড়ে পাঁচটায় বাজার রেলওয়ে স্টেশনে পৌছে রাত পৌনে সাতটার দিকে ঈশ্বরদির উদ্দেশ্যে ছেড়ে যেত। এই ট্রেনে বিভিন্ন পণ্যসহ যাত্রি সাধারণ পাবনার ঈশ্বরদি পর্যন্ত যাতায়াত সুযোগ পেত। কিন্তুগত ৯ জানুয়ারি থেকে ‘রাজশাহি এক্সপ্রেস-সিক্স আপ’ নামক লোকাল ট্রেনও প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। এর ফলে বর্তমানে শুধু একটি আন্তঃনগড় ট্রেনের মাধ্যমেই রেলসেবা পাবে সিরাজগঞ্জ বাসি। এছাড়া শহরের বাজার রেলওয়ে স্টেশনে অনলাইন টিকেটিং এর ব্যবস্থা না থাকায় বিরম্বনায় পড়তে হচ্ছে যাত্রিদের।
অভিযোগ রয়েছে একই সিট ভুলবশত: একাধিকবার বিক্রি হয়। এছাড়া এ স্টেশন পরিচালনার ক্ষেত্রে জনবলেরও ঘাটতি রয়েছে, নেই কোন স্টেশন ম্যানেজার।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ বাজার রেলওয়ে স্টেশনের বুকিং সহকারি আশরাফুল আলম বলেন, যান্ত্রিক ত্রæটির কারনে অপসারন করা সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের এসি বগি কবে নাগাদ আবারও যুক্ত হবে এ বিষয়ে আমাদের কাছে কোন তথ্য নেই। আর লোকাল ট্রেন চুক্তিভিত্তিতে ব্যক্তি মালিকানায় চলাচল করে। এটি বন্ধ রয়েছে, তবে কেন বন্ধ তারও কোন সঠিক তথ্য আমাদের কাছে নেই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন