রাজধানীর যাত্রাবাড়ী কুতুবখালী এলাকার একটি বাড়িতে মালা (১০) নামের এক গৃহকর্মীকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। আর অভিযুক্ত গৃহকর্তীর নাম দিলারা। সে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের নার্স। এ ঘটনায় নার্স দিলারার স্বামী রাজিবকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গৃহকর্তী পলাতক রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। গত শুক্রবার দিবাগত রাতে শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ। নির্যাতনের শিকার ওই গৃহকর্মী পটুয়াখালী জেলার দশমিনা উপজেলার হাজিরা গ্রামের রমিজ মিয়ার মেয়ে। তার মায়ের নাম কল্পনা আক্তার। যাত্রাবাড়ী থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, এই ঘটনায় শিশুটির খালা সুমা বাদি হয়ে গত রাতে একটি মামলা দায়ের করেছে। গৃহকর্তা রাজিবকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গৃহকর্ত্রী দিলারাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
ঢাকা মেডিকেল বার্ন ইউনিটের বিভাগীয় প্রধান ডা. বিধান সরকার জানান, আমাদের নার্সের হাতেই শিশুটি নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এরই মধ্যে তার স্বামী গ্রেফতার হয়েছে। আমাদের হাসপাতালের পরিচালক বিষয়টি পর্যালোচনা করছেন। অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।মালা সাংবাদিকদের জানান, দুই বছর আগে কুতুবখালী ডাক্তার বাড়ির পাঁচতলায় রাজিব ও দিলারার বাসায় গৃহকর্মীর কাজে দেয় তার মা। মাসে তাকে দুই হাজার টাকা বেতন দিত। কাজে ভুল হলে বিভিন্ন সময় নার্স দিলারা তাকে মারধর করত। ১০/১২ দিন আগে তাদের বাসার ফ্রিজ থেকে একটি দেশি মুরগি পাওয়া যাচ্ছিল না।
মালা মুরগিটি নিয়ে কাউকে দিয়ে দিয়েছে ভেবে তাকে মারধর করে। এরপর গত ১০ জানুয়ারি রাতে নার্স দিলারা তার মুখে হাসপাতালের রোগীদের ব্যবহৃত স্কচটেপ দিয়ে বেঁধে গরম খুন্তি দিয়ে তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছ্যাঁকা দেয় ও মারধর করে। এরপর শিশুটি নির্যাতন থেকে বাঁচতে মিথ্যা অভিযোগের দায় স্বীকার করে নেয়। পরে তাকে ছেড়ে দিলেও নির্যাতনের কথা কাউকে নিষেধ করে। শিশুটি আরো জানায়, এরপর সে ওই বাসায়ই ছিল। তাকে কোথাও বের হতে দেয়নি। গত শুক্রবার সকালে নার্স দিলারা তাকে দোকান থেকে পান আনতে পাঠালে সে পালিয়ে যাত্রাবাড়ীর ধনিয়া এলাকায় এক আত্মীয়র বাসায় যায়। পরে তারাই পুলিশকে খবর দেয়।
ওই শিশু গৃহকর্মীর খালা সাংবাদিকদের জানান, সপ্তাহখানেক আগে রাজিব গ্রাম থেকে দুটি মুরগি নিয়ে আসেন। তার একটি তারা রান্না করে খান এবং অন্যটি বাসার ফ্রিজে রেখে দেন। শুক্রবার মুরগিটি না পেয়ে চুরির অভিযোগ এনে স্বামীর সহায়তায় দিলারা মেয়েটিকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন চালায়। তার দুই পায়ের উরুতে খুন্তি দিয়ে ছ্যাঁকা দেয় ও মারধর করে। আমরা এর বিচার আশা করি।
হাসপাতালে ডিউটিরত কয়েকজন নার্স সাংবাদিকদের বলেন, এটা অমানবিক, মেনে নেওয়া যায় না। সে যতই আমাদের সহকর্মী হোক, তার বিচার হওয়া দরকার। তার কাছ থেকে হাসপাতালের রোগীরা কি সেবা পেতে পারে? নির্যাতনের শিকার মালার পাশের বিছানার এক রোগীর স্বজন বলেন, গত শুক্রবার রাতে মেয়েটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। মেয়েটির কাছে শুনলাম হাসপাতালের এক নার্স তাকে নির্যাতন করেছে। এরাইতো পোড়া রোগীদের সেবা করে। এরা আবার গরম খুন্তি দিয়ে নির্যাতন করেছে। বিষয়টি বেশ কষ্টদায়ক। এদের বিরুদ্ধে আইনগত কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা উচিত।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন