রাজধানীর কুড়িল ফ্লাইওভারের পৃথক স্থান থেকে দু’জনের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় এক মাসেও জড়িতদের গ্রেফতার বা হত্যাকান্ডের ক্লু উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। ফলে এখনও নিহতের পরিবার জানতে পারেনি কেন এবং কারা ওই ব্যক্তিদের নির্মমভাবে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করেছে। আইন-শৃংখলা বাহিনী দ্রæত জড়িতদের গ্রেফতার করে হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটত করতে পারবে বলে নিহতদের পরিবারের সদস্যরা আশা করছেন।
গত ৯ ডিসেম্বর দিনগত রাত আড়াইটার দিকে ভাটারা থানাধীন কুড়িল ফ্লাইওভারের ওপর থেকে গলায় গামছা প্যাঁচানো অবস্থায় স্বর্ণ কারিগর আক্তার হোসেনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। উদ্ধারের পরপরই পুলিশ সাংবাদিকদের জানিয়েছিল, ধারণা করা হচ্ছে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। গত ৩ জানুয়ারি দিনগত মধ্য রাতে খিলক্ষেত এলাকায় কুড়িল ফ্লাইওভারের ওপর থেকে গলায় মাফলার প্যাঁচানো অবস্থায় মনির হোসেন নামে এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে নিহতের স্ত্রী হাসপাতাল মর্গে লাশ শনাক্ত করেন।
তদন্তের সাথে জড়িত পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ওই দুই ব্যক্তিকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার পর কুড়িল ফ্লাইওভারের পৃথক স্থানে গলায় গামছা প্যাঁচানো অবস্থায় লাশ ফেলে রেখে যায় দুর্বৃত্তরা। হত্যার রহস্য উদঘাটন ও জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
ভাটারা থানার ওসি মুক্তারুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, স্বর্ণ কারিগর আক্তার হোসেন হত্যাকান্ডের ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত বা ক্লু উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি। আমরা কাজ করছি। আশা করি শিগগিরই হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন হবে। তিনি জানান, ওই ফ্লাইওভারের ওপরে কোনো সিসি ক্যামেরা নেই। ফ্লাইওভারের বাতিগুলোও জ্বলে না। তিনি আরো জানান, নিহতের স্বজনদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তাদের সঙ্গে কারো দ্ব›দ্ব ছিল না। অন্য কারো সঙ্গেও তাদের কোনো দ্ব›দ্ব ছিল না। তবে আমরা বিভিন্নভাবে তদন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।
মনির হোসেন হত্যাকান্ডের বিষয়ে খিলক্ষেত থানার ওসি বোরহান উদ্দিন জানান, এ হত্যাকান্ডের বিষয়ে পুলিশ এখনো কাজ করে যাচ্ছে। হত্যাকান্ডের কারা জড়িত ছিল সেটি উদঘাটন করতে তদন্ত চলছে।
তিনিও বলেন, ফ্লাইওভারের ওপর কোনো সিসি ক্যামেরা নেই। তাছাড়া ফ্লাইওভারের বাতিগুলো সব সময় নষ্ট থাকে। অন্ধকার থাকে। কারা এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে তা তদন্তের পর জানা যাবে।
নিহত মনির হোসেনের স্ত্রী শাহনাজ পারভীন হ্যাপির জানান, তার স্বামীর সঙ্গে কারো কোনো দ্ব›দ্ব ছিল না। কারা তার স্বামীকে হত্যা করেছে তা তিনি বুঝতে পারছেন না। দুই সন্তানকে নিয়ে তিনি আশুলিয়ার জিরাবো এলাকায় থাকেন বলে জানান। কাজ করেন একটি পোশাক কারখানায়। তার স্বামী উত্তরায় সততা টেইলার্সে চাকরি করতো।
তিনি জানান, গত ৩ জানুয়ারি তার স্বামী বাসা থেকে কাজে বের হয়ে যায়। সেদিন অল্প অল্প বৃষ্টি ছিল। গলায় মাফলার দিয়ে বেরিয়েছিল। রাত ৯টার দিকে তার সঙ্গে শেষ কথা হয়। স্বামী তাকে জানান ফিরতে দেরি হবে। পরে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। পরের দিন বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করে না পেয়ে ৫ তারিখে তিনি উত্তরা থানায় যান। সেখানে একটি পত্রিকায় লাশ উদ্ধারের খবর দেখে এবং লাশের পরনের কাপড়ের সঙ্গে স্বামীর কাপড়ের মিল পান। সঙ্গে সঙ্গে থানায় অফিসারকে জানান।
পরে ঢাকা মেডিক্যালের মর্গে তিনি স্বামীর লাশ শনাক্ত করেন। খুনীদের দ্রæত শনাক্ত করে গ্রেফতারের দাবি জানান তিনি।
নিহত আক্তার হোসেনের বাবা মফিজুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, গত ৭ ডিসেম্বর রাত ১২টার দিকে ছেলে তাকে কল দিয়ে কী লাগবে জানতে চেয়েছিলো। তিনি একটা গামছা আর একজোড়া নরম স্যান্ডেল আনতে বলেছিলেন। এটাই ছিল ছেলের সঙ্গে তার শেষ কথা। তিনি জানান, ছেলেকে কে হত্যা করলো, কেন হত্যা করলো কিছুই বুঝতে পারছেন না। ঢাকার ভাটারা সলমাইড খন্দকার বাড়ি এলাকায় একটি জুয়েলার্স দোকানে কাজ করতো আক্তার। জড়িতদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন