মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার পাল্লাতল চা বাগানে স্ত্রী,শাশুড়ি ও দুই প্রতিবেশীকে হত্যা করে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন নির্মল নামে এক ব্যক্তি। নির্মল পারিবারিক কলহের জের ধরে তাদেরকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৫ জনের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
ঘটনার খবর শোনে ঘটনাস্থলে আসেন বিজিপি,পুলিশ,র্যাব, পিবিআই পুলিশ ও সিআডিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও গণমাধ্যমকর্মীরা। সীমান্তবর্তী পাহাড়ী নির্জন এলাকায় এই প্রথম নির্মম লোমহর্ষক এই ঘটনায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। শোকে মোহমান পাল্লারতল চা বাগানের শ্রমিক,কর্মচারী ও এলাকাবাসী। ঘটনার পর থেকে পাল্লাতল বাজার ঠিলা লাইনের ওই বাড়িতে আসছেন তারা।
পাল্লাতল চা বাগানের টিলায় পাশাপাশি ২টি ঘরে বসবাস করতেন চা শ্রমিক নির্মল কর্মকার (৩৮) ও প্রতিবেশী বসন্ত ভক্তা (৫২) পরিবার নিয়ে। রোববার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে নির্মল ও তার স্ত্রী জলি বুনার্জি (৩৪) এর মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়। একপর্যায়ে জলিকে মারধর করতে থাকলে জলি দৌড়ে প্রতিবেশী বসন্তের ঘরের সামনে গিয়ে চিৎকার করে। এ এময় নির্মল ক্ষিপ্ত হয়ে স্ত্রী ও শাশুড়ী লক্ষী বুনার্জী (৪৮)কে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপাতে থাকে। চিৎকার শুনে বসন্ত ঘর থেকে বের হয়ে ঝগরা থামাতে চাইলে তাকে ও তার মেয়ে শিউলি ভক্তা (১১) কে কুপাতে থাকে নির্মল। এসময় ধারালো অস্ত্র আঘাতে ৪ জন নিহত হন। ওই ৪ জনের মৃত্যু হলে নির্মল বসন্তের ঘরে গিয়ে আত্মহত্যা করে বলে এলাকা বাসি ও পুলিশ জানায়। এ ঘটনায় বসন্তের স্ত্রী শুরুত্বর আহত হয়ে সিলেট ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সিকিৎসাধীন রয়েছেন।
মৌলভীবাজারে পুলিশ সুপার ফারুক আহমদ পিপিএম (বার) বলেন খবর শোনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে পারিবারিক কলহের জের ধরে এঘটনা ঘটেছে। তবে আরো অধিকতর তদন্তের পর বিস্তারিত বলা যাবে।
স্থানীয়রা জানান নির্মল ও জলি দুজনরেই এটি ছিল ২য় বিয়ে। প্রায় বছর খানেক আগে তাদের বিয়ে হয়। তাদের নিজেদের কোন সন্তান ছিলনা। চন্দ্রনা ছিল জলির আগের স্বামীর সন্তান। জলির বাবা বিষ্ণু বুর্নাজী দীর্ঘদিন থেকে নিজ বাড়িতে না থেকে তার আরেক মেয়ের বাড়িতে থাকেন। বিষ্ণু বুর্নাজীর দুই মেয়ের মধ্যে জলি বুর্নাজী তার স্বামী নির্মল কর্মকার, মা লক্ষী বুর্নাজী ও চন্দ্রনা কে নিয়ে বাবার বাড়িতে থাকতেন।
ভোর ৫টার দিকে নির্মল ও জলির মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়। একপর্যায়ে জলিকে মারধর করতে থাকলে জলি দৌড়ে অন্য ঘরে চলে আসে। তখন নির্মল ধারালো অস্ত্র দিয়ে জলিকে কোপাতে থাকে। মেয়েকে রক্ষা করতে শাশুড়ি ছুটে আসলে তাঁকেও কোপায় নির্মল। এরপর বসন্ত ও শিউলি সেখানে আসলে দুজনকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে নির্মল। পরে চারজনের মৃত্যু নিশ্চিত হলে নির্মল নিজের ঘরে গিয়ে আত্মহত্যা করে।
সিআইডি পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সিলেট জুন) অপূর্ব সাহা জানান আমরা আলামত সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করছি যাতে পরবর্তী তদন্ত কাজে আসে। ঘটনাস্থল কর্ডন করে রেখেছে সিআইডি পুলিশ।
পিবিআই পুলিশের মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম জানান আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রাথমিক ভাবে পারিবারিক কলহের কারণে এ হত্যাকান্ড ঘটেছে। তবে প্রাথমিক ভাবে ধারনা করা হচ্ছে নির্মল হত্যাকান্ড ঘটিয়ে নিজে আত্মহত্যা করেছে। সে এলাকার লোকদের সাথে কতাবার্তা বলত কম। নির্মল অনেকটা মানুষিক বিকারগ্রস্থ ও মাদকাসক্ত ছিল। তবে ঘটনার সাথে অন্য কিছু আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হবে।
চাঞ্চল্যকর এ হত্যা কান্ডের ঘটনার পর চা বাগান সহ পূরো জেলা জুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন