উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা নীলফামারীর ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। একই সঙ্গে ঘন কুয়াশায় মানুষের মাঝে ভোগান্তি নেমে এসেছে। ঠান্ডা বাতাসে জবুথবু অবস্থা সর্বস্তরের মানুষের। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মতো ঝরছে কুয়াশা। দুদিন ধরে সূর্যের দেখা মেলেনি।
গতকাল নীলফামারীতে সর্বনিম্ন ৭ দশমিক ৪ ও সর্বোচ্চ ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিসের সহকারী কর্মকর্তা মো. লোকমান হাকিম এ তথ্য জানিয়েছেন।
লোকমান হাকিম বলেন, গত বুধবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১৮ ডিগ্রি। বুধবার ছিল মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। গতকাল তাপমাত্রা কমে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহে রূপ নিয়েছে। এজন্য শীত জেঁকে বসেছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন জেলার সর্বস্তরের মানুষ।
তিনি আরও বলেন, গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামী ২৪ ঘণ্টায় এই আবহাওয়া অব্যাহত থাকতে পারে।
জেলা সদরের রামনগর ইউনিয়নের বাহালিপাড়া গ্রামের বৃদ্ধ জব্বার আলী (৭৩) বলেন, ছিদ্র দিয়ে আমার ঘরে বাতাস ঢোকে। কাঁথা গায়ে দিয়েও শীত নিবারণ করা যায় না। রোদ নেই। ঠান্ডায় ঘর থেকে বের হতে পারছি না। এবার শীতের কাপড় পাইনি আমরা। টাকার অভাবে শীতবস্ত্র কিনতে পারিনি।
একই গ্রামের বৃদ্ধা আমাজন বেগম (৭৫) বলেন, আমাদের ভাঙা ঘর। শীতে ভাঙা ঘরে বাতাস ঢুকে শরীর ঠান্ডা করে দেয়। শীতের তীব্রতায় ঘুমাতে পারছি না আমরা। কিছুক্ষণ পরপর আগুন পোহাই। এবার আমাদের গ্রামে কেউ শীতবস্ত্র দিতে আসেনি। অনেক কষ্টে আছি বাবা।
এদিকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহে চরম দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করছেন তিস্তাপারের মানুষ। বিকেল ৪টা বাজলেই এখানে রাত শুরু হয়ে যায়। ঘন কুয়াশায় রাস্তাঘাট কিছুই দেখা যায় না। চারদিকে অন্ধকার। এ অবস্থায় গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন স্থানীয়রা। গরু-ছাগলকে শীত থেকে রক্ষায় পাটের বস্তা জড়িয়ে রাখা হয়েছে। ঠান্ডায় জবুথবু হয়ে আছে ওসব গবাদিপশু।
ঝুনাগাছা চাপানি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান বলেন, সরকারিভাবে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। স্থানীয় উদ্যোগে এক হাজার পরিবারকে শীতবস্ত্র দেয়া হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন থেকে সরকারিভাবে ৯ হাজার ৭শ’ কম্বল দেয়া হয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মেজবাহুর রহমান বলেন, সরকারিভাবে ১০টি ইউনিয়নের এক হাজার নিম্নআয়ের মানুষ ও ভিক্ষুকদের একটি করে কম্বল এবং শুকনা খাবার দেয়া হয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা এসএ হায়াত বলেন, নীলফামারীর ছয় উপজেলায় এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে ৫৭ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। তবে এখনও কম্বল বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন