শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সকল বন্দরে স্ক্যানার মেশিন বসানো হয়েছে

করোনাভাইরাস নিয়ে সংসদে স্বাস্থ্যমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৭ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০০ এএম

ভয়াবহ করোনাভাইরাস চিহ্নিত করতে স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরে স্ক্যানার মেশিন বসানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, স্ক্যানারের মাধ্যমে মানুষের শরীরের তাপমাত্রা দেখে করোনাভাইরাস সনাক্ত করা সম্ভব হবে।

গতকাল রোববার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রেসিডেন্ট ভাষণের উপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাব নিয়ে সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি একথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে মন্ত্রী চীনে করোনা ভাইরাসের বিস্তারে ভয়াবহ পরিস্থিতিতে সরকারের গৃহীত জরুরী পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস রোধে আমরা জনসচেতনার ব্যবস্থা করেছি। আন্ত:মন্ত্রণালয় সভাও ডেকেছি। বিমানবন্দরে যারা বিমানে করে আসবেন তাদের একটা ফরম দেওয়া হবে। তারা ফরম পুরণ করে জমা দিবে এবং একটি কার্ডও সাথে নিয়ে যাবে। যাতে পরবর্তিতে যদি সে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে আমরা সনাক্ত করতে পারি। ইতোমধ্যে ট্রিটমেন্ট ব্যবস্থা করেছি, করেনটাইন এরিয়াও তৈরি করেছি। সারাদেশে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, তৃণমূলের জনগণের জন্য স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা হয়েছে।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা ও যুপোপযোগী পদক্ষেপে স্বাস্থ্য সেবার ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। গ্রামের মানুষ ঘরে বসে জরুরী অনেক সেবা পাচ্ছে। এরপরও বর্তমানে চিকিৎসক সঙ্কট রয়েছে। এই সংকট নিরসনে এ বছর সাড়ে ৫ হাজার ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া হবে। ১৫ হাজার নার্স নিয়োগের অনুমোদন হয়েছে। শিগগিরই নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে। হাসপাতালগুলোতে প্রায় ৮ হাজার বেড বাড়ানো হবে। ২০ হাজার মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগ দেওয়া হবে।

মন্ত্রী বলেন, দেশের বড় বড় ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালগুলোতে ঢাকার বাইরে থেকে আসা লোকজন বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে। তাদের সহযোগিতার জন্য হেল্প ডেস্ক স্থাপনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। হাসপাতালে পাবলিক টয়লেটের সংখ্যা বাড়িয়ে পৃথক স্থানে করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মেডিকেল কলেজ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, পুরনো সব কমিউনিটি ক্লিনিক ভেঙে আরো বেশি সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন নতুন ডিজাইনের ভবন তৈরি করা হচ্ছে। হাসপাতালের বর্জ্য বাইরে না ফেলার ব্যাপারে জেলা ও উপজেলার হাসপাতালগুলোকে মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।

চীন ভ্রমণ সিদ্ধান্তে জরুরি আন্তঃমন্ত্রনালয় বৈঠকের নির্দেশ
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যানমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, চীন-বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক অনেক গভীর। দেশর বহুসংখ্যক মানুষ বাণিজ্যিক কারনে চীনে যাতায়াত করছে। সুতরাং চীনে পাওয়া নতুন (২০১৯-হঈড়ঠ) করোনা ভাইরাস বাংলাদেশে যেকোনো উপায়ে চলে এলে আমাদের জন্য বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে। এক্ষেত্রে আগামী ২৮ জানুয়ারি আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে চীনে ও চীন থেকে বাংলাদেশে সকল ধরণের ভ্রমন সাময়িকভাবে স্থগিত করার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হবে।

গতকাল রোববার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রনালয়ে আয়োজিত এক জরুরী বৈঠকে এসব কথা বলেন তিনি। আলোচিত (২০১৯-হঈড়ঠ) করোনা ভাইরাসে বাংলাদেশের জরুরি সতর্কতা গ্রহণ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে জরুরি এক সভা অনুষ্ঠিত হয়।

পাশাপাশি স্বাস্থ্যমন্ত্রী দেশবাসীকে কোনো রকম আতংকিত না হতে অনুরোধ করেছেন এবং করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয় সম্ভাব্য সব ধরণের প্রস্তুতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হাতে নিয়ে রেখেছে বলে জানিয়েছেন।
সভায় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আলী নূর, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিনের সভাপতি প্রফেসর ডা. আহমেদুল কবীরসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও চিকিৎসকগণ উপস্থিত ছিলেন।

সভায় চীন দেশে সম্প্রতি ধরা পড়া নতুন (২০১৯-হঈড়ঠ) করোনা ভাইরাস এর ব্যাপকতা নিয়ে আলোচনা হয়। রোগটি বর্তমানে কতটি দেশে পৌঁছে গেছে এবং কতজন আক্রান্ত ও মারা গেছেন সে বিষয়ে মন্ত্রী খোঁজ নেন। দেশের প্রতিটি বিমান-বন্দর, নৌ-বন্দরসমূহ, স্থল বন্দরসমূহে স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলে স্বাস্থ্য অধিদফরের মহাপরিচালক স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে অবগত করেন। সভায় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় জরুরি সভা করার ব্যাপারে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে অবহিত করেন। মন্ত্রী এ প্রসঙ্গে সহমত ব্যক্ত করে আগামী ২৮ জানুয়ারি বেলা ১২ টায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সক্রিয় অংশগ্রহণে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা আয়োজনের নির্দেশ প্রদান করেন।

সভায় বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিনের সভাপতি প্রফেসর ডা. আহমেদুল কবীর জানান, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির প্রাথমিক পর্যায়ে এই রোগ ধরা নাও পড়তে পারে। যেহেতু চীনে বহু সংখ্যক বাংলাদেশী শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছে। তারা সবাই এখন ফিরতে গিয়ে এই ভাইরাসের জীবানু বহন করে দেশে নিয়ে এলে তা আমাদের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে। কাজেই সাময়িক সময়ের জন্য বাংলাদেশ থেকে চীনে যাতায়াত ব্যবস্থা স্থগিতের উদ্যোগ নিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন