শনিবার, ২৫ মে ২০২৪, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৬ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

চীন ফেরতরা থাকবেন হজক্যাম্পে

‘জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০৩ এএম

চীনে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ২১৩

চীনের হুবেই প্রদেশের উহান নগরী থেকে ফিরে আসা ৩৬১ জন বাংলাদেশীকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে একটি বিশেষ বিমানে তারা দেশের মাটিতে অবতরণ করেন। বিমানবনদর থেকে বাসে করে তাদের সরাসরি আশকোনাস্থ হজক্যাম্পে নেয়া হয়। সেনাবাহিনী ও পুলিশ যৌথভাবে তাদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে। চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া নতুন (২০১৯-হঈড়ঠ) করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকে ‘বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-ডব্লিউএইচও। প্রাণঘাতী এ ভাইরাস চীনের বাইরেও ছড়িয়ে পড়া অব্যাহত থাকায় বৃহস্পতিবার এক জরুরি বৈঠকের পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ ঘোষণা দেয়। এদিকে দেশে এ পর্যন্ত নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোন রোগী পাওয়া না গেলেও চট্টগ্রাম থেকে সন্দহজনক দু’জনের নমুনা রোগতত্ত¡, রোগনিয়ন্ত্রন ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে এসেছে।
সূত্র মতে, চীনে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা এক দিনেই ১৭০ থেকে বেড়ে হয়েছে ২১৩ জনে পৌছেছে। নতুন করে দুই হাজার মানুষের দেহে প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে, কেবল চীনেই আক্রান্তের সংখ্যা ৯ হাজার ৭০০ জনে দাঁড়িয়েছে-এই তথ্য চীনের ন্যাশনাল হেলথ কমিশনের। আর চীনের মূল ভ‚খন্ডের বাইরে আরও ১৮ দেশে অন্তত ৯৮ জনের দেহে করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তবে চীনের বাইরে এ ভাইরাসে কারও মৃত্যুর তথ্য এখন পাওয়া যায়নি।
গতকাল রাতে চীনের উহান নগরী থেকে ফিরে আসা ৩৬১ জন বাংলাদেশী বর্তমানে রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্ধরের বিপরীত দিকে আশকোনাস্থ হজ ক্যাম্পে অবস্থান করছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশপাশি সেনাবাহিনীর মেডিকেল টিম ক্যাম্পে অবস্থানকারীদের সেবায় নিয়োজিত রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিমান থেকে তাদের সরাসরি বসে করে হজ নক্যাম্পে নিয়ে আসা হবে। তাদের ইমিগ্রেশন বিমানেরই সম্পন্ন করা হবে। এমনকি তাদের লাগেজও বিমান থেকে সরাসরি হজক্যাম্পে পাঠানো হবে। তিনি বলেন, চীনে এরা পর্যবেকক্ষণেই ছিল, তাছাড়া এদের প্রায় সবারই পরিক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। তারপরেও হজক্যাম্পে নিয়ে নারী ও শিশুদের থেকে অন্যদের পৃথক করা হবে। কারো শরীরে উচ্চতাপমাত্র বা করোনা ভাইরাসের মতো কোন উপসর্গ দেখা গেলে তাদেরকেও আলাদা করে রাখা হবে। আগত বাংলাদেশীদের মধ্যে যারা চীনে পর্যবেক্ষণে ছিলেন, সেটি গণনার মধ্যে এনে ১৪ দিন অবশিষ্ট হতে যে কদিন বাকী থাকে তাদের ততোদিন এখানে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। চিকিৎসা ও নিরাপত্তায় স্বাস্থ্য অধিদফতর ও পুলিশের পাশপাশি সেনাবাহিনীর সদস্যরা থাকবে।
এদিকে গতকাল সকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এক বৈঠক শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, চীনে প্রায় ৫ হাজারেরও অধিক মানুষজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় ১৭০ জনেরও বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। এছাড়া ১৭ টি দেশে এই রোগটি ছড়িয়ে পড়েছে। তবে বাংলাদেশে এ রোগের কোন প্রভাব নেই। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে একজনকে সন্দেহজনকভাবে ভর্তি রাখা হয়েছে। তার নমুনা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে, সেটা সম্পন্ন হলেই বোঝা যাবে।
জাহিদ মালেক বলেন, চীনের উহান প্রদেশ থেকে প্রায় ৩৬১ জন বাংলাদেশে ফিরে আসার জন্য আবেদন জানায়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তাদেরকে অতি দ্রæত ফিরে আনার ব্যবস্থা করা হয়। এখানে যারা ফেরত আসছে আমাদের জানামতে তারা কেউই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত নয়। তারপরও তারা তাদের পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। তারা নির্ধারিত সময় আশকোনার হজ ক্যাম্পে থাকবে। এ সময় তারা পরিবারের সদস্যসহ কারো সঙ্গে দেখা করতে পারবে না। পরিবারের সদস্যদের কাছে আমরা নিয়মিত খবরা-খবর প্রেরণ করব। তিনি বলেন, শুক্রবার বিকেল পাঁচটায় বিমান বাংলাদেশের একটি এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ বিমানে উহানে এই বাংলাদেশীদের ফেরত আনতে যাবে। বিকেল পাঁচটায় আমাদের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট সেখানকার উদ্দেশ্যে যাবে। আনুমানিক রাত দুইটার মধ্যে তাদেরকে নিয়ে বাংলাদেশে এই ফ্লাইটটি অবতরণ করবে। এই বিমানেও ৫ জন চিকিৎসক থাকবে যারা সম্পূর্ণরূপে প্রটেক্টেড থাকবে। এছাড়া এম্ব্যুলেন্স এর সকল সুযোগ সুবিধাও থাকবে এই বিমানে। ওই ৩৬১ জনকেও প্রটেক্টেড অবস্থায় বাংলাদেশে নিয়ে আসা হবে। এমনকি হজক্যাম্পেও তাদেরকে আলাদা ভাবে নিয়ে রাখা হবে। হজ ক্যাম্পে তাদেরকে ১৪ দিন রাখা অবস্থায় যদি তাদের কেউ অসুস্থ হয় তাহলে চিকিৎসার জন্য সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও উত্তরার কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালের কোয়ারেন্টাইন ওয়ার্ড প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নিরাপত্তা প্রদানের জন্য পুলিশ ও সেনাবাহিনী সর্বদা মোতায়েন থাকবে।
পর্যবেক্ষণে থাকাকালীন সময়ে আত্মীয়-স্বজনদের এসে দেখা করতে না চাওয়ার অনুরোধ জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বিদেশ ফেরত দেখার জন্য আত্মীয়-স্বজনরা ব্যাকুল হবেন সেটাই স্বাভাবিক। আমিস অনুরোধ করবো কেউ তাদের সাথে দেখা করতে চাইবেন না। তারা কেউ কারো সাথে দেখা করতে পারবেন না।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো আসাদুল ইসলাম, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।
বৈশ্বিক জরুরী অবস্থা : চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া নতুন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকে ‘বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রাণঘাতী এ ভাইরাস চীনের বাইরে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়া অব্যাহত থাকায় এক জরুরি বৈঠকের পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ ঘোষণা দেয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহা মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়সাস বলেছেন, চীনে যা ঘটছে, সেটাই এ সতর্কতা জারির মূল কারণ নয়। অন্য দেশে যা এখন ঘটছে, মূলত সে কারণেই আমরা সতর্কতা জারি করেছি। নতুন ধরনের এ করোনাভাইরাস বিভিন্ন দেশে ছড়িয়েছে প্রথমত চীন ফেরত ব্যক্তিদের মাধ্যমে। কিন্তু জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও ভিয়েতনামে ৮ জন এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, যারা কখনও চীনে যাননি। অর্থাৎ, সেখানে মানুষ থেকে মানুষে ছড়াতে শুরু করেছে এ ভাইরাস। যেসব দেশে রোগ নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসা ব্যবস্থা তুলনামূলকভাবে দুর্বল, সেসব দেশে মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণ শুরু হলে পরিস্থিতি কী হবে- মূলত সেই ভাবনা থেকেই বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা জারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
জেনিভায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে মহা মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়সাস বলেন, নতুন করোনাভাইরাসটি যেভাবে ছড়াচ্ছে তা ‘নজিরবিহীন’, আর যেভাবে সেটা সামাল দেওয়ার চেষ্টা চলছে, সেটাও আর ঘটেনি। মধ্য চীনের উহান শহরে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়। নিউমোনিয়ার মত লক্ষণ নিয়ে নতুন এ রোগ ছড়াতে দেখে চীনা কর্তৃপক্ষ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সতর্ক করে। এরপর ১১ জানুয়ারি প্রথম একজনের মৃত্যু হয়।
এ ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে চীন সরকার গৃহিত পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসাস। তিনি বলেছেন, বৈশ্বিক সতর্কতা জারির মানে এই নয় যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চীনের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর ভরসা রাখতে পারছে না। আর এই সতর্কতা জারির ফলে চীনের সঙ্গে ব্যবসা করা বা যাতায়াতেও কোনো সমস্যা নেই।
এদিকে করোনাভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহে চীন থেকে আসা চট্টগ্রামের দুই শিক্ষার্থীকে ফৌজদারহাটের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা গত ২৪ ও ২৫ জানুয়ারি চীন থেকে ঢাকায় এসেছিলেন। বুধবার রাতে এই দুই শিক্ষার্থী জ্বর ও সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হলে তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। খবর পেয়ে তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর বৃহস্পতিবার নমুনা হিসেবে তাদের মুখের লালা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ওই দুই রোগী করোনায় আক্রান্ত হয়েছে এমন নয়। কিন্তু তাদের শরীরে জ্বর, কাশি রয়েছে এবং তাদের চীন ভ্রমনের ইতিহাস রয়েছে। তাই আমরা তাদের নমুনা পরীক্ষা করছি।##

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন