শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

লাইফলাইনে অচলদশা

চট্টগ্রামে পোর্ট কানেকটিং রোড সংস্কারে ধীরগতি ব্যাহত আমদানি-রফতানি পণ্য পরিবহন

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০২ এএম

পোর্ট কানেকটিং (পিসি) রোড। নামেই তার পরিচয়। চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সংযোগ এর মাধ্যমে। আমদানি-রফতানি পণ্য দ্রুত পরিবহন করতে আশির দশকে এই সড়কটি নির্মাণ করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। তবে দেশের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটিতে এখন অচলদশা। ১৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে বন্দর নীমতলা থেকে অলঙ্কার পর্যন্ত মাত্র ছয় কিলোমিটার এই সড়কের সংস্কার কাজ শেষ হয়নি চার বছরেও। এতে আমদানি-রফতানি পণ্য পরিবহন থেকে শুরু করে সড়কের দুইপাশে ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই সড়কের দীর্ঘ অচলাবস্থা চট্টগ্রামেই শুধু নয় সারা দেশের পণ্য পরিবহন ও ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দরভিত্তিক আমদানি-রফতানি পণ্যবাহী যানবাহন চলাচলকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে জাইকার আর্থিক সহযোগিতায় বিগত ২০১৭ সালে শুরু হয় সংস্কার কাজ। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। আর কাজের মনিটরিং করছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে গেল বছরের জুনে। সর্বশেষ জানুয়ারি পর্যন্ত সময়সীমা দেয়া হলেও কাজ শেষ হয়নি। উল্টো আরও ছয় মাস চেয়ে বসেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ফলে কবে নাগাদ কাজ শেষ হবে তা অনিশ্চিত। মূল ঠিকাদারের বদলে অন্য ঠিকাদার দিয়ে কাজ করানোর ফলে এমন বেহাল দশা বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে এই সড়কটি অচল। দুর্ভোগে অতিষ্ঠ ব্যবসায়ী এবং স্থানীয় বাসিন্দারা দ্রুত কাজ শেষ করার দাবিতে মিছিল সমাবেশ ও মানববন্ধনও করেছেন। ছোট একটি সড়কের সংস্কার কাজে নজিরবিহীন ধীরগতিতে জন অসন্তোষ চরমে। সরকারের মন্ত্রী এমপিরাও এতে ক্ষুদ্ধ। সম্প্রতি চিটাগাং চেম্বারের এক গোলটেবিল আলোচনায় এলজিআরডি মন্ত্রী তাজুল ইসলাম চার বছরেও কাজ শেষ না হওয়ায় ক্ষোভ অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, এ ধরনের গাফিলতি মানা যায় না। একই অনুষ্ঠানে স্থানীয় সংসদ সদস্য এম এ লতিফ ওই এলাকার দুরাবস্থার চিত্র তুলে ধরে বলেন, চট্টগ্রাম শহরের অবস্থা এখন ছাগলনাইয়ার মতো। পদ্মা সেতু হয়ে যাবে তারপরও পিসি রোডের কাজ শেষ হবে কিনা সন্দেহ আছে।
চট্টগ্রাম বন্দরমুখি আমদানি-রফতানি পণ্যবাহী ট্রাক কার্ভাডভ্যান এই সড়ক হয়ে সারা দেশে চলাচল করে। ২০০৭ সালে বন্দর থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত টোল রোড নির্মাণ করা হলেও তাতে মূলত কন্টেইনারবাহী ভারি যানবাহন চলাচল করে। এছাড়া অন্যসব মালামালবাহী যানবাহন চলাচল করে পিসি রোড হয়ে। কর্ণফুলীর ১৬ ঘাটে লাইটার জাহাজ থেকে খালাস মালামালের প্রায় পুরোটা এই সড়ক হয়ে পরিবহন করা হয়।
সড়কের দুপাশে রয়েছে অসংখ্য ছোট বড় কারখানা। আছে সাগরিকায় বিসিক শিল্পনগরী। এসব কারখানার কাঁচামাল এবং উৎপাদিত রফতানি পণ্য বন্দর এবং কন্টেইনার ডিপোতে যায় এ সড়ক হয়ে। পাহাড়তলী হালিশহরের অসংখ্য ছোটবড় সরকারি বেসরকারি গুদামে আমদানি পণ্য আনা নেওয়া করা হয় এ সড়ক হয়ে।
চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম ইনকিলাবকে বলেন, পিসি রোড দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের অংশ। এই সড়ক অচল থাকার অর্থ অর্থনীতির লাইফলাইন অচল। এর প্রভাবে শুধু চট্টগ্রামে নয় সারাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।। আর ওই সড়কটির আশপাশে তো ব্যবসা-বাণিজ্য এখন নেই বললেই চলে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, তাদের ব্যবসা লাটে উঠেছে। অনেকে দোকানপাট বন্ধ করে দিয়েছেন। কেউ ব্যবসা গুটিয়ে অন্যত্র চলে গেছেন। যারা নিজেদের পুঁজি-পাট্টা রেখে কোথাও যেতে পারেনি তারা লোকসানের মুখে। টাইলসের দোকানের কর্মকর্তা কামরুল হোসেন বলেন, পিসি রোডের নাম শুনলেই মানুষ আৎকে উঠে। ব্যবসা চলবে কিভাবে। ক্রেতা অর্ধেকে নেমে এসেছে। বেশি বেকায়দায় পড়েছেন হোটেল-রেস্তোরাঁ ও খাবারের দোকানের মালিকেরা।
সরেজমিন দেখা যায়, নিমতলা থেকে সড়কের একাংশের কার্পেটিং শেষ হয়েছে হালিশহর ওয়াপদা অফিস পর্যন্ত। সেখান থেকে অলঙ্কার মোড় পর্যন্ত দুই অংশের কাজ এখনও বাকি। যে অংশে কাজ শেষ হয়নি সে অংশে নির্মাণ সামগ্রী আর সারি সারি যানবাহন রাখা হয়েছে। কাজ চলছে খুবই ধীরগতিতে। এ জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি ও অদক্ষতাকে দায়ী করে সিটি কর্পোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক বলেন, মূল ঠিকাদার ‘রানা বিল্ডার্স’ কাজ না করে ‘জাকির হোসেন’ নামে এক ঠিকাদারকে কাজ দিয়েছে। এই কারণেই মূলত কাজে কোন গতি আসছে না। বারবার সময় নিয়েও কাজ শেষ করতে পারছে না। নতুন করে আরও ছয় মাস সময় চেয়েছে ঠিকাদার।
জানা গেছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের উপর ত্যক্ত-বিরক্ত জাইকার কর্মকর্তারাও। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্তাদের দাবি, নানা বাস্তব কারণেই কাজে দেরি হচ্ছে।
এদিকে সড়কটির একপাশে যানবাহন চলতে গিয়ে তীব্র জটের সৃষ্টি হচ্ছে। এর প্রভাবে নগরীর একাংশ এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে জটের সৃষ্টি হচ্ছে। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক-বন্দর) তারেক আহমেদ বলেন, সড়কটি অচল থাকায় নগরীর বিশাল এলাকায় ট্রাফিক ব্যবস্থা নাজুক হয়ে পড়েছে। জানুয়ারি মাসে কাজ শেষ করে বন্দর-ইপিজেড এলাকায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শুরুর কথা ছিলো। এ কাজ শেষ না করে এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শুরু হলে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব হয়ে পড়বে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন