শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নির্দেশনা

চীন ঘুরে আসা পাইলটদের কোনো দেশে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০২ এএম

চীনের করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে জরুরি নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যেভাবেই হোক করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ করতে হবে। উহান থেকে যে ৩১২ জনকে দেশে আনা হয়েছে, তাদের অবশ্যই ১৪ দিন পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে। এ ব্যাপারে কোনও ছাড় নয় বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন।

এদিকে চীন ঘুরে আসা বাংলাদেশ বিমানের পাইলটদের অন্য কোনো দেশে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। ফলে তারা আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে নভেল করোনাভাইরাস নিয়ে বিশেষ আরেকটি সভা হয়। বৈঠকের পর মন্ত্রী ও কর্মকর্তাসহ ২৪/২৫ জনকে নিয়ে নিজের কার্যালয়ে বিশেষ এই বৈঠক করেন। বৈঠক শেষ সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সভাকক্ষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, চীনের উহানে এখনও ১৭১ জন শিক্ষার্থী আছেন। তাদের দেশে আনা হবে। কিন্তু তাদের আনতে দেশ থেকে বিমান পাঠানো যাবে না। কারণ যে বিমান পাঠানো হয়েছিল, তার পাইলট ও ক্রুদের সিঙ্গাপুরসহ অন্যান্য দেশ ভিসা দিতে চাচ্ছে না। একারণে বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়কে চার্টার্ড বিমান নিতে বলা হয়েছে। বিমান মন্ত্রণালয়ের সচিব মহিবুল হকও এই সভায় উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক প্রফেসর এম আবদুল্লাহও ছিলেন বৈঠকে। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, পরিষ্কার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বাংলাদেশের যেসব প্রকল্পে উহানের শ্রমিক আছে, এর মধ্যে যারা উহানে ফেরত গেছে, তাদের আর আসতে দেওয়া হবে না। তাদের ওয়ার্ক পারমিট আর নবায়ন করা হবে না। উহান থেকে ঢাকায় যে চারটি ফ্লাইট আসে, তারা খবু বেশি প্যাসেঞ্জার বহন করে না। তাই ইউএস বাংলাসহ অন্যান্য এয়ারলাইনগুলো নিজেরাই এসব ফ্লাইট বন্ধ করে দেবে।করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া চীনের উহান থেকে বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনা বাংলাদেশি পাইলটদের অন্য দেশ ঢুকতে দিচ্ছে না। ইতোমধ্যে সিঙ্গাপুর না করে দিয়েছে, চীনফেরত পাইলটরা তাদের দেশে ঢুকতে পারবে না। ফলে চীন থেকে আসতে চাওয়া ১৭১ জনের একটি টিম দেশে আনা যাচ্ছে না।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কেবিনেটে করোনাভাইরাস নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। কেবিনেট বৈঠকের পর ২০ থেকে ২৫ জন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী আলোচনা করেছেন। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে, যেভাবেই হোক এই ভাইরাস আমাদের দেশে ঢোকা রোধে ব্যবস্থা নিতে হবে। যথা সম্ভব চায়না থেকে উহান যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কারণ আমরা ঝুঁকি নিতে চাইছি না। চীনের হুবেই প্রদেশ থেকে আরও ১৭১ জন বাংলাদেশি দেশে ফিরে আসতে চাইছেন। কিন্তু বাংলাদেশ বিমানে তাদের আনতে সমস্যা হচ্ছে। কেননা, এর আগে ৩১৪ জন বাংলাদেশিকে আনতে যে ফ্লাইট গিয়েছিল, সেটি পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত পাইলট ও ক্রুদের অন্য দেশে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। এ কারণে নতুন করে যারা আসতে চাইছেন, তাদের চীনের কোনো এয়ারলাইন্সের ভাড়া করা প্লেনে আনার কথা ভাবা হচ্ছে। তবে যারাই বাংলাদেশে আসবেন,তাদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হবে অনন্ত ১৪ দিন। এসময় সচিবের কাছে চীনে প্লেন যাতায়াত বন্ধ থাকবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন প্রতিদিন চীনে চারটি ফ্লাইট যাচ্ছে। প্রতি ফ্লাইটে ১০ থেকে ১২ জন যাত্রী হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, এয়ারলাইন্স গুলো নিজেরাই ফ্লাইট বন্ধ করে দেবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বৈঠকের পর স্পেশালি ২০-২৫ জন নিয়ে বসে আলোচনা হয়েছে। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে-যেভাবেই হোক এটাকে (করোনাভাইরাস) আমাদের দেশে ঢোকা প্রতিরোধ করতে হবে। এছাড়া যারা চীনের উহান থেকে আসবে সবাইকে...উহান থেকে তো চায়না একেবারে ক্লোজ করে দিয়েছে। সুতরাং বের হতে পারবে না। তারপরও বলা হয়েছে যদি সন্দেহ হয় উহান থেকে আসছে, তাকে অবশ্যই ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে রাখতে হবে। কারণ আমরা এটা নিয়ে তো রিস্ক নেব না।

তিনি বলেন, অলরেডি যে ৩১২ জন আসছে (চীনের উহান থেকে) তাদেরকে হজ ক্যাম্পে রাখা হয়েছে। সেখানে খাওয়া-দাওয়া সবকিছু দেয়া হচ্ছে। ইনিশিয়ালি তারা বোধ হয় বুঝতে পারেনি তাদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হবে। তারা ভাবছে ছেড়ে দেবে, বাড়িতে চলে যাবে। ইয়ং ছেলেরা প্রথমে জানতেও চাচ্ছিল, আমাদের কেন আটকে রাখা হয়েছে? তাদের বুঝানো হলো এটা তো হাইলি রিস্কি। আজকে অধ্যাপক এ বি এম আব্দুল্লাহও সেখানে ছিলেন, ওনারা যেটা বললেন এর আগের যে ভাইরাসগুলো ছিল সেগুলো এত দ্রুত ছড়ায়নি। এটা খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ইবোলা ও অন্যান্য ভাইরাসের তুলনায় এটার মৃত্যুহারও কম।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, চীন ছাড়া অন্যান্য দেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী ডাবল চেকআপ করা হচ্ছে। বিশেষ করে ভায়া হয়ে যারা আসে তারা সেফটি নিয়েই আসে। কারণ ব্যাংকক ও হংকংয়ে তো খুবই স্ট্রিক। কুয়ালালামপুর ও সিঙ্গাপুর হয়ে যারা আসে তাদের তো একটা ন্যাচারাল প্রটেকশন হয়। একবার সেখানে স্ক্যানিং হয়। এজন্য আমরা প্রটেকশন পাই। তারপরও আমাদের এখানে ডাবল প্রটেকশন সিস্টেম আছে।

খন্দকার আনোয়ার বলেন, মানুষকে এ বিষয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য বলা। এখন পর্যন্ত আল্লাহর রহমতে আমাদের এখানে করোনাভাইরাস পাওয়া যায়নি। আমরা খুব হাইলি প্রটেকশনে আছি। এগুলো বলতে বলা হয়েছে। পদ্মা সেতুসহ বড় বড় প্রজেক্টে যারা আছেন তাদের মধ্যে যারা ১৮ জানুয়ারির পর চীন থেকে এসেছেন তাদের সবাইকে কোয়ারেন্টাইনে রেখে দিয়েছি। উহান বেইজ যেসব কর্মী রয়েছে আমরা তাদের না করে দিয়েছি, ক্লিয়ারেন্স না দিলে আসতে পারবে না। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বিমান চলাচল বন্ধ করে দেয়ার কোন সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আমাদের সঙ্গে চারটি ফ্লাইট। একটি কুনমিং থেকে আসে, দুটো আসে চায়না সাউদার্ন গুয়াংজু থেকে আর ইউএস-বাংলা চলে। আজকে বিমান সচিব বললেন, আমি সিডিউল দেখলাম ১০/১২ জন প্যাসেঞ্জার হচ্ছে। মনে হচ্ছে ওরাই বন্ধ করে দিবে।

তিনি বলেন, তবে চীন সরকার আক্রান্ত একজনকেও ছাড়বে না। ৩১৬ জন আসার কথা ছিল ওরা ৪ জনকে ছাড়েনি। যদিও তারা করফার্ম না, খুব জ্বর ছিল, তারা রেখে দিয়েছে। ১৭১ জনকে চীন ছাড়পত্র দিলেই তারা আসতে পারবে।’ এদিকে চীনের প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬১ জনে। ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রোববার যারা মারা গেছেন তাদের ৫৬ জনই ভাইরাসটির উৎসস্থল হুবেই প্রদেশের। এছাড়া ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৮২৯ জন। মোট ১৭ হাজার ২০৫ জন এখন প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন