আহমদুল ইসলাম চৌধুরী
॥ শেষ কিস্তি ॥
বাংলাদেশি গাইড হজ করলে এহরাম পরিহিত থাকবে বিধায় এরকম সেবা দেয়া সম্ভব নয়।
হজের অনেক আগে থেকে পবিত্র মক্কায় তাপমাত্রা যে ৪০ ডিগ্রি উপরে তা স্পষ্ট হয়ে যায়। এতে বাংলাদেশ হজ মিশনের কি কিছু করার ছিল না? যেহেতু ৩ হাজারের মতো সরকারি হাজী, চট্টগ্রামের মেয়র কাফেলা, ঢাকাসহ দেশের হয়ত কয়েকটি কাফেলা আরাফাতে এসি, ফ্যানের ব্যবস্থা করেছে।
এ বছর প্রায় ১ লাখ ৬ হাজারের মধ্যে হয়ত ৪/৫ হাজার হাজী আরাফাতে এসি, ফ্যান পেয়েছে। সাথে বাংলাদেশ হজ মিশন তাদের নিজেদের কর্মকর্তা কর্মচারীদের এবং দেশ থেকে যাওয়া হজ ডেলিগেটগণের জন্য আরাফাতে এসি, ফ্যানের ব্যবস্থা করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দেশ থেকে যাওয়া বাকি লাখের অধিক মহান আল্লাহ পাকের দাওয়াতি মেহমান তথা অসহায় হাজীগণ কোন প্রকারের এসি, ফ্যানবিহীন সাধারণ তাঁবুর নিচে ৯ যিলহজ বুধবার আরাফাতের ময়দানে ৫১ ডিগ্রি তাপমাত্রায় দগ্ধ হচ্ছিল। অনঅভ্যস্ত অসহায় এ লক্ষাধিক বাংলাদেশি এতো অধিক গরম সহ্য করতে না পেরে আরাফাতের ময়দানে ছটফট করতে থাকে। অসংখ্য হাজী হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়। হাজার হাজার হাজী কাতর হয়ে ছটফট করতে থাকে। কিন্তু এ আরাফাতের ময়দানে হজ মিশনের কর্তাব্যক্তিরা ও দেশ থেকে যাওয়া ডেলিগেটরা এসি, ফ্যানের নিচ কিছুটা হলেও আরামদায়ক অবস্থায় ছিল।
প্রধানমন্ত্রী, হজযাত্রীগণ আল্লাহ পাকের দাওয়াতি মেহমান, পরকাল চিন্তা করলে হজযাত্রীগণ সে বছরের জন্য সর্বোচ্চ সম্মানী ব্যক্তি। কিন্তু এ দেশ থেকে যাওয়া লক্ষাধিক আল্লাহর মেহমানরা আরাফাতের ময়দানে ৫১ ডিগ্রি তাপমাত্রায় দগ্ধ হচ্ছিল। জানি না এ নিয়ে ধর্মমন্ত্রণালয়কে কোন সিদ্ধান্ত দিয়েছেন কিনা? এজেন্সিরা মূলত হজের নামে ব্যবসায়ী। এরা চেষ্টা করে মোয়াল্লেম মাধ্যমে কম টাকা খরচ করে হজের কার্যক্রম সারতে। কিন্তু এজেন্সি মোয়ল্লেমের মধ্যখানে বাংলাদেশ হজ মিশন অবস্থান করছে। তারা তো সৌদি হজ অধিদফতরের মাধ্যমে এর প্রতিকারের ব্যবস্থা করতে পারতো। শুধু তাই নয়, হাজীরা আরাফাত থেকে মুজদালেফা থেকে পরবর্তী ১০, ১১, ১২ হজ কার্যক্রম অধিকাংশ ক্ষেত্রে সুন্দর ব্যবস্থা ছিল না বলা চলে। দেশে ফেরার পথে জেদ্দা হজ টার্মিনালের অবস্থা লোমহর্ষক। দিনে রাতে ৪/৫টি হজ ফ্লাইট চলছে। প্রতি ফ্লাইটে চার শতাধিক হাজী। কিন্তু বাংলাদেশ প্লাজায় এক ফ্লাইটের হাজী ভালোভাবে বসতে পারবে না এত ছোট এরিয়া। এখানে ৩/৪ ফ্লাইটের হাজী যদি একসাথে জড়ো হয় অবস্থা কি দাঁড়াবে? ১২ অক্টোবর দিবাগত রাত এখানে ঠা-া বাতাস দেয়ার যে ব্যবস্থা সৌদি কর্তৃপক্ষ রেখেছিল তাও অকার্যকর ছিল না, জানি না এর আগে পরে কি অবস্থা ছিল। যেখানে বাংলাদেশ থেকে লাখের ওপরে হাজী দৈনিক ৪/৫টি হজ ফ্লাইট, অতএব জেদ্দা হজ মিশন জানি না সৌদি যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট এ অব্যবস্থা নিয়ে জোরালো আপত্তি করছে কিনা? পবিত্র মক্কা ও পবিত্র মদিনা থেকে জেদ্দা হজ টার্মিনালে পৌঁছে নানান আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে বিমানে গিয়ে আরোহন করতে হাজীরা অতি ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত কাহিল হয়ে পড়ে। সাথে সাথে হয় ক্ষুধার্ত। কাজেই বাংলাদেশ বিমানে হাজীরা প্রবেশ করতেই ছোট এক বোতল পানি সমেত রুটি জাতীয় একটা খাবার প্যাকেট দেয়া উচিত নয়কি? যেহেতু চার শতাধিক যাত্রী আরোহন করে নিয়ম রক্ষা করে বিমান আকাশে উড়ে স্বাভাবিক হওয়া এবং চার শতাধিক যাত্রীর জন্য খাবার পরিবেশন শুরু হওয়া প্রায় ২ ঘণ্টার মতো সময় লাগে। আন্তর্জাতিক যাত্রী আর হজযাত্রী এক কথা নয়। হজে যাওয়ার সময় জেদ্দা হজ টার্মিনালে খাওয়ার জন্য বিমান একটি নাস্তার প্যাকেট দিতে পারে। আন্তর্জাতিক রোডের নিয়মিত ফ্লাইটের যাত্রী এবং হজযাত্রীকে একই নিয়মে না দেখা উচিত। হজযাত্রীগণের ভাড়াও স্বাভাবিক ভাড়ার চেয়ে তিনগুণ প্রায়। অতএব হজীদের জন্য বিমানের আতিথেয়তা ঢেলে সাজানো প্রয়োজন। তবে বিমানের স্টাফদের হাজীগণের প্রতি সুন্দর ব্যবহার, সম্মানবোধ প্রশংসার দাবিদার।
প্রধানমন্ত্রী, জানি না আপনি জানেন কিনা, আপনার স্মৃতিতে ভাসছে কিনা, কেউ আপনাকে বলেছে কিনা! তবে আমার স্মৃতিতে ভাসছে, আপনার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হজযাত্রীগণের জন্য যে অবদান রেখে গেছেন তা স্মরণযোগ্য। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে সাফিনায় আরব, সাফিনায় আরাফাত প্রথম ট্রিপ হজযাত্রী নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে জেদ্দা যায়। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভ করায় ২য় ট্রিপ আর যেতে পারিনি। কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাদশা ফয়সালের সাথে যোগাযোগ করে ভারতের মুহাম্মদী জাহাজের মাধ্যমে দুই ট্রিপে হজযাত্রীগণকে দেশে ফিরিয়ে আনেন। শুধু তাই নয় সৌদি আরব বাংলাদেশকে স্বীকৃতি না দিলেও সৌদি আরবের সাথে যোগাযোগ করে ভারতের মুহাম্মদী জাহাজ এবং বাংলাদেশ বিমানে পরবর্তী বছর হজযাত্রী প্রেরণ করেন। এটা হাজীগণের প্রতি বঙ্গবন্ধুর দরদ, ধার্মিকতা, মহানুভবতা স্মরণযোগ্য হজযাত্রী সেবা। আপনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা। আপনি দেশের হাজীগণের খাদেম হবেন এটাই কাম্য। বাদশা ফাহাদ বাদশাহী পদের চেয়ে দুই হারমের খাদেম তথা খাদেমুল হারামাইনিশ শরীফাইন লকব বুকে ধারণ করে নিয়ে গেছেন। আপনি দেশে হজযাত্রীগণের খেদমতে আরও বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবেন এটি জনগণের প্রত্যাশা। জানি আপনি দেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের কল্যাণে রাত দিন অতি ব্যস্ততায় সময় কাটান। কিন্তু কাজের ফলাফলে বরকত, রহমত, কল্যাণ আল্লাহর হাতে। আপনি আপনার সচিবালয় থেকে হজকে নিয়ন্ত্রণ করার প্রত্যাশা রাখি। আপনার মুখ্য সচিবকে আহ্বায়ক করে পররাষ্ট্র সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, বিমান সচিব, ধর্ম সচিবকে সদস্য করে আপনার মন্ত্রণালয়ে একটি কমিটি গঠন করা যেতে পারে। এতে আপনার মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিবকে বা অতিরিক্ত সচিবকে এ কমিটির সদস্য সচিব করতে পারেন যাতে আপনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে হজ ও ওমরা কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা যায়। হজ, ওমরার নামে যাতে আদম পাচার না হয়, সরকারি কর্মকর্তা বা হজ এজেন্সিরা এবং সৌদি আরবের বাংলাদেশ হজ মিশন হাজীদের সেবা দানে যাতে এদিক সেদিক করতে না পারে। আমাদের দেশের হজযাত্রীরা অসহায়, বড় অসহায়, অবহেলিত, অভিভাবকহীন। আপনি প্রধানমন্ত্রী হয়ে হজযাত্রীর খেদমতে আরও তৎপর হলে , হাজীগণের অভিভাবক হলে, হাজীগণের দোয়ায় মহান আল্লাহ পাক আপনাকে যে কল্যাণ দান করবে তাতে সন্দেহ থাকতে পারে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন