খুলনা ব্যুরো : দক্ষিণাঞ্চলের ছয়টি হিমায়িত খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের রপ্তানিযোগ্য বাগদা চিংড়িতে ব্যাকটেরিয়া এন্টিবায়োটিক ও তুতের পানির অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের শর্ত অনুযায়ী এসব জীবাণু থাকায় চিংড়ি রপ্তানির অযোগ্য। উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যাকটেরিয়া ও এন্টিবায়োটিকযুক্ত বাগদা চিংড়ির পরিমাণ প্রায় দেড় লাখ কেজি। এসব অপদ্রব্য থাকলে মানবদেহে ক্যান্সার, লিভার, কিডনি ও ফুসফুসে আক্রান্ত হতে পারে। মৎস্য মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রিত কোয়ালিটি কন্ট্রোল ল্যাবে এসব প্রতিষ্ঠানের চিংড়িতে পজেটিভ পাওয়ায় রপ্তানি ছাড়পত্র দেয়া হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের শর্ত অনুযায়ী রপ্তানির যোগ্য চিংড়ি মানসম্মত বলে কোয়ালিটি কন্ট্রোল ল্যাবের ছাড়পত্র গ্রহণ করতে হবে। ছাড়পত্র ছাড়া চিংড়ি রপ্তানি করার ওপর বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। গত মে-জুন মাসে খুলনার বয়রাস্থ কোয়ালিটি কন্ট্রোল ল্যাবে প্রথম দফা এবং ঢাকাস্থ ফিস ইন্সপেকশন এন্ড কোয়ালিটি কন্ট্রোল ল্যাবে দ্বিতীয় দফা পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়। ঢাকাস্থ ফিস ইন্সপেকশন এন্ড কোয়ালিটি কন্ট্রোল ল্যাবের বায়োকেমিস্ট মো. আশরাফুল আলম ও কোয়ালিটি কন্ট্রোল অফিসার মো. মানিক মিয়া স্বাক্ষরিত রিপোর্টে এন্টিবায়োটিক, ব্যাকটেরিয়া ও তুতের পানির অস্তিত্ব পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, এ দু’ মাসে ৩ হাজার নমুনার মধ্যে ৪৪টিতে পজেটিভ পাওয়া গেছে। যেসব প্রতিষ্ঠানের চিংড়িতে পজেটিভ নিশ্চিত করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে লে. কর্নেল (অব.) কাজী শাহেদ আহমেদের জেমিনি সী ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ, মো. রেজাউল হকের মালিকানাধীন ব্রাইট সী ফুড লিমিটেড, একই মালিকের মডার্ন সী ফুড লিমিটেড, আলহাজ আব্দুল জব্বার মোল্লার মালিকানাধীন জালালাবাদ ফ্রোজেন ফুডস লিমিটেড, জাহানাবাদ সী ফুড লিমিটেড ও সাতক্ষীরার রোজেন সী ফুডস লিমিটেড।
অপর একটি সূত্র জানান, জাতীয় আয় বৃদ্ধিসহ দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য জালালাবাদ ফ্রোজেন ফুডস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল জব্বার মোল্লা প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে গত এপ্রিল মাসে প্রেসিডেন্টের শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার-২০১৪ পদক গ্রহণ করেন। মডার্ণ ও ব্রাইটের মালিক রেজাউল হক সিআইপি মর্যাদাসম্পন্ন।
কোয়ালিটি কন্ট্রোল ল্যাবের উপ-পরিচালক মো. গোলাম মোস্তফা এ প্রতিবেদককে জানান, দু’ মাসে ৪৪টি নমুনা পরীক্ষায় পজেটিভ পাওয়া গেছে। পরীক্ষায় ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বেশি এবং টাইফয়েডের ক্ষতিকর জীবাণুর অস্তিত্ব রয়েছে। ব্যাকটেরিয়া বেশি থাকলে প্রমাণিত হয় নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর স্থানে চিংড়ি মজুদ ছিল। এ ল্যাবের অন্যান্য সূত্রগুলো জানান, চিংড়ি শ্রমিকদের হাতের ক্ষত রোধ করার জন্য তুতের পানি ব্যবহৃত হয়। পরীক্ষায় চিংড়ির নমুনায় তুতের পানির অস্তিত্বও পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোটার্র্স এসোসিশেন-এর ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি শেখ আব্দুল বাকী জানান, গলদার গেøস বাড়ানোর জন্য অসাধু ব্যবসায়ীরা তুতের পানিতে ভিজিয়ে রাখে। তবে এর পরিমাণ বর্তমানে খুবই কম।
ব্রাইট সী ফুড লিমিটেড’র ম্যানেজার মোঃ আনোয়ার হোসেন জানান, এ অঞ্চলের হিমায়িত খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের চিংড়িতে কম-বেশি পজেটিভ পাওয়া যায়। তবে ব্রাইট ও মডার্ণে উৎপাদিত পণ্য পরীক্ষায় ক্ষতিকারকদ্রব্য পাওয়া গেছেÑ এমন কোনো বিষয় তারা জানতে পারেনি।
অপরদিকে, ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১ হাজার ৩২৮টি নমুনা পরীক্ষা করে পজেটিভ পাওয়া গেছে মাত্র ৬০টিতে। অথচ ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১ হাজার ৪৭৩টি নমুনা পরীক্ষা করে পজেটিভ পাওয়া যায় ১০৪টিতে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন