আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ইসলামী চিন্তাবিদ, জাতির শিক্ষক, জাতীয় বিবেকের কণ্ঠস্বর, প্রখ্যাত রাজনীতিক এবং সমাজসেবক দৈনিক ইনকিলাবের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.)-এর আজ চতুর্দশ ইন্তেকাল বার্ষিকী। ২০০৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ৭১ বছর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেন।
মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.) ১৯৩৫ সালে চাঁদপুরের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বর্ণাঢ্য ও বৈচিত্র্যপূর্ণ জীবনের অধিকারী দেশের এই কৃতী সন্তান আমৃত্যু দেশ ও মানুষের খেদমতে নিবেদিত ছিলেন। তার জীবন পরিসরে তিনি জাতীয় ও জনকল্যাণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তার প্রতিটি উদ্যোগ, প্রতিটি কর্ম ও সেবা একেকটি মাইলফলক হয়ে আছে। সারা জীবন তিনি জাতি, দেশ, শিক্ষা ও ধর্মের সেবা করে গেছেন। যৌবন থেকে বার্ধক্য পর্যন্ত জীবনের প্রতিটি বাঁকে ও পর্যায়ে নানা মহৎ কর্মে, নানা পরিচয়ে তিনি নিজেকে সমুজ্জ্বল ও ভাস্বর করে গেছেন।
তিনি তার কর্মজীবন শুরু করেছিলেন মাদরাসার শিক্ষক হিসেবে। পরবর্তীতে জাতির শিক্ষকে রূপান্তরিত হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন শিক্ষক, সংগঠক ও শিক্ষকদের অবিসংবাদিত নেতা। মাদরাসা শিক্ষকদের বৃহত্তম সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের তিনি ছিলেন সভাপতি এবং বেসরকারি শিক্ষক সংগঠনগুলোর সমন্বয়কারী ও শীর্ষ নেতা। তিনি ছিলেন তৌহিদী জনতার মুখপত্র দৈনিক ইনকিলাবের স্বপ্নদ্রষ্টা ও প্রতিষ্ঠাতা। ঢাকার মহাখালীতে তিনিই প্রতিষ্ঠা করেন দেশের অন্যতম বৃহত্তম মসজিদ, মসজিদে গাউসুল আজম কমপ্লেক্স। জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি হিসেবে দেশের মাদরাসা শিক্ষকদের পদমর্যাদা ও আর্থিক অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে, বেসরকারি স্কুল-কলেজ শিক্ষক সমিতির নেতা হিসেবে শিক্ষকদের আত্মপ্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে, শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন ও সংস্কারের ক্ষেত্রে তিনি যে ভ‚মিকা ও অবদান রেখে গেছেন তার তুলনা বিরল। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে ১৯৭৯ ও ১৯৮৬ সালে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি এবং পর্যায়ক্রমে শিক্ষা, ধর্ম, ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে স্মরণীয় ভূমিকা রাখেন। ১৯৮৮ সালে স্মরণকালের ভয়াবহতম বন্যা ও দুর্যোগের সময় তিনি ধর্ম এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী হিসেবে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন। একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলেম ও চিন্তাবিদ হিসেবে তিনি সারা বিশ্বে ব্যাপক পরিচিত ছিলেন। তার এই পরিচিতি, খ্যাতি ও যোগাযোগদক্ষতা কাজে লাগিয়ে তিনি মধ্যপ্রাচ্যের ভ্রাতৃপ্রতিম মুসলিম দেশগুলো থেকে বিপুল পরিমাণ সাহায্য-সহযোগিতা আদায় করতে সক্ষম হন, যা বন্যাপীড়িত মানুষের কল্যাণ ও পুনর্বাসনে বিশেষভাবে আসে। তিনি মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কোন্নয়নের সেতুবন্ধের ভূমিকা পালন করেন। স্বাধীনতা-উত্তরকালে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র, জাতীয় সংস্কৃতি, ইসলাম, মুসলিম বিশ্ব এবং দেশ-জনগণের বৃহত্তর খেদমতে তিনি একটি জাতীয় দৈনিকের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। এ ধরনের একটি সংবাদপত্র প্রকাশ ছিল তার দীর্ঘলালিত স্বপ্ন। দৈনিক ইনকিলাব হলো তার সেই স্বপ্নের জাতীয় সংবাদপত্র। তার নির্দেশিত লক্ষ্য সামনে রেখেই দৈনিক ইনকিলাব তার অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছে।
মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.)-এর ইন্তেকাল বার্ষিকী উপলক্ষে আজ বাদ মাগরিব মহাখালিস্থ মসজিদে গাউসুল আযম-এ ঈসালে ছাওয়াব মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন ও দেশব্যাপী এর বিভিন্ন শাখা এবং বিভিন্ন মসজিদ, মাদরাসা, দরবার ও খানকার উদ্যোগে বিশেষ দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হবে। এসব মাহফিলে উপস্থিত হয়ে মরহুমের জন্য দোয়ায় শরিক হবার জন্য তার পরিবারের পক্ষ থেকে আত্মীয় স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও ভক্তবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন