রাজধানীর রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের সামনের ফুটওভার ব্রিজটি গত ১৫দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। গত ২৩ জানুয়ারি রাতে এই ব্রিজটি গাড়ি দুর্ঘটায় ক্ষতি গ্রস্ত হয়েছে। সেদিন থেকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) এই ব্রিজটি সাময়িক বন্ধ ঘোষণা কারেছে। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থানের এই ফুটওভার ব্রিজটি মেরামতের কোন উদ্যোগ গতকাল পর্যন্ত চোখে পড়েনি। দেশের উত্তরপূর্বাঞ্চলের বেশ কিছু জেলা থেকে রাজধানীতে প্রবেশের গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কের উপর নির্মিত এ ফুটওভার ব্রিজটি দিয়ে প্রতিদিন উত্তরা ৪, ৬ ও ৭নং সেক্টরেরসহ উত্তরার হাজার হাজার মানুষ পারাপার হয়ে থাকেন। বিশেষ করে উত্তরা রাজউক মডেল কলেজ, ৭নং সেক্টরের উত্তরা হাইস্কুল, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ ওই এলাকার বিভিন্ন স্কুল কলেজ ও মাদরাসার অন্তত ২৫ হাজার শিক্ষর্থী এ সড়কটি পারাপার হয় এই ফুটওভার ব্রিজটি দিয়ে।
এছাড়াও এখানে রয়েছে নর্থটাওয়ার, মাসকট টাওয়ার, হাউজ বিল্ডিংসহ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি অফিস। রয়েছে রাজউজ কমার্শিয়াল মার্কেটসহ ও বিভিন্ন নামি-দামি মার্কেট ও শপিংমল। এ সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় উত্তরার হাজার হাজার মানুষ যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যমই ছিল এই ফুটওভার ব্রিজটি। এটি বন্ধ থাকার কারণে গত ১৫দিন ধরে এলাকাবসীসহ ওই এলাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়েই মহাসড়কটি পারাপার হতে হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে যে কোন সময় ঘটে যেতে পারে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা। জীবন হারাতে পারে বসুন্ধরা যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে নর্দ্দা এলাকার বিইউপির ছাত্র আবরার আহমেদ চৌধুরী কিংবা শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থী আবদুল করিম ও দিয়া খানম মিমের মত যে কেউ।
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই ফুটওবার ব্রিজটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার গতকাল বৃহস্পতিবার ১৫ দিন অতিবাহিত হয়ে গেলেও এর মেরামতের কোন উদ্যোগ চোখে পড়েনি। ব্রিজটির সিঁড়ির মুখে ‘সাবধান ক্ষতিগ্রস্ত ফুটওভার ব্রিজ, জনসাধারণের চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ’ ঘোষণা করেই ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন তাদের দায়িত্ব শেষ করেছে। ডিএনসিসি’র অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শরীফ উদ্দিন, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আরিফুর রহমান, ডিএনসিসি’র নগরভবনের ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ার সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী ফরহাদ ও ডিএনসিসি’র অঞ্চল-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী সাইদুর রহমানের সাথে কথা বলে তাদের এই সাময়িক সময় শেষ হতে আর কতদিন সময় লাগতে পারে, জানতে চাওয়া হলে তাদের কেউ-ই এর যথাযথ উত্তর দিতে পারেননি। তাদের এই অবহেলার কারণে এখানে যদি আবারও কোন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে এর দায়ভার কে নিবে, জানতে চাওয়া হলে এরও কোন সদোত্তর দিতে পারেননি তাদের কেউ। তাদের একজন অন্যজনের উপর এর দায়ভার চাপাতেই ছিল ব্যস্ত।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শরীফ উদ্দিনের কাছে এ বিয়য়ে জানতে চাওয়া হলে গতকাল তিনি ইনকিলাবে বলেন, এবিষয়ে জানতে হলে আমাদের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আরিফুর রহমানের সাথে একটু কথা বলেন। কারণ এই সংক্রান্ত ফাইলগুলো আমার কাছে আসে না। এগুলো ড. তারিক বিন ইউসুফের কাছ থেকে আরিফের কাছে চলে যায়। আরিফুর রহমানের সাথে কথা বললে তিনি অঞ্চল-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী সাইদুর রহমানের সাথে কথা বলতে বলেন। ডিএনসিসি’র অঞ্চল-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী সাইদুর রহমানের জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আমি বলতে পারবো না, এটা আমাদের উত্তর সিটির নগরভবনের ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ার সার্কেল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ফরহাদ ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌকশলী আরিফুর রহমান বলতে পারবেন।
এরপর ডিএনসিসি’র নগরভবনের ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ার সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ফরহাদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২৩ জানুয়ারি রাতে এই ব্রিজটি কোন এক গাড়ি দুর্ঘটার মাধ্যমে ক্ষতি গ্রস্ত হয়েছে। এ ব্যপারে আমরা একটি জিডি করেছি থানায় সেটা এখন মামলা হয়ে গেছে। এখন এটা রিপেয়ারের জন্য আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি।
জানুয়ারি মাসের ২৩ তারিখে এই ব্রিজটি ক্ষতিগ্রস্ত হলো গতকাল ৬ ফেব্রুয়ারি ১৫ দিন অতিবাহিত হয়ে গেলো, তাহলে দ্রুত সময় বলতে আপনি কি বুজাচ্ছেন? আসলে সমস্যা কোথোয়? জানতে চাইলে তিনি বলেন, সমস্যা কোথায়ও নাই, হয়ে যাবে। আপনাদের অবহেলার জন্য এখানে যদি বসুন্ধরার যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে বাস চাপায় নিহত আবরারের মতো আবারো কোন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে এর দায়ভার কে নিবে? জানতে চাইলে ডিএনসিসি’র এই প্রকৌশলী বলেন, একটা ভাল জিনিস হঠাৎ যদি নষ্ট হয়ে যায় কিংবা আপনি গাড়ি করে যাচ্ছেন এটা যদি হঠাৎ এক্সিডেন্ট হয়ে যায় এটার জন্য দোষ কর। একটা জিনিস যখন নষ্ট হয়েছে এটা মেরামত করতে তো একটু সময় দিতে হবে। এর জন্য একটা নির্দিষ্ট সময়ের দরকার। প্রসিডিউরগত সময়টাতো দিতে হবে তাই না? কর্তৃপক্ষ এ ব্যপারে অত্যন্ত সতর্ক আছে আমরা আশা করছি এটা দ্রুত হয়ে যাবে। তিনি বলেন, যেহেতু এটা এখন ক্ষতিগ্রস্ত ফুটওভার ব্রিজ। এটা যদি এখন ব্যবহার করা হয় তাহেলে যে কোন সময় আরও ভয়াবহ দুর্ঘনা ঘটে যেতে পারে। এ জন্য এটাকে আমরা টেমপোরারলি বন্ধ করে দিয়েছি। এটা আপাদত ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
এই ফুটওভার ব্রিজটি বন্ধ থাকার কারণে ওই এলাকার স্কুল, কলেজ, মাদরাসাসহ এলাকাবাসীর রাস্তা পারাপারে যে সমস্যা হচ্ছে সেই বিষয়টি নিয়ে আপনাদের কোন চিন্তাভাবনা আছে কি জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এই ব্রিজটি থেকে সামান্য দূরে আজমপুরে আরও একটি ফুটওভার ব্রিজ আছে, আমি এই ব্রিজটি ব্যবহারকারীদের অনুরোধ করবো তারা যেন ওই ব্রিজটি সাময়ীক সময়ের জন্য ব্যবহার করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন