রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

আকাশ যোগাযোগ করোনায় লন্ডভন্ড

কমছে ফ্লাইটের সংখ্যা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০২ এএম

করোনাভাইরাসের কারণে চীনের সঙ্গে লন্ডভন্ড হচ্ছে বাংলাদেশে আকাশপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা। চীনের সঙ্গে এরইমধ্যে আকাশপথে যোগাযোগ বাতিল করেছে বিভিন্ন দেশের ৭০টি এয়ারলাইন্স। এতে চীনের পথে কমেছে যাত্রী সংখ্যা। এতে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ার শঙ্কা জানিয়েছে এয়ারলাইন্সগুলো।

বাংলাদেশ থেকে চীনে বেসরকারি তিনটি এয়ারলাইন্স সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করে। এগুলো হলো চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্স, চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্স ও ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স। তবে চায়না সাউদার্ন ও চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্স ফ্লাইট সংখ্যা কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। আর ইউএস-বাংলা ফ্লাইট না কমালেও রয়েছে আর্থিক ক্ষতির শঙ্কায়। কেননা চীনের রুটে যাত্রী সংখ্যা আগের তুলনায় কমেছে।

জানা গেছে, চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট চলে ঢাকা-কুনমিং-ঢাকা রুটে। সপ্তাহে সাতদিনই তাদের ফ্লাইট চলত। তবে আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তারা সপ্তাহে ৩টি ফ্লাইট চালাবে। অর্থাৎ সপ্তাহে তাদের চারটি ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে। এছাড়া আগে তাদের বোয়িং ৭৩৭-৮০০ মডেলের বিমানে যাত্রীধারণ ক্ষমতা ছিল ১৬০ জন তবে যাত্রী কমে যাওয়ায় এখন ১৩২ আসনবিশিষ্ট বিমান দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করা হচ্ছে। এরপরও পর্যাপ্ত সংখ্যক যাত্রী মিলছে না। এ অবস্থার পরিবর্তন না হলে আগামী ১ মার্চ থেকে সপ্তাহে তিনটি ফ্লাইট চালাবে বিমান সংস্থাটি।

চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্সের একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রথমদিকে বড় বোয়িং দিয়ে যাত্রী আনা নেওয়া করলেও এখন যাত্রী নেই। যে কারণে তারা ক্ষতির মুখে পড়েছে। সে জন্য কর্তৃপক্ষ ফ্লাইট কমিয়ে দিয়েছে।
এদিকে সপ্তাহে সাতদিন চীনের ফ্লাইট চলে চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্সের। সংস্থাটি ঢাকা-গুয়াংজু রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সপ্তাহে চারদিন ফ্লাইট পরিচালনা করবে সংস্থাটি। আগে ২৬২ যাত্রীর বোয়িং দিয়ে যাত্রী আনা নেওয়া করলেও এখন ১৬৩ যাত্রী বহনকারী বিমান দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করা হচ্ছে। এতে লোকসানের মুখে রয়েছে এই এয়ারলাইন্সটি। সংস্থাটির এক কর্মকর্তা বলেন, যাত্রীর অভাবে আজকের (শনিবার) ফ্লাইটটি বাতিল করা হয়েছে। যাত্রী না থাকলে আর্থিক ক্ষতি হবেই। আসন খালি রেখে বিমান ছাড়তে হচ্ছে। আবার ফেরার পথেও যাত্রী কম পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া সপ্তাহে সাতদিন চীনে ফ্লাইট চলছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের। ঢাকা-গুয়াংজু রুটে সংস্থাটির বোয়িং ৭৩৭ ফ্লাইট চলে। প্রতিদিন ১টা ফ্লাইট রাত ১০টা ২০ মিনিটে ঢাকা ছেড়ে যায়। বিমানটির যাত্রী ধারণ ক্ষমতা ১৬৪ জন। সংস্থাটি বিমানের ফ্লাইট কমানোর সিদ্ধান্ত না নিলেও ধারণা করছে করোনাভাইরাসের প্রভাবে তারাও ক্ষতির মুখে পড়বেন।

এ বিষয়ে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (জনসংযোগ) কামরুল ইসলাম বলেন, আমাদের যাত্রী অনেকটা কমেছে। চীনে করোনা ভাইরাসের কারণে এই সমস্যা বলে মনে হচ্ছে। সারাবিশ্ব এখন করোনাভাইরাসের আতঙ্ক। অনেক দেশ ফ্লাইট কমানোর পাশাপাশি ফ্লাইট বন্ধ করে দিয়েছে। তবে বাংলাদেশ সরকার ঘোষণা না দিলে আমরা নিজ থেকে ফ্লাইট বন্ধ করতে পারি না। সরকার ঘোষণা দিলে আমরা সাথে সাথে ব্যবস্থা নেব।

বিমানগুলোর লাভক্ষতি নিয়ে রিজেন্ট এয়ারলাইন্সের সিইও ইমরান আসিফ বলেন, ২০০২ সালে চীনে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে সার্স (পুরো নাম সিভিয়ার এ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) ভাইরাস। তখন এটা কাটিয়ে উঠতে সময় লেগেছিলো প্রায় ৪ মাস। কিন্তু করোনাভাইরাস মোকাবিলায় কত সময় লাগবে তা অনুমান করা মুশকিল হয়ে পড়েছে।
ইমরান আসিফ বলেন, ইতোমধ্যে ভারত ঘোষণা দিয়েছে যারা জানুয়ারির ১৫ তারিখের পর চীনে ভ্রমণ করেছে তারা আর ভারতে ঢুকতে পারবে না। একইসঙ্গে যেসব যাত্রী চীন ছাড়াও অন্যান্য রুটে যাতায়াত করছে সেখানে এর প্রভাব পড়বে। বিশ্ব বাজারে চীন একটি রোল প্লে করে থাকে। ফলে চীন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি বিশ্ব অর্থনীতিতেও এর বড় প্রভাব পড়বে।

এ বিষয়ে এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ আশীষ রায় চৌধুরী বলেন, চীনে করোনাভাইরাসের কারণে আমেরিকা, ইংল্যান্ড, কাতার, সিঙ্গাপুর ফ্লাইট বন্ধ করে দিয়েছে। আমাদের অর্থনীতিতে বিরাট প্রভাব পড়বে। আমাদের যতগুলো বিষয়ে ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে সেগুলো চীনা কোম্পানি সম্পৃক্ত। ব্যবসায়ের মূল একটি অংশ চীনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। করোনাভাইরাসের কারণে চীনের যেমন ক্ষতি হবে তেমনি আমাদেরও ক্ষতি হবে। চীনের এই করোনাভাইরাস শুধু বিমান সেক্টরে নয় বিশ্ববাজারে সবক্ষেত্রে প্রভাব ফেলবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন