বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ২০২৪, ০৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৪ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

করোনাভাইরাসে বাংলাদেশে কেউ আক্রান্ত হয়নি

চীন থেকে আসতে হলে নিজ উদ্যোগে আসতে হবে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

নতুন করোনাভাইরাসের (হঈড়ঠ-২০১৯) প্রাদুর্ভাবের কারণে চীন থেকে বাংলাদেশী কাউকে এই মূহূর্তে সরকারিভাবে দেশে ফেরানো হচ্ছে না। এই তথ্য জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, কাউকে আসতে হলে নিজ উদ্যোগে আসতে হবে। এদিকে নতুন করোনাভাইরাসে এ পর্যন্ত ১০১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে ৪২ হাজারের বেশি। চীন ভ্রমন করেননি কিন্তু আক্রান্ত হয়েছেন এমন ঘটনাকে ‘টিপ অফ দ্য আইসবার্গ’ বলে মন্তব্য করে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক বলেন, সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, এই আইসবার্গের আকার এবং আকৃতি নিরূপণ করা। বাংলাদেশে এখনো এ রোগে কেউ আক্রান্ত হয়নি বলে নিশ্চিত করেছে আইইডিসিআর। তবে সিঙ্গাপুরে আরও এক বাংলদেশীর শরীরে এই ভাইরাস সনাক্ত হয়েছে।

চীন থেকে ফিরতে হবে নিজ দায়িত্বে : করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে চীন থেকে বাংলাদেশী কাউকে এই মূহূর্তে সরকারিভাবে দেশে ফেরানো হচ্ছে না। এই তথ্য জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, যেসব বাবা-মা সন্তানদের ফিরিয়ে আনতে যোগাযোগ করেছেন, তাদের সন্তানদের নিজ উদ্যোগে দেশে ফেরানোর জন্য বলা হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা এখনো ফ্লাইট ক্যানসেল করিনি। বিশেষ করে কুনিমং এবং গুয়াংজু থেকে চায়নিজ ফ্লাইট আসছে। আমরা যাদের এনেছি, তাদের জন্য তিন কোটি টাকা প্লেন ভাড়া দিতে হয়েছে। আমার ফান্ডে আর কোনো পয়সা নাই। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় জাদুঘরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। চীনে অবস্থানরত বাকিদের ফেরানোর ক্ষেত্রে টাকাই একমাত্র সঙ্কট কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, নট নেসেসারিলি। যারা হজ্জক্যাম্পে আছেন তারা বের না হলে, বাকিদের কোথায় রাখব। আমরা বলেছি, তোমরা যদি আসতে চাও, ডেফিনিটলি আমরা চেক করে, কোয়ারেন্টিনে পৌঁছায়ে দেব। কোয়ারেন্টিনে রাখার ক্ষেত্রেও জটিলতা হচ্ছে জানিয়ে মোমেন বলেন, আমাদের কোয়ারেন্টিনেও কিছু সমস্যা হয়। কারণ মা, বাবা, আত্মীয়স্বজন, আশেপাশের লোক দেখা করতে চলে যায়। কোয়ারেন্টিনের লোক কেউ নামাজ পড়তে গেলেতো আমরা আটকাতে পারি না। নামাজে গেলে স্পর্শ থেকেও সেটা ছড়াতে পারে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, খুব কম দেশ- যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, ভারত, সিঙ্গাপুর- এরকম কয়েকটি দেশ তাদের লোকদের ফিরিয়ে নিয়েছে। বাকি দেশের লোকেরা ওখানে আছে। আমাদের ছেলেমেয়েরা অভিযোগ করেছে, তাদের খাবার দেওয়া হয় না। কিন্তু আমরা তথ্য নিয়েছি, চীনারা বলেছে তাদেরকে পানি, খাবার যথাসময়ে পৌঁছে দেয়া হয়। দুজন চায়নিজ সিনিয়র অফিসিয়াল নিয়োগ করেছে তাদের দেখভাল করার জন্য। ওখানে তারা মোটামুটি ভালো আছে।

করোনাভাইরাসে মৃত্যু হাজার ছাড়ালো : নতুন করোনাভাইরাস চীনে এক দিনেই কেড়ে নিয়েছে শত মানুষের প্রাণ। সব মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে গেছে। আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪২ হাজার ৬৩৮ জন। তবে এ ভাইরাসে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা আগের দিনের তুলনায় কিছুটা কমে এসেছে। দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, সোমবার একদিনেই এ ভাইরাসে মারা গেছেন ১০৮ জন। যারমধ্যে ১০৩ জনের মৃত্যু হয়েছে হুবেই প্রদেশে। সব মিলিয়ে চীনে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০১৬ জনে। চীনের মূল ভ‚খন্ডের বাইরে এ পর্যন্ত ফিলিপিন্স ও হংকংয়ে দুই চীনা নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। চীনের বাইরে অন্তত ২৫টি দেশে আড়াইশর বেশি মানুষের দেহে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। সব মিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা ৪৩ হাজার ছাড়িয়েছে বলে তথ্য দিয়েছে সিএনএন। তবে বাংলাদেশে এখনো এই ভাইরাসে কারও আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।

চীন ফেরতদের নমুনা পরীক্ষায় করোনা পাওয়া যায়নি: সম্প্রতি চীন থেকে ফেরা বাংলাদেশী কোনো নাগরিকের নমুনা পরীক্ষায় করোনার উপস্থিতি পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন আইইডিসিআরের পরিচালক প্রফেসর ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। গতকাল মঙ্গলবার মহাখালীর আইইডিসিআরে আয়োজিত নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান। প্রফেসর ফ্লোরা বলেন, সিঙ্গাপুরে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত একমাত্র বাংলাদেশীর চিকিৎসা চলছে দেশটির একটি স্থানীয় হাসপাতালে। চীন ফেরতদের মধ্যে এ পর্যন্ত সন্দেহজনক ৫৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে নতুন করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। এই মুহূর্তে একজন রোগী আইসোলেশন ইউনিটিতে ভর্তি থাকলে তার শরীরে করোনাভাইরাসের লক্ষণ বা উপসর্গ নেই। এছাড়া বিমানবন্দরসহ দেশের সব প্রবেশ পথে গত ২৪ ঘন্টায় ১৪ হাজার ২৯৪ জনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। গত ২১ জানুয়ারি থেকে এই সংখ্যা দাড়িয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার ৮৮১ জন।

করোনায় আক্রান্ত হতে পারে বিশ্বের ৬০ শতাংশ মানুষ : নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হলে চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া নতুন করোনাভাইরাসে বিশ্বের ৬০ শতাংশ মানুষ আক্রান্ত হতে পারেন। এমন অভিমত ব্যক্ত করেছেন হংকংয়ের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ গ্যাব্রিয়েল লিং। তিনি হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান ও প্রফেসর। তিনি মনে করেন, করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে এটি মহামারী আকারে বিশ্বের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে। লন্ডনে ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক গ্যাব্রিয়েল লিং এ মন্তব্য করেছেন। এদিকে, গত সোমবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বলেছেন, যারা কখনও চীন সফর করেননি, তাদের নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ‘টিপ অফ দ্য আইসবার্গ’ হতে পারে। তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, এই আইসবার্গের আকার এবং আকৃতি নিরূপণ করা।

করোনা ঝুঁকি পরীক্ষার মোবাইল অ্যাপ : ব্যবহারকারীর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন কি না, তা পরীক্ষার জন্য চীনে ‘ক্লোজ কন্টাক্ট ডিটেক্টর’ নামে একটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন চালু করা হয়েছে। যদি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে সনাক্ত হওয়া কোনো ব্যক্তি এই অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহারকারীর আশেপাশে থাকে, তাহলে কুইক রেসপন্স (কিউআর) কোড স্ক্যানের পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্যবহারকারীকে ওই আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যাপারে সতর্ক করা হবে। এই অ্যাপের মাধ্যমে সরকার আরও কাছ থেকে করোনাভাইরাস আক্রান্তদের নজরদারিতে রাখতে পারবে-মন্তব্য সংশ্লিষ্টদের। ডেভেলপারদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কুইক রেসপন্স (কিউআর) কোড স্ক্যানিংয়ের মাধ্যমে ব্যবহারকারী খুব সহজেই তার নিকটতম সন্দেহভাজনের ব্যাপারে খোঁজ নিতে পারবে। জনপ্রিয় পেমেন্ট অ্যাপ আলিপে বা সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম উইচ্যাটের মতোই এই অ্যাপ ব্যবহার খুব সহজ।
হাসপাতালে চীনের প্রেসিডেন্ট : রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার অগ্রগতি তদারক করতে বেইজিংয়ের একটি হাসপাতাল ঘুরে স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। করোনাভাইরাস ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার পর এই প্রথম তাকে জনসম্মুখে দেখা গেলো। চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমের বরাতে এ খবর জানিয়েছে আল জাজিরা। এ সময়, বেইজিংয়ে আক্রান্তদের জরুরি সেবায় নিয়োজিত কর্মীদের উদ্দেশ্যে শি জিনপিং বলেন, এ লড়াই যতই দীর্ঘায়িত হোক, জয় আমাদের সুনিশ্চিত। এর আগে, শি জিনপিং মাস্ক পরিহিত অবস্থায় বেইজিংয়ের ওই হাসপাতালে প্রবেশ করেন। শি জিনপিংইয়ের ওই পরিদর্শন শেষ হবার সঙ্গেসঙ্গেই হুবেই প্রদেশের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের পরিচালক ও কমিউনিস্ট পার্টির হুবেই প্রদেশের সেক্রেটারিকে তাদের পদ থেকে অপসারণ করা হয়।

উল্লেখ্য, গত ডিসেম্বরের ৩১ তারিখে করোনাভাইরাস চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে সর্বপ্রথম সনাক্ত হয়। তারপর দ্রুত এটি ছড়িয়ে পড়ে। এ ভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক এখনো তৈরি হয়নি। দেশটির স্বাস্থ্য কমিশন জানিয়েছে, তুলনামূলকভাবে বয়স্ক এবং আগে থেকেই শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যায় ভুগছেন এমন আক্রান্তদের মৃত্যু হচ্ছে। ইতোমধ্যেই, চীনের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ২০ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী জরুরি সাড়াদান কার্যক্রমে যোগ দিতে হুবেই পৌঁছেছেন। নতুন করে স্বাস্থ্যকর্মীদের আরও কয়েকটি দল প্রস্তুত রয়েছেন।#

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন