শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

মোবাইল টাওয়ারের রেডিয়েশন ক্ষতিকর নয় : বিটিআরসি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

মোবাইল ফোনের টাওয়ারের রেডিয়েশনে (বিকিরণ) মানবদেহ ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কিছু পায়নি টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বিটিআরসি)। এই বিকিরণ নির্ধারিত মানদন্ডের নিচে রয়েছে জানিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। গতকাল (সোমবার) বেলা ১১টায় রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে টাওয়ার রেডিয়েশনের মানদন্ড ও সাম্প্রতিক জরিপ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বিটিআরসি এতথ্য জানায়। বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগের কমিশনার মোঃ আমিনুল হাসান বলেন, টাওয়ার রেডিয়েশন আন্তর্জাতিক ও বিটিআরসির বেঁধে দেওয়া মানদন্ডের অনেক নিচে আছে, তাই তা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। বিকিরণ থাকবেই। কারণ, এটা ছাড়া টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তি সম্ভব নয়। কথা হলো, সেটি ক্ষতিকর কি না। তিনি বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের উন্নত দেশগুলোও একই প্রযুক্তি ব্যবহার করে।

তিনি বলেন, টাওয়ারের রেডিয়েশনের ফল অত্যন্ত সন্তোষজনক পাওয়া গেছে যা আমরা নিয়মিতভাবে বিটিআরসির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করি। আপনি যদি ভবিষ্যতে আরো উন্নততর সেবা পেতে চান তাহলে আরো বেশি মোবাইল সাইট স্থাপনের বিকল্প নেই। টাওয়ার রেডিয়েশন নিয়ে নানা রকম বিভ্রান্তি আছে, এটা ভিত্তিহীন। আমরা সরকারি, বেসরকারি সংস্থা বা ভবন মালিকদের কাছে নিশ্চিত করছি যে আপনারা ভয় পাবেন না।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বিকিরণের মাত্রা নিয়ে জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশনস বিভাগের উপপরিচালক শামসুজ্জোহা। তিনি বলেন, বিকিরণ পরিমাণের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে ছয়টি বিভাগে পরীক্ষা চালানো হয়েছে। সব কটি পরীক্ষায় বিকিরণ মাত্রার চেয়ে অনেক কম পাওয়া যায়। তিনি উল্লেখ করেন, ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অন নন-আয়োনাইজিং রেডিয়েশন প্রোটেকশনের (আইসিএনআইআরপি) পক্ষ থেকে ইলেকট্রিক অ্যান্ড ম্যাগনেটিক ফিল্ডস (ইএমএফ) রেডিয়েশনে যে মাত্রায় ক্ষতিকর প্রভাব পাওয়া গেছে, তার ৫০ ভাগের এক ভাগকে নিরাপদ সীমা হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশে নিরাপদ সীমারও অনেক কম মাত্রায় বিকিরণ পাওয়া যায়।
শামসুজ্জোহা উল্লেখ করে বলেন, বিকিরণ দুই ধরনের। আয়োনাইজিং ও নন-আয়োনাইজিং। এর মধ্যে আয়োনাইজিং রেডিয়েশন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এর মধ্যে পারমাণবিক বর্জ্য, সূর্যের আলট্রা ভায়োলেট রে, গামা-রে কিংবা এক্স-রে। এগুলো শরীরের মধ্যে ডিএনএ পর্যায়ে পরিবর্তন আনতে সক্ষম। মোবাইল টাওয়ারের রেডিয়েশন নন-আয়োনাইজিং। মোবাইল টাওয়ারের যন্ত্রপাতির ইএমএফ রেডিয়েশন বিষয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে নির্দিষ্ট মানদন্ড আছে। সে অনুযায়ী তৈরি করে সারা বিশ্বে সরবরাহ করা হয়।
ড. শামসুজ্জোহা বলেন, সুপরিকল্পিত যথেষ্ট সংখ্যক টাওয়ার থাকলে তা কম ক্ষমতার রেডিয়েশন ছড়াবে এবং তা তত বেশি নিরাপদ। আমরা আশা করি এই টাওয়ার রেডিয়েশন নিয়ে জনমনে যে বিভ্রান্তি আছে তা দূর হবে। জরিপ করতে গিয়ে কয়েকটি টাওয়ারের ওপরে পাখির বাসা দেখেছি। পাখিরা দীর্ঘদিন ধরে সেখানে আছে এবং বংশ বৃদ্ধি করে যাচ্ছে। অনেক ভবনের ছাদে বাগান করা হয়েছে এবং তাতে খুব ভালো সব্জি ফলন হচ্ছে। বুয়েটের অধ্যাপক সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেন, বিটিআরসি সারাদেশে মোবাইল টাওয়ার রেডিয়েশন নিয়ে জরিপ করছে এবং দেশে রেডিয়েশনের লেভেল আন্তর্জাতিক মানদন্ডের অনেক নিচে আছে, এটা খুবই সন্তোষজনক ব্যাপার। টাওয়ার নিয়ে যে বিভ্রান্তি আছে তা দূর হওয়া দরকার। কারণ আমাদের প্রযুক্তি নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। এটা নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
বিটিআরসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, জরিপটি হয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, সুন্দরবন, ফেনী, রাজশাহী, সিলেট, রংপুর ইত্যাদি এলাকায়। ৭০টি বিটিএসে জরিপ চালানো হয়।
অ্যামটব মহাসিচব এস এম ফরহাদ বলেন, সামনে যখন ফাইভ-জি আসবে তখন আমাদের অনেক বেশি সাইটের প্রয়োজন হবে। তাই শুধু শুধু আতংকিত হয়ে প্রযুক্তিকে রুদ্ধ করার কোনো যুক্তি নেই। তাহলে আমরা অনেক পিছিয়ে পড়বো। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক শুধু অনুমানের ভিত্তিতে ছড়ানো হচ্ছে যে মোবাইল টাওয়ারের রেডিয়েশন মানুষ বা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এটা একেবারেই সত্য নয়। যারা প্রচারণা চালাচ্ছে তাদের এ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ না করয় এক তরফা উপস্থাপনা হল কিনা জানতে চাইলে অ্যামটব মহাসিচব বলেন, এখানে পক্ষ-বিপক্ষের কথা নেই। যারা বক্তব্য দিয়েছেন কোন প্রমাণের ভিত্তিতে এসব কথা বলেছেন তার সঠিক জবাব দিতে পারবেন। তারা ভুল ধারণানার উপর আছেন।
বিটিআরসির উদ্যোগে ও অ্যামটবের আয়োজনে এই আলোচনায় আরো অংশ নেন স্পেকট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম শহিদুল আলম, হুয়াওয়ে টেকনলজিস (বাংলাদেশ)-এর মার্কেটিং বিভাগের পরিচালক এস এম নাজমুল হাসান।
ঘর-বাড়ির ছাদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, উপাসনালয়, জেলখানা, প্রত্মতাত্তি¡ক স্থাপনা ও স্থানসহ ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় মোবাইল টাওয়ারের নিঃসৃত বিকিরণ জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ক্ষতি করছে কি না তা খতিয়ে দেখতে সমীক্ষা করতে বলেছিল হাই কোর্ট গতবছরের ২৫ এপ্রিল। একটি রিট আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট বেঞ্চ বিটিআরসিকে চার মাসের মধ্যে সমীক্ষা চালিয়ে প্রতিবেদন দাখিলের পাশাপাশি মোবাইল ফোন ব্যবহারের সময় তার থেকে কী পরিমাণ বিকিরণ শরীর গ্রহণ করছে (স্পেসিফিক অ্যাবসরপশন রেট বা এসএআর মান) তা নির্ণয় করে প্রতিবেদন দিতে বলে। বিটিআরসির হিসাবে সব অপারেটরদের প্রায় ৩৩ হাজার টাওয়ার রয়েছে।#

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন