বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

বিটিআরসি দিলো শুধু সমাধানের আশ্বাস

মোবাইল অপারেটরদের সেবা নিয়ে অসংখ্য অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৩ আগস্ট, ২০২১, ১২:০১ এএম

মোবাইল ফোন অপারেটরদের সেবা নিয়ে অসংখ্য অভিযোগ গ্রাহকদের। নেটওয়ার্ক সমস্যা ইন্টারনেটের ধীরগতি, মোবাইল ইন্টারনেটের মূল্য, প্যাকেজ নিয়ে কারসাজি, কলড্রপ, মিউট কল, এমএনপি সেবা, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের মূল্য নিয়ে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থার (বিটিআরসি) গণশুনানিতে অভিযোগ করেছেন গ্রাহকরা। গ্রাহকদের এসব অভিযোগের বিপরীতে বিটিআরসি কখনো অপারেটরদের জন্য ঢাল হয়ে কথা বলেছে, কখনো বা দিয়েছেন সমাধানের আশ্বাস। এর আগে ২০১৬ ও ২০১৯ সালের গণশুনানিতেও প্রায় একই রকম অভিযোগের পর আশ্বাস দিয়েছিল নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানটি।

গতকাল রোববার ভার্চুয়াল মাধ্যমে আয়োজিত এই গণশুনানিতে গ্রাহকরা ভার্চুয়াল মাধ্যমে প্রশ্ন করলে বিটিআরসি কর্মকর্তারা সংস্থার সম্মেলন কক্ষ থেকে এগুলোর জবাব দেন।
গণশুনানি কমিটির সভাপতি বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, আমরা অনেক ধরনের অভিযোগের কথা শুনলাম। কিছু অভিযোগের তাৎক্ষণিক সমাধান দেওয়া হয়েছে। আমরা সব সময় সেবার মান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। খুব বেশি কথা বলতে চাই না, সব তথ্য নিয়েই সব বিষয়ে কথা বলব। আমরা চাই ভুলগুলো ধরিয়ে দিন আমরা সেগুলো সমাধান করব। এবার গণশুনানিতে ২৬টি বেশির প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়। এতে অংশ নিতে ইচ্ছুকরা আগে থেকেই অনলাইনে নিবন্ধিত ছিলেন।
চাঁদপুর থেকে নিয়ামুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, টাওয়ারের এক কিলোমিটারের মধ্যে থেকেও নেটওয়ার্ক পাওয়া যাচ্ছে না বিভিন্ন অপারেটরের। এ বিষয়ে টেলিটককে অভিযোগ দিয়েও কোনো সমাধান পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে বিটিআরসি কর্মকর্তারা জানান, নেটওয়ার্ক স¤প্রসারণে অপারেটররা কাজ করছে, নতুন টাওয়ার লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে এবং তারা অপারেশনে গিয়েছে।

ফোরজি ইন্টারনেটের গতি ২০ এমবিপিএস থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে ৫ এমবিপিএস বা তারও কম, আবার প্রান্তি পর্যায় ৩ এমবিপিএসও পাওয়া যায় না। বিটিআরসির এ বিষয়ে ভূমিকা কি? একজন গ্রাহক প্রশ্ন করলে- ইঞ্জিনিয়ারিং ও অপারেশন্স বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়, গ্রাহক প্রান্তে ইন্টারনেটের গতি পারিপার্শিক অবস্থা দ্বারা অনেকাংশে প্রভাবিত করে। বিশেষত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এবং অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে মোবাইল নেটওয়ার্ক সক্ষমতার সুষম ব্যবহার নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে যায়। এ সকল বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সরকার অনুমোদিত রেগুলেশনে ফোরজি গতির গড় নি¤œ-সীমা নির্ধারণ করা আছে ৭ এমবিপিএস। এ পর্যন্ত বিটিআরসি পরিচালিত ড্রাইভ টেস্টে কোন কোন স্থানে ২৫ এমবিপিএস পর্যন্ত ফোরজি গতি পেয়েছে বিটিআরসি। বিভিন্ন অপারেটরের ফোরজি নেটওয়ার্ক এখনো স¤প্রসারিত হচ্ছে। ফলে ধারাবাহিকভাবে সকল এলাকায় ফোরজিসহ ব্রডব্যান্ড মোবাইল সেবা আরও মানসম্মতভাবে প্রাপ্তি সম্ভব হবে। বর্তমানে বিপুল সংখ্যক গ্রাহকদের মানসম্মত সেবা প্রদান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মোবাইল অপারেটরদের আরও অধিক তরঙ্গ ব্যবহারের বিষয়টি নিয়ে বিটিআরসি কাজ করছে। অপারেটররা আরও অধিক তরঙ্গ ব্যবহার শুরু করলে সকল ক্ষেত্রে মানসম্মত সেবা প্রদান নিশ্চিত করা অধিকতর সহজ হবে।

কমিশনের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, বিটিআরসি সিস্টেম রিপোর্ট, ড্রাইভ টেস্ট ইত্যাদি কার্যক্রমের মাধ্যমে নিয়মিতভাবে অপারেটরদের ব্রডব্যান্ড সেবার মান পর্যবেক্ষণ করছে এবং এর সম্পসারণও যাচাই করছে। এ বিষয়ে সময়ে সময়ে অপারেটরদের সেবার মান উন্নতিকল্পে নির্দেশনাও জারি করা হচ্ছে। ইঞ্জিনিয়ারিং ও অপারেশন্স বিভাগ জানায়, ইতোমধ্যে ঢাকা শহর, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের ৯৮টি উপজেলায় উক্ত ড্রাইভ-টেস্ট কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। ড্রাইভ টেস্ট হতে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনায় দেখা যায়, গ্রাহক পর্যায়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রে গতি ৫ এমবিপিএস এর বেশী রয়েছে। যে সকল ক্ষেত্রে অপারেটররা কাক্সিক্ষত মান অর্জনে ব্যর্থ হয়, সে সকল ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অপারেটরদের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

মোবাইল অপারেটরদের সেবার মান সন্তোষজনক নয়, ইন্টারনেটের গতি থাকে না, কলড্রপ হয়, নেটওয়ার্ক সমস্যার বিষয়ে একজন প্রশ্ন করলে বিটিআরসি জানায়, মোবাইল সেবার মান বেশ কয়েকটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে। যেমন, তরঙ্গ ব্যবহারের পরিমাণ (অপারেটরদের) ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্ক যত্রতত্র কাটা যাওয়া, তথাযথ স্থানে মোবাইল টাওয়ার স্থাপন করতে না পারা, গ্রামীন/শহরতলী এলাকায় মোবাইল টাওয়ার এর ব্যাটারী ও যন্ত্রংশ চুরি, টাওয়ার বিদ্যুৎ সরবরাহ ইত্যাদি। এ সকল ক্ষেত্রে সেবার মান উন্নতিকল্পে প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করে বিটিআরসি অব্যাহতভাবে কাজ করছে। কলড্রপ বিটিআরসি নির্ধারিত সীমার ২ শতাংশের মধ্যে আছে বলেও জানানো হয়।

গণশুনানিতে সোহাগ কায়সার নামে একজন নম্বর ঠিক রেখে অপারেটর বদলের এমএনপি সেবা নিয়ে ভোগান্তির কথা তুলে ধরে বলেন, এক অপারেটর থেকে অন্য অপারেটরে গেলেও কয়েকদিন পর নেটওয়ার্ক চেইঞ্জ হয়, এতে ভোগান্তিতে পড়েছিলাম। বিটিআরসি মহাপরিচালক (সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিসেস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসিম পারভেজ বলেন, অপারেটর বদলে একটি নিদিষ্ট সময় পরে নেটওয়ার্ক পরিবর্তন হয়। তাও এ বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হবে গ্রাহকদের অসুবিধা হচ্ছে কিনা।
শিপু সাহা নামে এক গ্রাহকের অভিযোগ, গ্রামীণফোন থেকে ৬৮ টাকা অতিরিক্ত ব্যালেন্স কেটে নেওয়ার পর অভিযোগ দিয়েও কোনো সমাধান পাওয়া যায়নি। এই সময় তার নম্বর যাচাই করে বিটিআরসি কর্মকর্তারা জানান, প্লাস ৮৮ দিয়ে কল করাতে তার খরচ বেশি হয়েছে, অতিরিক্ত কোনো টাকা কেটে নেওয়া হয়নি।
আবদুল কাইয়ূম নামে বাংলালিংকের এক গ্রাহক অভিযোগ করেন, না জানিয়ে একটি সেবায় যুক্ত করে অতিরিক্ত টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে, অভিযোগ দিলেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন বিটিআরসি কর্মকর্তারা।

শুনানিতে মালেক নামে একজন অভিযোগ করে বলেন, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগে এলাকায় এলাকায় পেশিশক্তি দেখানো হচ্ছে। ইচ্ছামত যে কারো লাইন নেওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া আইএসপিগুলো তাদের ইচ্ছেমত দাম রাখছে।
বিটিআরসি মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসিম পারভেজ বলেন, গ্রাম থেকে শহর, সারাদেশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগের মাসিক ফি, বেসরকারি নেটওয়ার্ক ট্রান্সমিশন সেবাদাতা (এনটিটিএন) এবং ইন্টারনেট গেইটওয়ে (আইআইজি) ট্যারিফ বেঁধে দেওয়া হয়েছে। তাই আইএসপিগুলো আর তাদের মত করে দাম নিতে পারবে না। কোনো এলাকায় কোনো আইএসপির অন্য সেবাদাতাকে বাধা দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেলে অবশ্যই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান কর্মকর্তারা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন