১৮ ফেব্রæয়ারি, ১৯৬৯। চলছে গণঅভ্যুত্থানের উত্তাল সময়। ঠিক সেই সময়ে নিজের জীবন দিয়ে শিক্ষার্থীদের রক্ষা করেছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) তৎকালীন প্রক্টর ও রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. শামসুজ্জোহা। নির্মমভাবে শহীদ হয়েছিলেন পাকিস্তানি বর্বর সেনাদের গুলিতে। এরপর পাঁচ দশক পেরিয়ে গেলেও মূল্যায়ন হয়নি ড. জোহার আত্মত্যাগ। এখনও জাতীয় শিক্ষক দিবসের স্বীকৃতি মেলেনি দেশের ইতিহাসে প্রথম বুদ্ধিজীবী এই শহীদের।
বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি, তার এই হত্যার দিবসটিকে ‘শিক্ষক দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হোক। কিন্তু আজও স্বীকৃতি না মেলায় শুধুমাত্র রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের গÐিতে ‘শিক্ষক দিবস’ হিসেবেই সীমাবদ্ধ থেকে গেছে।
দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচীর আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে ভোরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসন ভবনসহ অন্যান্য ভবনে কালো পতাকা উত্তোলন, সকাল ৭টায় ভিসি অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান, প্রো-ভিসি অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা, চৌধুরী মো. জাকারিয়াসহ প্রশাসনের ঊর্ধতন কর্মকর্তাগণ শহীদ ড. জোহার সমাধি ও জোহা স্মৃতিফলকে পুস্পস্তবক অর্পণ করে এক মিনিট নীরবতা পালন ও মোনাজাত করেন।
এরপর রসায়ন বিভাগ ও শহীদ শামসুজ্জোহা হলসহ অন্যান্য আবাসিক হল, বিভাগ, পেশাজীবী সমিতি ও ইউনিয়ন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব, সাংবাদিক সমিতি, রিপোর্টার্স ইউনিটি, শাখা ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন পুষ্পস্তবক অর্পণ করে।
এদিন সকাল ১০টায় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত হয় জোহা স্মারক বক্তৃতা। এতে ‘বাংলাদেশের উন্নয়নে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার’ শীর্ষক বক্তৃতা করেন রাবির সাবেক ভিসি এবং যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক হাইকমিশনার অধ্যাপক এম সাইদুর রহমান খান। রসায়ন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক বেলায়েত হোসেন হাওলাদারের সভাপতিত্বে এই আয়োজনে প্রধান পৃষ্ঠপোষক ভিসি অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান এবং পৃষ্ঠপোষক প্রো-ভিসি অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়াও বক্তৃতা করেন।
স্মারক বক্তৃতায় সাইদুর রহমান খান বলেন, ড. জোহা ছাত্র শিক্ষক স¤িপ্রতির এক জলন্ত উদাহরণ। ঐতিহাসিক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেফতারকৃত সার্জেন্ট জহরুল হককে ১৫ ফেব্রæয়ারি জেলখানায় গুলি করে হত্যা করা হলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ বাধে। সে সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় শহীদুল্লাহ্ কলাভবনের সামনের শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে ড. জ্জোহা বলেছিলেন, যে কোন ছাত্রের শরীরে গুলি লাগার আগে যাতে আমার গায়ে গুলি লাগে। জোহা তার জীবনদানের মধ্য দিয়ে সেটি প্রমাণ করে গেছেন। স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী এবং তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা আন্দোলন আরও তরান্বিত হয়। তবে দিবসটি জাতীয় শিক্ষক দিবস ঘোষণা করা হয়নি যা আমাদের ব্যথিত করে।
স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে শহীদ জোহার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন ও মোনাজাত করা হয়। এদিকে দিবসটিকে জাতীয় শিক্ষক দিবস ঘোষণার দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া দিবসটিকে জাতীয় শিক্ষক দিবস ঘোষণার দাবিতে সপ্তাহব্যাপী গণস্বাক্ষর কর্মসূচী করছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ফেডারেশন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পেছনে এক সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচীর কথা জানান সংগঠনটির বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক মহব্বত হোসেন মিলন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন