শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

পলিথিন ব্যাগের উৎপাদন বন্ধ করতে হবে

প্রকাশের সময় : ২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি পলিথিনের আগ্রাসন চলছেই। দৈনিক ইনকিলাবের খবর বলা হয়েছে, আইন অনুযায়ী পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও তা দেখার কেউ নেই। পলিথিন উৎপাদন করলে ১০ বছরের জেল ও ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান থাকলেও শুধু রাজধানীতেই প্রতিদিন ১ কোটি ৪০ লাখ পলিথিন ব্যাগ ব্যবহৃত হচ্ছে। এ হিসাবে প্রতিমাসে ব্যবহৃত হচ্ছে ৪১ কোটি পিস। পরিবেশবাদীরা বলছেন, আইন বাস্তবায়নে সরকারে সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। তাদের অভিযোগ, বাজারে পলিথিন ব্যাগের বিরুদ্ধে নিয়মিত মনিটরিং নেই। একারণে পলিথিন ব্যাগ প্রস্তুতকারি প্রতিষ্ঠানগুলো রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলা শহরে দেদারছে উৎপাদন করছে অপচনশীল এসব ব্যাগ। বলা হয়েছে, পলিথিন ব্যাগ তৈরির বেশিরভাগ কারখানাই পুরান ঢাকা কেন্দ্রীক। ঢাকার পলিথিন ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে একাধিক প্রভাবশালী সিন্ডিকেট রয়েছে। মিরপুর, কাওরান বাজার, তেজগাঁও, কামরাঙ্গিরচর ও টঙ্গীতে বেশকিছু কারখানা রয়েছে। যাত্রাবাড়ী থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত গড়ে উঠেছে শতাধিক কারখানা। পলিথিন বাজারজাতকরণের নামে গড়ে ওঠা শক্তিশালী সিন্ডিকেটের কারণে পরিবেশবান্ধব ব্যাগের ব্যবহার নিশ্চিত করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, পলিথিনের প্যাকেট ব্যবহার বন্ধে ও পাটজাত পণ্যের প্যাকেজিং নিশ্চিতে ম্যান্ডেটরিং অ্যাক্ট বাস্তবায়ন করতে গিয়ে পলিথিন ও প্লাস্টিক ব্যবসায়িদের বাধার সম্মুখিন হতে হয়েছে। তিনি এজন্য পলিথিনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে সবার প্রতি আহ্বান জাানিয়েছেন।
পলিথিনের ক্ষতিকর দিক নতুন করে বলার কিছু নেই। এর ভয়াবহ ক্ষতিকর দিকবিবেচনা করেই ২০০২ সালের পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে বলা আছে, পলিথিন ব্যাগ বিক্রয়, প্রদর্শন, মজুদ ও বাণিজ্যিকভাবে বিতরণ করা যাবে না। এছাড়াও পরিবেশ রক্ষায় পলিথিনের তৈরি ব্যাগ ব্যবহার নিষিদ্ধ। এ আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে জেল-জরিমানারও ব্যবস্থা রয়েছে। এতে যে কোনো কাজ হচ্ছে না, তা পলিথিনের অবাধ উৎপাদন ও ব্যবহার দেখেই বোঝা যাচ্ছে। সঙ্গতভাবেই প্রশ্ন ওঠে, কেন এমনটা হতে পারছে? রাজধানীর ড্রেনগুলো অকার্যকর হয়ে গেছে পলিথিন ব্যাগের কারণে। এছাড়া অপচনশীল হবার কারণে দীর্ঘদিন প্রকৃতিতে অবিকৃত অবস্থায় থাকায় মাটিতে সূর্যলোক, পানি ও অন্যান্য উপাদান প্রবেশ করতে না পারায় মাটির উর্বরতা শক্তি কমে যাচ্ছে। মাটিতে উপকারি ব্যাকটেরিয়া বিস্তারে বাধা সৃষ্টি করছে। পলিথিনে মোড়ানো গরম খাবার খেলে মানুষের ক্যান্সার ও চর্মরোগের সংক্রমণ হতে পারে। পলিথিনে মাছ, মাংস প্যাকিং করলে তাতে ব্যাকটেরিয়ার সৃষ্টি হয়, যা দ্রুত পচনে সহায়তা করে। উজ্জ্বল রংয়ের পলিথিনে রয়েছে সীসা ও ক্যাডমিয়াম যা শিশুদের দৈহিক বৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত ও চর্ম প্রদাহের সৃষ্টি করে। ঢাকা শহরের পয়ঃনিষ্কাশনের ৮০ ভাগ ড্রেন পলিথিন ব্যাগে জমাট বেঁধে রয়েছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, বুড়িগঙ্গার বর্জ্য অপসারণের যে কর্মসূচী নেয়া হয়েছিল সেখানে দেখা গেছে উত্তোলনকৃত বর্জ্যরে অধিকাংশই পলিথিন। এটা সহজেই বোধগম্য যে, অপচনশীল পলিথিন কোথাও না কোথাও জমা হবেই। স্বাভাবিকভাবেই এসব পলিথিন নদীতে গিয়ে জমা হয়। পলিথিনের এসব ক্ষতিকারক দিক বিবেচনায় এর হাত থেকে নিস্তার পেতে উৎপাদন বন্ধের কোন বিকল্প নেই।
পলিথিনের ক্ষতিকারক দিক নিয়ে ইতোপূর্বেও বহুবার লেখা হয়েছে। বাস্তবে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী যাই বলুন না কেন, বাস্তব হচ্ছে, এর সাথে অবৈধ অর্থের যোগসাজশ থাকার কারণেই এটা বন্ধ করা হয়ত সম্ভব হচ্ছে না। যাদের দেখভাল করার কথা তারা উদাসীন রয়েছেন। আইন আছে, জনসমর্থন রয়েছে, সময়ের দাহিদা আছে অথচ তার বাস্তবায়ন না হওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। এই ব্যর্থতার দায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। যা নিষিদ্ধ তা প্রকাশেও উৎপাদন ও ব্যবহার কি করে হচ্ছে? এটা অনাকাক্সিক্ষত, অনভিপ্রেত। আশা করবো, অবিলম্বে পলিথিন উৎপাদন নিষিদ্ধ আইন কার্যকর করা হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন