শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

এনামুল-রূপনের বাড়ি যেন টাকা-সোনার ভান্ডার

ক্যাসিনোকান্ড

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০০ এএম

ক্যাসিনোকান্ডে জড়িত আওয়ামীলীগ নেতা দুই ভাই এনামুল হক ও রূপন ভূঁইয়ার পুরান ঢাকার একটি বাসার ৫টি সিন্দুক থেকে নগদ ২৬ কোটি ৫৫ লাখ ৬০০ টাকা পেয়েছে র‌্যাব। এ ছাড়া ওই বাসা থেকে সোয়া ৫ কোটি টাকার এফডিআরের বই, এক কেজি সোনা, ৯ হাজার ২০০ ইউএস ডলার, ১৭৪ মালয়েশিয়ান রিংগিত, ৩৫০ভারতীয় রুপি, ১ হাজার ৫৯৫ চায়নিজ ইউয়ান, ১১ হাজার ৫৬০ থাই বাথ ও ১০০ দিরহাম জব্দ করেছে র‌্যাব। পুরান ঢাকায় ওয়ারীর লালমোহন সাহা স্ট্রিট এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতা সেই দুই ভাই এনামুল-রূপনের বাসা যেন টাকা-সোনার ভান্ডার। গত সোমবার দিনগত রাত থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে পুরান ঢাকার ওই বাসায় অভিযান চালানো হয়। অভিযানের নেতৃত্ব দেন র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম। র‌্যাব সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি এনামুল হক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রূপন ভূঁইয়া। দুই ভাইয়ের এ বাড়িটি ছিল টাকার গোডাউন।
র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল রকিবুল হাসান সাংবাদিকদের জানান, পুরান ঢাকার ওই বাসার ঠিকানা ১১৯/১ লালমোহন সাহা স্ট্রিট। গত সোমবার রাত সাড়ে ১২টায় র‌্যাব ওই বাসায় অভিযান শুরু করে। এর নেতৃত্বে ছিলেন র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম। তিনি বলেন, সরু গলির ওই বাসায় পাঁচটি সিন্দুকভর্তি টাকা ও পাঁচ কোটি টাকার এফডিআরের বইয়ের পাশাপাশি ক্যাসিনোর সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। বাসাটি খুব ছোট আকারে। এখানে মাত্র একটি চৌকি আছে। এটি ছয়তলা ভবনের নিচতলার একটি বাসা। ধারণা করা হচ্ছে, এ বাসায় টাকা রেখে কেউ এর পাহারায় থাকতেন। তবে এখান থেকে কাউকে আটক করা যায়নি। উদ্ধার করা টাকা গণনার পর দেখা যায়, সেখানে ২৬ কোটি ৫৫ লাখ ৬০০ টাকা রয়েছে। এনামুল হক ও রূপন ভূঁইয়া এখন কারাগারে। ক্যাসিনো কারবারি এই দুই ভাইকে গত জানুয়ারি মাসে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গত বছর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর এই দুই ভাই আলোচনায় আসেন। শুরু থেকেই তারা পলাতক ছিলেন।

র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল রাকিবুল হাসান বলেন, আমরা এখন এ ব্যাপারে আইনগত প্রক্রিয়া গ্রহণ করব। এসব দেশি-বিদেশি মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার থানায় হস্তান্তর করার মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা হবে। জব্দ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার কীসের বা কোথা থেকে এলো জানতে চাইলে র‌্যাব-৩ এর সিও বলেন, আমরা এটা তদন্ত করে বের করব। কোথা থেকে এসেছে, কার কাছে ছিল, গন্তব্য কোথায় ছিল তা ইনভেস্টিগেশন করে বের করা হবে। তিনি আরও বলেন, আমরা যে বাসায় অপারেশন পরিচালনা করেছি, সেই ছয়তলা ভবনটি এনু-রুপনের বাড়ি। এর আগে তাদের আরেক বাসায় অভিযান পরিচালনা করা হয়েছিল।

ওই অভিযানের পর কি এই মুদ্রা-স্বর্ণালঙ্কার এ বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে- এমন প্রশ্নের উত্তরে রাকিবুল হাসান বলেন, সম্পূর্ণ গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আমরা এ বাসায় অভিযান পরিচালনা করেছি। র‌্যাব-৩এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফয়জুল ইসালাম জানিয়েছেন, ক্যাসিনো কান্ডে জড়িত দুই ভাইয়ের ঢাকায় বহু ফ্ল্যাটবাড়ি রয়েছে। এখন পর্যন্ত তারা ২৪টি বাড়ির খোঁজ পেয়েছেন। অনুসন্ধানের একপর্যায়ে তারা পুরান ঢাকার এ বাড়ির খোঁজ পান। এর পরপরই এখানে অভিযান চালিয়ে এসব সম্পদ জব্দ করা হয়। গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর এনামুল ও রূপনের বাসায় এবং তাদের দুই কর্মচারীর বাসায় অভিযান চালায় র‌্যাব। সেখান থেকে পাঁচ কোটি টাকা এবং সাড়ে সাত কেজি সোনা উদ্ধার করা হয়। এরপর সূত্রাপুর ও গেন্ডারিয়া থানায় তাঁদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়।

র‌্যাবের একজন কর্মকর্তা জানান, তারা ওই বাসায় গিয়ে দেখতে পান একটি কক্ষে পাঁচটি ভল্ট সাজানো আছে। এর মধ্যে একটি ভল্টের ড্রয়ার ভাঙ্গা। বাকি ভল্টগুলোর তালা ভেঙ্গে অবাক হয়ে যান র‌্যাব কর্মকর্তারা। প্রতিটি ভল্টে ১০০০ টাকার নোটের বান্ডিল আর বান্ডিল। সব বান্ডিল বের করেন তারা। অবশেষে কক্ষের মাঝখানে টাকা রাখার পর যেন টাকার পাহার হয়ে যায় সেটি। হাতে গুনে এই টাকার হিসাব করা দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। এ কারণে সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করে র‌্যাব। গতকাল সকাল ৯টার দিকে ব্যাংক খোলার পর একটি ব্যাংক থেকে দুটো টাকা গোনার মেশিন নিয়ে আসেন। সকাল ১০টা থেকে র‌্যাবের ৩/৪ জন কর্মকর্তা টাকা গোনা শুরু করেন। সেই টাকা গুনতে গুনতে বেজে যায় বেলা ১টা। ৩ ঘণ্টা মেশিন দিয়ে টাকা গুনে র‌্যাব দেখতে পায় সেখানে রয়েছে ২৬ কোটি ৫৫ লাখ ৬০০ টাকা। শুধু তাই নয় সেই ফ্ল্যাটটি থেকে র‌্যাব জব্দ করেছে সোয়া পাঁচ কোটি টাকার এফডিআরের বই, এক কেজি সোনা, ৯ হাজার ২০০ ইউএস ডলার, ১৭৪ মালয়েশিয়ান রিংগিত, ৩৫০ ভারতীয় রুপি, ১ হাজার ৫৯৫ চায়নিজ ইউয়ান, ১১ হাজার ৫৬০ থাই বাথ ও ১০০ দিরহাম।

র‌্যাব সূত্র জানায়, এনামুল ও রূপন গত ছয় থেকে সাত বছরে পুরান ঢাকায় বাড়ি কিনেছেন কমপক্ষে ১২টি। ফ্ল্যাট কিনেছেন ৬টি। পুরোনো বাড়িসহ কেনা জমিতে গড়ে তুলেছেন নতুন নতুন ইমারত। স্থানীয় লোকজন জানান, এই দুই ভাইয়ের মূল পেশা জুয়া। আর নেশা হলো বাড়ি কেনা। জুয়ার টাকায় এনামুল ও রূপন কেবল বাড়ি ও ফ্ল্যাটই কেনেননি, ক্ষমতাসীন দলের পদও কেনেন বলে জানা যায়। ২০১৮ সালে এনামুল পান গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতির পদ। আর রূপন পান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ। তাদের পরিবারের পাঁচ সদস্য, ঘনিষ্ঠজনসহ মোট ১৭ জন আওয়ামী লীগ ও যুবলীগে পদ পান। তারা সরকারি দলের এসব পদ-পদবি জুয়া ও ক্যাসিনো কারবার নির্বিঘেœ চালানোর ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে আসছিলেন বলে স্থানীয় লোকজন জানান।
উল্লেখ্য, গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে সরকার ঘোষিত শুদ্ধি অভিযানের অংশ হিসেবে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরূ করে র‌্যাব। সেদিন থেকে পর্যায়ক্রমে ঢাকার ফকিরাপুলের ইয়ংমেনস ক্লাব, মোহামেডান, ওয়ান্ডারার্স, ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং, দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাব, আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ, গুলিস্তানের মুক্তিযোদ্ধা ক্লাব এবং কলাবাগান ক্রীড়াচক্রে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চালানো হয়। এসব অভিযানে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, শফিকুল আলম ফিরোজ, ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, এনামুল হক আরমান, হাবিবুর রহমান মিজান, তারেকুজ্জামান রাজিব ও ময়নুল হক মঞ্জুসহ সরকারি দলের অনেক নেতা গ্রেফতার হন। জব্দ করা হয় কোটি কোটি টাকা, মাদক ও ক্যাসিনো সরঞ্জাম।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (14)
Rabiul Hoque ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:৪৫ এএম says : 0
অভিযান পরিচালনাকারী সংশ্লিষ্ট সবাই কে জানাই সংগ্রামী সালাম ও আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। সরকারের প্রতি আরো কৃতজ্ঞতা জানাবো যদি - ৬৪ জেলায় এই ভাবে অভিযান পরিচালনা করে।
Total Reply(0)
Afsana Zerin ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:৪৭ এএম says : 0
বড় নেতাদের ধরা হয় না,হয় পাতি ক্রিমিনালদের রাঘব বোয়াল ধরা ছোয়ার বাইরে!! ক্যাসিনো তে কারা যায় তাদের লিষ্ট দেন
Total Reply(0)
Ashik ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:৪৮ এএম says : 0
এসব অপরাধীদের যেসব অফিসার ধরছেন তাদের পুরস্কার দাওয়া উচিত, তাহলে বাকি আইনের লোক ও আরো অনেক অপরাধী ধরতে আগ্রহী হবে। এত কটি কটি টাকা উদ্ধার করছে, ওনাদেরো বড় অংকের পুরস্কার দাওয়া উচিৎ
Total Reply(0)
Nurnabi ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:৫১ এএম says : 0
পাতি নেতাদের গরে কোটি কোটি কেজি কেজি সোনা বড় নেতাদের ধরা হলে কি অবস্থা হয় আল্লাহ ভালো জানে আল্লাহ আমাদের দেশটাকে রক্ষা করুন আমিন
Total Reply(0)
MD R H Riyaz ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:৫৪ এএম says : 0
উন্নয়ন উন্নয়ন উন্নয়ন এখন আওয়ামীলীগ নেতাদের ঘরে ঘরে..
Total Reply(0)
তানবীর ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:৫৫ এএম says : 0
দেশের মানুষ না খেয়ে মরে আওয়ামীলীগের ১০ম শ্রেনীর লোকের কাছে টাকা আর টাকা
Total Reply(0)
Ahemd Sohel ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:৫৭ এএম says : 0
প্রতিটা আঃলীগের বাসায় বাসায় এভাবে তালাসি নেওয়া হোক,, আমি মনে করি একে একটা নেতার বাড়ি হতে পারে একে একটা ব্যাংক,, তাই তাদের বাড়ি ঘরও তালাসি নেওয়া হোক,,
Total Reply(0)
MD Towhidul Islam ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:৫৮ এএম says : 0
RAB পাশাপাশি সেনাবাহিনী অভিযান পরিচালনা করলে পাপিয়া,সম্রাট থাকবেনা,,দেশ হবে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ
Total Reply(0)
Sanjida Khan ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:৫৮ এএম says : 0
এই টাকা দিয়ে যারা টাকার অভাবে চিকিত্সা করাতে পারেনা তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক।
Total Reply(0)
Ovi ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:৫৯ এএম says : 0
Allah apni mohan....astea astea shob fas hobea ak din
Total Reply(0)
Ruhul Amin ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ২:২৩ এএম says : 0
টেন্ডারবাজদের টাকায় দেশে ২৫ লাক মোটরসাইকেল হইছে.
Total Reply(0)
borhan ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১০:৩৩ এএম says : 0
Please help all...
Total Reply(0)
borhan ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১০:৩৩ এএম says : 0
Please help all...
Total Reply(0)
borhan ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১০:৩৩ এএম says : 0
Please help all...
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন