শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

স্বতঃস্ফূর্ত ঈদ উদযাপন

প্রকাশের সময় : ১০ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

১ জুলাই গুলশানের একটি রেস্টুরেন্টে সন্ত্রাসী হামলা ও ঈদের দিন দেশের বৃহত্তম ঈদের নামাজের অনুষ্ঠানস্থল কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ার অদূরে আরেকটি সন্ত্রাসী হামলা সত্ত্বেও দেশের মানুষ শঙ্কিত না হয়ে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ঈদ উৎসব পালন করেছে। রাজধানীর পার্ক, আধুনিক বিনোদন কেন্দ্রসহ দেশের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে মানুষের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদের ছুটিতে মানুষ অনাবিল আনন্দে ভেসেছে। পর্যটন কেন্দ্রগুলোর কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। ঈদের ৯ দিনের দীর্ঘ ছুটিতে অসংখ্য মানুষ পরিবার নিয়ে পর্যটন শহর কক্সবাজারসহ অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রে ভিড় করেন। কক্সবাজারের প্রায় ৪০০ হোটেল-মোটেলে পর্যটকে পরিপূর্ণ ছিল। পর্যটকদের স্থান সংকুলান করতে হোটেল-মোটেল কর্তৃপক্ষকে হিমশিম খেতে হয়েছে। পর্যটকদের এই বিপুল উপস্থিতিতে তাদের ব্যবসাও বেশ ভালো হয়েছে। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত হাজার হাজার পর্যটকে মুখরিত হয়েছে। রাজধানী ও এর আশপাশের বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে মানুষের ভিড় ছিল অস্বাভাবিক। বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের সরাসরি সম্প্রচারে মানুষের এই আনন্দ ও উচ্ছ্বাসের চিত্র তুলে ধরা হয়। প্রত্যেকের চোখে-মুখে ছিল নির্মল আনন্দ উপভোগের তৃপ্তি।
ঐতিহ্যগতভাবেই আমাদের দেশের মানুষ উৎসব ও ফুর্তিপ্রিয়। ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে যে কোনো উৎসবে তারা অংশগ্রহণ করে। আনন্দে মেতে ওঠে। উৎসবকে সার্বজনীন রূপ দেয়। যেখানে ধনী-দরিদ্র সকলেরই সমান অংশগ্রহণ থাকে। এটাই বাংলাদেশের মানুষের হাজার বছরের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। যে কোনো বিপদে-আপদে সমব্যথী হয়ে তারা একে অপরের পাশে দাঁড়ায়। আবার যে কোনো অঘটন ও অসহিষ্ণুতা এক হয়ে মোকাবিলা করে। বিশ্বের আর কোথাও নাগরিকদের মধ্যে এমন নিবিড় ও আত্মিক টান দেখা যায় না। আমাদের দেশের পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন, শাসন-বারণ একটি আদর্শিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। একে অপরের প্রতি দরদী হয়ে ওঠা আবার কোনো অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে তা সুশৃঙ্খলভাবে সমাধান করা চিরায়ত রীতি। রাজনৈতিক বিভাজন থাকলেও পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধনে তা খুব একটা চিড় ধরাতে পারে না। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এই বিভাজন কিছুটা প্রভাব ফেললেও তা যে বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেনি, তা বিভিন্ন উৎসবে সাধারণ মানুষের প্রাণোচ্ছল অংশগ্রহণের মধ্য দিয়েই বোঝা যায়। এবারের ঈদের আগে ও ঈদের দিন দু’টি মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক ঘটনা ক্ষণিকের জন্য মানুষকে আতঙ্কিত ও থমকে দিলেও চিরায়ত ঈদের আনন্দকে তারা ঠিকই উপভোগ করেছে। বিনোদন ও পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে মানুষের বিপুল উপস্থিতির দৃশ্য দেখে বোঝা যায়, তারা সন্ত্রাসী ঘটনাকে পাশ কাটিয়ে আনন্দ-উল্লাসকেই অগ্রাধিকার দিয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এটাই আমাদের দেশের মানুষের চিরায়ত বৈশিষ্ট্য। ঈদ বা অন্যান্য উৎসবের আনন্দ কোনো কিছুতেই তারা ত্যাগ করতে চায় না। আনন্দঘন পরিবেশে এবারের ঈদ উদযাপন করা তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। সকল শঙ্কাকে উপেক্ষা করেই রাজধানী ছেড়ে লাখ লাখ মানুষ গ্রামের বাড়িতে ছুটে গেছে প্রিয়জনদের সাথে ঈদ করার জন্য। ঈদ উদযাপন শেষে আবার আনন্দের রেশ নিয়েই স্ব-স্ব কর্মস্থলে তারা ফিরে আসছে। দেশের মানুষের যুথবদ্ধ এই মানসিকতা ও একতাকে ধরে রাখার দায়িত্ব সরকারের। মানুষ ঈদ ও অন্যান্য উৎসবে একসাথে মিলিত হয়ে সরকার ও রাজনীতিবিদদের এই বার্তাই দিচ্ছে, তারা যেন মানুষের এই একতাকে কাজে লাগিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যান। শুধু রাজনৈতিক দ্বিধাবিভক্তি ও পারস্পরিক দোষারোপের সংস্কৃতিতে লিপ্ত থাকলে অঘটন বাড়বে বৈ কমবে না।
ঈদে আনন্দ ভাগাভাগি করার ক্ষেত্রে কোনো শঙ্কাই মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। তারা ঘর থেকে বের হয়ে আত্মীয়-স্বজনের বাসা-বাড়িতে গেছে, ঘোরাফেরার জন্য বিনোদন কেন্দ্রগুলোতেও গেছে। এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও আনন্দমুখর মানুষের পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে, যা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। বিভিন্ন বিনোদন ও পর্যটন কেন্দ্রে চোখে পড়ার মতো নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল। তবে এ কথাও স্মরণে রাখা প্রয়োজন, অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা যেমন ভালো, তেমনি  অনেক সময় তা মানুষের মনেও শঙ্কা জাগায়। আমাদের দেশের মানুষ স্বাভাবিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যেই নির্বাধ আনন্দ উপভোগ করতে চায়। কাজেই আমরা মনে করি, ঈদ ও অন্যান্য উৎসব মানুষ যাতে স্বাভাবিকভাবে শঙ্কাহীন চিত্তে উদযাপন করতে পারে, এ পরিবেশ সরকারকে সৃষ্টি করতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন