আইয়ুব আলী : এবার পবিত্র ঈদুল ফিতরের টানা ছুটিতে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের রাস্তাঘাট ফাঁকা হলেও বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে শিশুসহ সর্বস্তরের মানুষের উপচেপড়া ভিড় চোখে পড়ে। নগরীর পাশাপাশি গ্রামে-গঞ্জেও সর্বত্র উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। আবহাওয়া ভাল থাকায় চট্টগ্রামের বিনোদনপ্রেমী মানুষ ঈদের আনন্দে নগরী এবং এর আশপাশের এলাকার বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে ছুটে যাচ্ছেন।
এদিকে সম্প্রতি রাজধানীর গুলশান ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় রক্তাক্ত জঙ্গি সহিংসতার প্রেক্ষিতে চট্টগ্রামের বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে জনসমাগমের কথা মাথায় রেখে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সিএমপি সূত্রে জানা যায়, নগরীর পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, ফয়ে’স লেক, শিশুপার্ক, অভয়মিত্র ঘাট, তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু, নেভাল টু বিচসহ কমপক্ষে ১৫টি ট্যুরিস্ট স্পট ঘিরে নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে। সম্ভাব্য যেকোন ধরনের নাশকতা মোকাবিলায় সাদা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারিও জোরদার করা হয়েছে।
নগরীর পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, ফয়ে’স লেক ও সি ওয়ার্ল্ড অ্যামিউজমেন্ট পার্কে গত বৃহস্পতিবার ঈদের দিন থেকেই সর্বস্তরের মানুষের স্রোত পরিলক্ষিত হয়। সকাল থেকে সেখানে রীতিমতো ভিড়ের সৃষ্টি হয়েছে। কেউ ইঞ্জিনচালিত নৌকায় চেপে লেক ভ্রমণ করছে। অ্যামিউজমেন্ট পার্কের রাইডে শিশুদের সঙ্গে সঙ্গী হচ্ছেন বড়রাও। আবার ওয়াটার পার্ক সি ওয়ার্ল্ডে গিয়ে জলকেলিতে মেতে উঠছেন তরুণ-তরুণীরা। ঈদের লম্বা ছুটি কাটাতে অনেকে বিভিন্ন জেলা থেকে এসে উঠেছেন ফয়ে’স লেক রিসোর্টে।
নগরীর অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে লাখো মানুষের মিলনমেলা। ঈদের দিন থেকে পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে দর্শনার্থীরা ভিড় করছে। মা-বাবারা ছুটছেন তাদের ছেলেমেয়েদের নিয়ে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে। ঈদের দিন বিকেল থেকে শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী ছাড়াও বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ ভিড় জমিয়েছেন পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে।
পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত আগ্রাবাদ কর্ণফুলী শিশু পার্ক, স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিয়া শিশু পার্ক, পারকি বিচ, শাহ আমানত সেতু, জিয়া কমপ্লেক্স, কালুরঘাট সেতু, জিয়া স্মৃতি জাদুঘর, আগ্রাবাদ প্রতœতাত্ত্বিক জাদুঘর, নেভাল এভিনিউ মেরিটাইম মিউজিয়াম, শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের পাশে বাটারফ্লাই পার্কসহ নগরীর বাইরে নবসৃষ্ট আনোয়ারা হিলটপ পার্কেও দর্শনার্থীদের প্রচুর ভিড়। অনেকে আবার চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটির উদ্দেশে ছুটছেন।
দর্শক আকর্ষণে এসব পর্যটন কেন্দ্রগুলোতেও নানা আয়োজন রাখা হয়েছে। বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে প্রতিটি এলাকা। পতেঙ্গা সৈকতে ঈদের দিন সকাল থেকে পর্যটকদের ঢল নামছে। চট্টগ্রাম নগরীতে যারা ঈদ করেছে তাদের অনেকেই ছেলে সন্তান নিয়ে সময় কাটানোর জন্য ছুটে যান সৈকতে। নগরীর আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকেও লোকজন দলবেঁধে পতেঙ্গা সৈকতে আসছেন। পর্যটকদের ভারে মুখরিত সৈকতের দোকানগুলোতেও জমে উঠেছে কেনাকাটা।
নগরীর শিশু পার্কগুলোতেও শিশুদের পাশাপাশি বড়দেরও ভিড়। নগরীতে লোকসংখ্যার তুলনায় বিনোদন কেন্দ্র একেবারেই কম। আর এ কারণে শিশু পার্ক গুলোতে প্রচ- ভিড়। ফয়ে’স লেকস্থ চট্টগ্রামের একমাত্র চিড়িয়াখানায় দর্শকদের ভিড় লেগেই আছে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সব বয়সের মানুষের ভিড়। বিশেষ করে শিশুরা ঈদের আনন্দ বাড়িয়ে নিতে চিড়িয়াখানার বিভিন্ন পশুপাখির খাঁচার সামনে দাঁড়িয়ে জটলা করছে।
নগরীর ওপারে আনোয়ারায় পারকি সমুদ্র সৈকতেও সকাল থেকে যাচ্ছে মানুষ। বিভিন্ন এলাকা থেকে বাস ভাড়া করে পিকনিকের মতো করে লোকজন জড়ো হয়েছে পারকি সমুদ্র সৈকতে। এছাড়া ভাটিয়ারি হ্রদ ও সানসেট পয়েন্ট, ক্যান্টনমেন্টের ক্যাফে টোয়েন্টিফোরে ঘুরছেন মানুষ। অনেকে ওয়েস্টার্ণ ক্রুজে চড়ে কর্ণফুলীর মোহনাও দেখে আসছেন। এছাড়া নগরীর আগ্রাবাদ জাম্বুরি মাঠের শিশুপার্ক, স্বাধীনতা পার্ক, ওয়ার সিমেট্রি, কাট্টলি সমুদ্র সৈকতেও যাচ্ছে মানুষ।
অপরদিকে বৃহত্তর চট্টগ্রামের গ্রামাঞ্চলেও চলছে উৎসবের আমেজ। ছোট-বড় ছেলে-মেয়েরা ছুটে যাচ্ছে এবাড়ি থেকে ওবাড়ি। আবহাওয়া ভাল থাকায় তারা বেজায় খুশি। বিশেষ করে শিশুদের আকর্ষণ ঈদ বখসিশ। প্রায় প্রতি বাড়িতে দুই টাকা, পাঁচ টাকা, দশ টাকা ও বিশ টাকার নতুন নোট শিশুদের জন্য রেখে দেয়া হয়েছে। শিশুরা বুড়োদের পায়ে ধরে সালাম করার পর তাদেরকে দেয়া হয় নতুন নোট। শিশুদের যেন ঈদের খাবার থেকে নতুন টাকা পাওয়ার আনন্দটা বেশি। তবে রিক্সা, টেম্পো, সিএনজি অটোরিকশা চালকদের হাতে বিনোদনপিয়াসী শিশুরা যেন অসহায় হয়ে পড়েছে। এসব বাহনে পাঁচ টাকা ভাড়ার স্থলে ৩০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত নেয়া হচ্ছে।
গতকাল থেকে পরিবার পরিজন নিয়ে ঘরে ফেরা মানুষ শহরে ফিরতে শুরু করেছে। তবে চট্টগ্রাম শহর এখনও অনেকটা ফাঁকা। নাড়ির টানে গ্রামের বাড়িঘরে গিয়ে ফেরার পথে পথিমধ্যে পরিবহন সংকট এবং যানজটের কারণে অনেকে পথে আটকা পড়েছে। গ্রামে পৌঁছতে ঘরমুখো মানুষের যেরূপ কষ্ট হয়েছে, তেমনি ফিরতেও তাদের কষ্টের সীমা নেই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন