বিগত বছরাধীককাল যাবত দক্ষিণাঞ্চলের রাজনীতিতে যথেষ্ঠ স্থবিরতা চলছে। সরকারী দলের এমপিদের বেশীরভাগই ইতোমধ্যে রাজধানী প্রবাসী হয়ে পড়ায় তৃনমূল পর্যায়ে যথেষ্ঠ যোগাযোগ শূন্য সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি সংসদের কথিত বিরোধী দলের জবনিকা কম্পন শুরু হয়েছে অনেক আগে। যার ফলশ্রুতিতে এ অঞ্চলের রাজনীতিতে সরকারী ও বিরোধী দলের তেমন কোন ভ’মিকা লক্ষনীয় নয়। এর ফলে দক্ষিণাঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে রাজনীতিবীদদের ভ’মিকা ক্রমশ গৌন হয়ে উঠছে বলেও মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। এমনকি ক্ষমতাশীন দলের প্রভাবশালী নেতৃবৃন্দ দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়ন নিয়ে যথাযথ ভ’মিকা পালন না করায় এ অঞ্চল দেশের চলমান উন্নয়নের ধারা থেকে পিছিয়ে পড়ছে বলেও মনে করছে মহলটি। এ অভিযোগ দক্ষিণাঞ্চলের আমজনতারও। একইসাথে দক্ষিণাঞ্চলে কথিত বিরোধী দলের যে দুজন কয়জন এমপি আছেন তাদের ভ’মিকাও সাধারন মানুষকে খুব একটা সন্তুষ্ট করতে পারছে না।
তবে এ রাজনৈতিক স্থবিরতার মধ্যেও বিএনপি’র ভ’মিকা খুব যোড়াল না হলেও পুলিশী বাধা বিপত্তির মধ্যেও কয়েকটি জেলায় তারা অস্তিত্বের জানান দিচ্ছে দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচী পালনের মধ্যে দিয়ে।
২০১৮’র মধ্যভাবে বরিশাল সিটি নির্বাচন এবং ঐ বছরই ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের প্রেক্ষাপট ছিল দেশের অন্য এলাকার তুলনায় অনেকটাই ভিন্নতর। সিটি নির্বাচনের দিন পনের আগেই বরিশাল মহানগরীতে আইন শৃংখলা বাহিনীর নানামুখি তৎপড়তায় বিরোধী প্রার্থী একা হয়ে যেতে থাকেন। বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে বিচারাধীন বন্দীর সংখ্যাও বাড়তে থাকে। অনেক পরিবারের ছেলে ও যুবকরা নগরী ত্যাগকরে। এ অবস্থায় সিটি নির্বাচন শেষ হবার পরে ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচন আরো বিতর্কিত হয়ে ওঠে বিভিন্ন বাহিনীর ভ’মিকায়। দক্ষিণাঞ্চলের সবগুলো জেলখানায় বন্দীর সংখ্যা তিনগুন অতিক্রম করে।
বিতর্কিত ঐ নির্বাচনে ঘরের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি থেকে ৩ জন ও আওয়ামী লীগের ১৮ জন ও জেপির একজন এমপি নির্বাচিত হবার পরে তারা এলাকার সাথে ক্রমশ যোগাযোগ হৃাস করতে থাকেন। তবে এরও ব্যতিক্রম রয়েছ। পিরোজপুর-১ আসনের শম রেজাউল করিম মন্ত্রী হয়েও প্রতি শুক্রÑশণিবার এলাকায় আসেন। পিরোজপুর-২’এর আনোয়ার হোসেন মঞ্জুও মাসে দু-একবার এলাকায় আসেন। তবে ৩টি উপজেলা নিয়ে তার নির্বাচনী এলাকা গঠিত হলেও তিনি কিছুটা নিজ আবাস্থল ভান্ডারিয়াতেই সীমাবদ্ধ থাকেন বলে অনুযোগ রয়েছে। বরিশালÑ১ আসনের আওয়ামী লীগের এমপি আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ এলাকায় আসলেও তার যোগাযোগ সাধারন মানুষের চেয়ে দলীয় নেতা-কর্মী এবং আমলা-পুলিশ পর্যায়ে সিমিত বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। অপরদিকে আমীর হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমদ-এর ঝালকাঠী এবং ভোলার নির্বাচনী এলাকায় সিমিত যাতায়াত থাকলেও তারাও অনেকটাই নেতা-কর্মীদের গন্ডির বাইরে যেতে পারছেন না।
এর বাইরের অন্য জেলাগুলোর বেশীরভাগ এমপিগনই এলাকার সাথে নিবিড় যোগাযোগ বা আমজনতার সাথে খুব একটা সম্পর্ক রাখতে পারছেন না। এর পেছনে কি কারন তা এক কথায় বলতে পারছেন না রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। তবে একটি বিষয় বেশীগের মধ্যেই কাজ করছে বলে মনে করছেন মহলটি। আর তা হচ্ছে, এসব নেতৃবন্দের বেশীরভাগই জনগনের কাছে খুব একটা দায়বদ্ধতা নিয়ে রাজনীতি করছেন না। জনপ্রতিনিধিদের ‘ফর দ্যা পিপল বাই দ্যা পিপল’এর যে সংজ্ঞা মনেপ্রানে ধারন করতে হয়, তা তাদের অনেকই ভুলে গেছেন বলেও মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল।
অপরদিকে দমন পীরনের মধ্যেও দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় এখনো বিএনপি তার অস্তিÍত্বের জানান দিচ্ছে। তবে তাও বরিশাল-পিরোজপুরকে বাদ দিলে খুব একটা লক্ষনীয় নয়। পটুয়াখালী ও ভোলার মত জেলাতেই বিএনপি’র রাজনৈতিক কর্মকান্ড সিমিত হয়ে পড়েছে। এর পেছনে জেলা পর্যায়ের বেশীরভাগ নেতৃবৃন্দের বছরের বেশীরভাগ সময়ই এলাকায় না থাকা সহ বিগত কয়েক বছর ধরে রাজনৈতিক দমন পীরনে মাঠ কর্মীদের মধ্যে আতংক ও হয়রানীর ভয় কাজ করছে বলেও মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল।
তবে ক্ষমতাশীন দল ও সংসদের বিরোধ দলের যথাযথ ভ’মিকার অভাবের সাথে মাঠের বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মকান্ডের অভাবে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলই ক্রমশ রাজনীতি শূণ্য হয়ে পরছে বলে মনে করছেন সাধারন মানুষও। আর এতেকরে আমলা সহ অপর একটি শ্রেণী বৃটিসযগের মত করে সমাজে ক্রমশ অবস্থান শক্ত পোক্ত করছে। যারা ইতোমধ্যেই জনগনকে বৃটিস যুগের প্রজা ভাবতেও শুরু করেছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। আর এ লক্ষনটি দক্ষিণাঞ্চলের সুস্থ্য রাজনৈতিক চর্চা সহ আর্থÑসামাজিক অবস্থার জন্য সুখকর নাও হতে পারে বলে করছে মহলটি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন