গত বছর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান পূর্বাভাস দিয়েছিলেন যে, সরকারের হিন্দুত্ববাদের কারনে ভারতে অশান্ত পরিবেশ তৈরি হবে, সহিংসতা ও রক্তপাত বাড়বে। দিল্লির ঘটনায় বিচক্ষণ এই পাক নেতার অনুমানই সত্য বলে প্রমাণিত হল। সিএএ-বিরোধী ও সমর্থকদের সংঘর্ষে গত চার দিন ধরে অগ্নিগর্ভ দিল্লি। সেখানে এখনও পর্যন্ত অন্তত ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। মুসলমানদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী সহিংসতা বন্ধে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়কে এখনই পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।
দিল্লিতে শান্তি ও সম্প্রীতি রক্ষার জন্য বুধবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আহ্বান জানানোর কিছু ক্ষণের মধ্যেই টুইটে পরোক্ষে ওই ঘটনা নিয়ে ভারতকে খোঁচা দিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। তিনি লেখেন, ‘সহিংসতার সূত্রপাত হয়েছিল গত বছর জম্মু-কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিল হওয়ার পর।’ টুইটে অবশ্য দিল্লির নামোল্লেখ করেননি। তিনি বলেন, ‘কয়েকশ কোটি লোকের ভারত আজ আমরা নাৎসি অনুপ্রাণিত আরএসএস মতাদর্শের নিয়ন্ত্রণে। যখনই কোনো বর্ণবাদী মতাদর্শের উত্থান ঘটে, তখন তা ব্যাপক রক্তপাতের দিকে নিয়ে যায়।’
পূর্বাভাসের বিষয়ে তিনি টুইটারে লিখেছেন, ‘ভারত-অধিকৃত কাশ্মীরের ঘটনার পরেই আমি গত বছর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বলেছিলাম, বোতল থেকে দৈত্যটা বেরিয়ে পড়ল। এ বার রক্তপাত আরও বাড়বে বলে প‚র্বাভাস দিয়েছিলাম। যার স‚ত্রপাত হয়েছিল কাশ্মীরে। ভারতে থাকা ২০ কোটি মুসলিম এখন লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন। এটা রুখতে গোটা বিশ্বকে এ বার এগিয়ে আসতে হবে।’
এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে পাকিস্তানে না ঘটে, টুইটে সেই আহ্বানও জানিয়েছেন পাক প্রধানমন্ত্রী। লিখেছেন, ‘আমি সকলকে সতর্ক করে দিতে চাই, পাকিস্তানে যারা বিধর্মী ও তাদের ধর্মস্থানের উপর হামলা করতে উদ্যত হবেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। মনে রাখতে হবে, আমাদের দেশে সংখ্যালঘুরা নাগরিকত্বের সমানাধিকারই পান।’
এদিকে, দিল্লির সংঘর্ষের দায় নিয়ে এ দিন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের পদত্যাগ দাবি করেছেন সোনিয়া গান্ধী। ১৪৪ ধারা, কারফিউ জারি করেও দিল্লিতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে দিল্লি পুলিশের ভ‚মিকায়। দিল্লির আইনশৃঙ্খলার ভার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের উপর। আর সেই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে অমিত শাহ। সংঘর্ষ এত বড় আকার নেওয়ার জন্য শাহকেই নিশানা করে সনিয়া এ দিন বলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী-সহ গোটা কেন্দ্রীয় সরকারই এর জন্য দায়ী। অমিত শাহের পদত্যাগের দাবি করছে কংগ্রেস।’
দিল্লির সংঘর্ষের জন্য বিজেপিকেই দায়ী করেছেন কংগ্রেস সভানেত্রী। তিনি বলেন, ‘এই সংঘর্ষের পিছনে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র রয়েছে। দিল্লির ভোটের সময় দেশবাসী সেটা দেখেছে। অনেক বিজেপি নেতা উস্কানিম‚লক মন্তব্য করে ভয় ও হিংসার পরিবেশ তৈরি করেছে। এমনকি, গত রোববারও এক বিজেপি নেতা একই রকম মন্তব্য করেছেন।’ সূত্র : ডন, টিওআই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন