শত চেষ্টার পরও আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাত পাননি বাংলাদেশ আওয়ামী যুব মহিলালীগের সভাপতি নাজমা আক্তার এবং সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল। পাপিয়াকান্ডের পর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা চালাচ্ছেন এই দুই নেত্রী। তবে তাদের প্রধানমন্ত্রী সাক্ষাত দেননি, এমনকি গণভবনে তাদের প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা আরোপ হতে পারে বলে গণভবনের বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, এই ঘটনার পর পরিস্থিতি ব্যাখ্যা এবং তাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য যুব মহিলালীগের এই দুই নেতা আওয়ামী লীগ সভাপতির সঙ্গে সাক্ষাত করার জন্য একাধিক বার চেষ্টা করেছেন। গণভবন সূত্রে আরও জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুবই ব্যস্ত সময় পার করছেন। এইসব বিষয় আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার বিষয়, এসব নিয়ে কথা বলতে আগ্রহী নন তিনি।
অপর একটি সূত্র বলছে, প্রধানমন্ত্রী এই ঘটনায় খুবই ক্ষুদ্ধ্ব এবং প্রধানমন্ত্রী এই মুহুর্তে যুব মহিলালীগের কমিটি বাতিলের প্রক্রিয়া চলছে, তাই এই অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী এদের সাথে সাক্ষাৎ করবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে। পাপিয়াকান্ডের পর যুব মহিলালীগের শীর্ষ দুই নেত্রী মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় কাদের তাদের তীব্র ভৎসর্না করেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে দলীয় সূত্রে জানা গেছে, যুব মহিলালীগের কমিটি বাতিল কিংবা এই দুজনকে সরিয়ে নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া এখন চলছে। ২০১৭ সালের ১১ মার্চ যুব মহিলা লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সে হিসেবে আর কয়েকদিন পরেই মেয়াদ শেষ হচ্ছে নাজমা আক্তার ও অপু উকিলের নেতৃত্বাধীন এই কমিটির। তাই শিঘ্রই এই কমিটি ভেঙে সম্মেলন দেয়ার বিষয়ে দলীয় সিদ্ধান্তও নেয়া হয়েছে। এর আগে ২০০৪ সালের ১৬ মার্চ প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তখন থেকে প্রায় ১৬ বছর নাজমা আক্তার ও অপু উকিল এই সংগঠনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
যেভাবে পদ বাগিয়ে নেন পাপিয়া: ২০১৪ সালে যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি নাজমা আক্তার ও সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল সম্মেলন করলেও নরসিংদীতে কমিটি দিতে পারেননি। পরে ঢাকায় ফিরে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নরসিংদী জেলা কমিটি ঘোষণা করেন, তাতে পাপিয়াকে দেয়া হয় সাধারণ সম্পাদকের পদ। এক্ষেত্রে ঢাকা উত্তর যুবমহিলা লীগের সভাপতি ও তৎকালীন সংরক্ষিত আসনের এমপি সাবিনা আক্তার তুহিনের মাধ্যমে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অপু উকিলকে ম্যানেজ করে পদ বাগিয়ে নেন পাপিয়া।
নরসিংদীর নেতাদের অনেকের দাবি, তাদের বিরোধিতার মুখে ঢাকায় গিয়ে পাপিয়াকে পদ দিয়ে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাবেক প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম হীরু গণমাধ্যমকে বলেন, ২০১৪ সালে সম্মেলনের মাঠে পাপিয়ার নাম প্রস্তাব করলে আমি বিরোধিতা করি। আমার সঙ্গে আরও কয়েকজন বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, পরে সম্মেলনকেন্দ্রে নাম ঘোষণা করতে গেলে আমি বলি– এখানে পাপিয়ার নাম কোনোভাবেই কমিটিতে রাখা যাবে না। পরে নাজমা ও অপু নরসিংদীতে কমিটি দিতে না পেরে ঢাকায় গিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কমিটি দেয়।
যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি নাজমা আক্তার গণমাধ্যমে বলেছেন, জেলা কমিটিতে পাপিয়া আগে কোনো পদে না থাকলেও তাকে পদ দিতে অনেকটা বাধ্য হয়েছিলেন তিনি। নরসিংদীর একটি পক্ষ এই মেয়েকে পদ না দেয়ার জন্য আমাদের বলেছিল। আমি পাপিয়াকে পদ দেয়ার পক্ষে ছিলাম না। তার পরও শেষ পর্যন্ত দিতে হয়েছে। পাপিয়াকে অর্থের বিনিময়ে পদ দেয়া হয়েছিল বলে অভিযোগের বিষয়ে নাজমা বলেন, পদবাণিজ্য করে যারা পাপিয়াকে পদ দিয়েছে, তাদের বিচারের আওতায় আনা হোক, এমন মেয়েদের জন্য যুব মহিলা লীগের সম্মান যায়।
কাদের আশ্রয়ে পাপিয়া এতদূর এগিয়েছে- এ বিষয়ে যুব মহিলা লীগের সভাপতি বলেন, সে কাদের সঙ্গে ওঠবস করে, তাদের খুঁজে বের করলেই সব পেয়ে যাবেন। আমাদের অনেকের সঙ্গে পাপিয়ার ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল, তাদের বের করুন।
তাকে পদ দেয়ার ক্ষেত্রে যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অপু উকিলের সমর্থন ছিল বলে সংগঠনটির বিভিন্ন নেতা জানিয়েছেন। অপু উকিল তা অস্বীকার করে বলেন, নরসিংদী আওয়ামী লীগ নেতাদের সুপারিশে পাপিয়াকে পদ দেয়া হয়েছিল।
যুব মহিলা লীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য সাবিনা আক্তার তুহিনের সঙ্গে পাপিয়ার সখ্যের বিষয়টি বেশ আলোচিত সংগঠনের মধ্যে। পাপিয়ার নানা কাজে তুহিনের পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে, এমন অভিযোগও এসেছে। তবে তুহিন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, পাপিয়ার সঙ্গে তার সাংগঠনিক সম্পর্কের বাইরে কিছু ছিল না। আমি মহানগর উত্তরের নেত্রী, রাজনীতির কারণে আমার অনেকের সঙ্গে মিশতে হয়েছে। আমাদের কেন্দ্রীয় সম্মেলন আছে, সে কারণে দেশের সব জেলার নেত্রীদের সঙ্গেই আমার মিশতে হয়।
তুহিন দাবি করেন, ২০১৪ সালে পাপিয়া যখন নরসিংদী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হন, তখনও তাকে চিনতেন না তিনি। পাপিয়া ২০১৪ সালে নেতা হয়েছে, আর আমার সঙ্গে পরিচয় হয়েছে ২০১৭ সালে। তা হলে কমিটিতে আসার ব্যাপারে আমার কোনো ভূমিকা থাকতে পারে না। আর জেলা কমিটি গঠনে মহানগরের কোনো হাত থাকে না।
তবে ২০১৭ সালে পরিচয়ের পর পাপিয়ার সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে জানিয়ে তুহিন বলেন, তার পর থেকে নিয়মিত আসত। আমি এমপি ছিলাম, তার বাসা আমার বাসা থেকে কাছে, নিয়মিতই আসত। এক বছর ধরে তাদের কোন যোগাযোগ নেই বলে জানিয়েছেন তিনি। ##
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন