‘নদীমাতৃক বাংলাদেশের প্রতিটি নদ-নদীর নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তার আলোকে নদীগুলোর প্রাণপ্রবাহ সংরক্ষণ করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ। দেশের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ ‘অর্থনৈতিক নদী’ কর্ণফুলী ও হালদাকে বাঁচাতে হবে যে কোনো মূল্যে। কেননা কর্ণফুলী দেশের প্রধান চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের ধারক। তেমনি হালদা নদীটি হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান মিঠাপানির বড় কার্প জাতের মাছের প্রাকৃতিক প্রজননক্ষেত্র’।
নদ-নদী ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ সম্পর্কিত এক সেমিনারে বিশেষজ্ঞগণ উপরোক্ত অভিমত ব্যক্ত করেন। গত বৃহস্পতিবার নগরীর আগ্রাবাদে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের সম্মেলন হলে আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) উদ্যোগে এবং জাতিসংঘের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সহায়তায় এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মোশাররফ হোসাইনের সঞ্চালনায় সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আইইউসিএন-এর কান্ট্রি প্রতিনিধি রাকিবুল আমিন।আলোচনায় অংশ নেন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামাল হোসাইন, কর্ণফুলী ও হালদা গবেষক অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরীয়া, ড. এস এম শামসুল হুদা, ড. জেরিন আকতার ও আবদুল্লাহ আল মামুন।
কর্ণফুলী ও হালদা নদীর সঙ্গে জাতীয় অর্থনীতির নিবিড় সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞগণ বলেন, উভয় নদী থেকে চট্টগ্রাম ওয়াসা পানি উত্তোলন করে পরিশোধনের মাধ্যমে বন্দরনগরীতে প্রায় ৭০ লাখ মানুষের কাছে সরবরাহ দিতে পারছে। তাই পানির এই দু’টি বড় ধরনের উৎস সংরক্ষণ করতে হবে। উভয় নদীকে বাঁচানোর জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক নদী গবেষক ড. মনজুরুল কিবরীয়া বলেন, কর্ণফুলী নদীটিকে বাঁচিয়ে রেখেছে এর প্রাকৃতিক জোয়ার-ভাটার বৈশিষ্ট্য এবং শাখা খাল-ছরাগুলো। অন্যথায় কর্ণফুলী এতাদিনে একটি মারাত্মক দূষিত লেকে পরিণত হতো। কেননা প্রতিদিন যে হারে গৃহস্থালী, আবাসিক, শিল্প ও পয়োবর্জ্য এবং অপচনশীল প্লাস্টিক-ককসিট নদীতে ফেলা হচ্ছে তাতে কর্ণফুলী নদীর প্রাণ আজ ওষ্ঠাগত। এখনই সমন্বিত উপায়ে যে কোনো মূল্যে কর্ণফুলী নদীকে বাঁচানো ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।
হালদা নদীর গুরুত্ব তুলে ধরে সেমিনারে তিনি বলেন, হালদাকে বাঁচাতে হবে প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র উন্নয়নের স্বার্থেই। মুজিববর্ষে হালদা নদীকে ‘বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ’ ঘোষণা করা হবে। আমরা আশা করছি হেরিটেজ ঘোষণার পর হালদা নদীর সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় সবরকম উদ্যোগ নেয়া হবে।
অধ্যাপক ড. মোশাররফ হোসাইন বলেন, প্রতিটি নদ-নদীর চরিত্র, বৈশিষ্ট্য, অবস্থান ও পরিবেশ-প্রকৃতি ভিন্ন ভিন্ন। এই পরিপ্রেক্ষিতে নদীসমূহের সুরক্ষায় এবং পানির উৎসগুলো সংরক্ষণ করতে তৃণমূল পর্যায়ের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ, জনপ্রতিনিধি এবং নীতিনির্ধারক মহলের সবাইকে সচেতন ও একযোগে কাজ করতে হবে।
সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন ড. মোহাম্মদ মোসলেম উদ্দিন, ড. ওয়াহিদুল আলম, ড. এম আতিকুর রহমান, ইকবাল সরওয়ার, ড. রেজা এ মল্লিক, প্রকৌশলী শীবেন্দু খাস্তগীর, সাফাত হোসেন, জমির উদ্দিন, ড. রফিকুল হায়দার, গোলাম মাওলা, ইসমত আরা নুর, প্রকৌশলী আবদুর রউফ প্রমুখ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন