শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহানগর

৭০টি বিহারী ক্যাম্প উচ্ছেদ কার্যক্রমে আদালতের স্থিতাবস্থার নির্দেশ

প্রকাশের সময় : ১১ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : সারাদেশে ৭০টির মতো বিহারী ক্যাম্পে উচ্ছেদ কার্যক্রমের ওপর চার সপ্তাহের জন্য স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে উভয় পক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি। এ সংক্রান্ত আবেদনের ওপর শুনানি শেষে গতকাল রোববার চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এ আদেশ দেন। এতে আপাতত এসব ক্যাম্পে কোনো উচ্ছেদ অভিযান চালানো যাবে না বলে জানিয়েছেন রিট আবেদনকারীদের অন্যতম আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা। আদালতে বিহারীদের পক্ষে শুনানি করেন বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল বাসেত মজুমদার। সঙ্গে ছিলেন সাঈদ আহমেদ রাজা।
অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ রাজা বলেন, বিহারীদের করা রিটের প্রেক্ষিতে ২০০৫ সালের ১৭ জুন হাইকোর্ট রুল জারি করেন। চলতি বছর ২৯ মার্চ সেই রুল ডিসচার্জ করে পর্যবেক্ষণসহ বিহারীদের করা রিটসমূহ খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। আমরা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ৩০ জুন উচ্চ আদালতে আবেদন করি। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে গতকাল চেম্বার বিচারপতি উচ্ছেদ কার্যক্রমের ওপর চার সপ্তাহের জন্য স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে উভয় পক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন।
এর আগে গত ২৯ মার্চ বিহারী ক্যাম্পের আশপাশে সরকারি জমিতে বসবাসকারী অবাঙালিদের উচ্ছেদ করা যাবে বলে রায় দেন হাইকোর্ট। উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ চেয়ে বিহারীদের করা ৯টি রিট পর্যবেক্ষণসহ খারিজ করে দেন বিচারপতি মো: মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও জে বি এম হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চ। এ রায়ের ফলে মিরপুরের পল্লবী ও মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্যাম্প এলাকার বাইরে অবৈধভাবে বসবাসকারী বিহারীদের উচ্ছেদ করা যাবে বলে জানিয়েছিলেন রিটের পক্ষের আইনজীবী হাফিজুর রহমান খান। তবে ক্যাম্পে যারা আছে তাদের থাকতে বাধা নেই বলেও জানান তিনি।
হাফিজুর রহমান খান আরো জানান, সরকারি হিসাব অনুযায়ী দেশে ৭০টির মতো বিহারী ক্যাম্প আছে। এসব ক্যাম্পে বসবাসকারীদের মধ্যে জাতীয় পরিচপত্রধারীদের সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী পুনর্বাসনের নির্দেশনাও দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া পল্লবীতে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের বরাদ্দকৃত ২২টি প্লটের দখল গ্রহীতাদের বুঝিয়ে দেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে রায়ে। পরে গত ১৬ মে মিরপুর পল্লবী থানাধীন বিহারী ক্যাম্পে উচ্ছেদের ওপর স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে উভয় পক্ষকে নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। এখন অন্য ক্যাম্পগুলোর ক্ষেত্রেও একইভাবে স্থিতাবস্থা জারি করা হলো।
তখন আইনজীবী হাফিজুর রহমান খান জানিয়েছিলেন, ক্যাম্প এলাকা কতটুকু তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। হাইকোর্টের রায়ের ফলে ক্যাম্পে উচ্ছেদ অভিযানের আশঙ্কায় আমরা স্থিতাবস্থার জন্য আবেদন করি। সে অনুযায়ী আদালত ছয় সপ্তাহের এই অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দিয়েছেন। হাইকোর্টের রায়ের কপি পেলে আমরা আপিল করব।
ঘটনার বিবরণীতে জানা যায়, মিরপুর পল্লবী থানার আশপাশের জমিতে ১৯৯৫-৯৬ সালে ২২টি প্লট গ্রহীতাদের মধ্যে বরাদ্দ দেয় জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। সে অনুযায়ী ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ২০০২ সালে পুলিশের সহায়তায় পল্লবীতে কিছু দোকানপাট উচ্ছেদের উদ্যোগ নিলে তাদের প্রতিনিধিরা আদালতে রিট আবেদন দায়ের করেন। উক্ত পিটিশনের শুনানি নিয়ে রুল ইস্যু হয় ও উচ্ছেদ কার্যক্রম স্থগিত করেছিলেন হাইকোর্ট।
এরপর ২০০৩ সালে ২২টি প্লট বরাদ্দ জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ দখল বুঝিয়ে দেয়ার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়। এসব প্লটে বসবাস করে বলে দাবি করে দখল হস্তান্তরের বিজ্ঞপ্তি অবৈধ ঘোষণা চেয়ে অপর একটি রিট করা হয়। এই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল জারি করে ও প্লট হস্তান্তরের ওপর স্থগিতাদেশ দেন।
এর আগে মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্প এলাকায়ও কিছু স্থাপনা ভাঙার উদ্যোগ নিলে ২০০১ সালে মানবাধিকার সংস্থা অধিকারও একটি রিট দায়ের করে। সেই রিটেও রুল ও স্থগিতাদেশ আসে। অনুরূপভাবে নীলফামারীর রেলওয়ের জায়গায় সৈয়দপুর বিহারী ক্যাম্প থেকে বিহারীদের যাতে উচ্ছেদ করতে না পারে এ জন্য ২০০৭ সালে অপর একটি রিট দায়ের করা হয়। একইভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিহারীদের উচ্ছেদ নিয়ে আরো ৫টি রিট দায়ের করা হয়।
বিহারীদের করা ৯টি রিটই গত ২৯ মার্চ পর্যবেক্ষণসহ খারিজ করে দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন