খুলনা ব্যুরো : যুবলীগের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও কেসিসির ২৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শহীদ ইকবাল বিথারের সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। আলোচিত এ হত্যাকাÐের সাত বছর অতিক্রম হলেও এখনো মামলার বিচারকার্য শুরু হয়নি। শুধুমাত্র মামলার চার্জ গঠনের শুনানি গত দু’বছর খুলনার মহানগর দায়রা জজ ও অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে তারিখের পর তারিখ পড়ছে। রাজনৈতিক ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের হিসেবে ২০০৯ সালের ১১ জুলাই রাতে শহীদ ইকবাল বিথার নগরীর মুসলমানপাড়াস্থ বাসায় ফেরার পথে মেট্রোপলিটন ক্লিনিকের সামনে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন। এ ঘটনায় তার শ্যালক মো: রফিউদ্দিন অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে ১২ জুলাই সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলাটি প্রথমে থানা পুলিশ এরপর নগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তদন্ত করে। একপর্যায়ে মামলাটি ২০১০ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেলের পর্যবেক্ষণ সেলে যায়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পরিদর্শক মামুন খান তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। ওই চার্জশিটে খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের শীর্ষ কয়েকজন নেতার নাম উঠে আসে।
হত্যাকাÐের চার বছর তিন মাস পর গত ২০১৩ সালের ১০ অক্টোবর খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মিজানুর রহমান মিজান (বর্তমান এমপি), যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা এস এম মেজবাহ হোসেন বুরুজ ও মহানগর যুবলীগের আহŸায়ক অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান পপলুসহ ৯ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার পরিদর্শক নাফিউর রহমান। খুলনা মহানগর হাকিম আমলি আদালত ‘ক’ অঞ্চলের হাকিম মো: জাকির হোসেন টিপুর আদালতে এ অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়।
২০১৩ সালের ২৭ অক্টোবর আদালত ওই অভিযোগপত্র গ্রহণ না করে অধিকতর তদন্তের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে অধিকতর তদন্ত শেষে ২০১৪ সালের ১ আগস্ট মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (সিআইডি) সম্পূরক চার্জশিট আদালতে দাখিল করেন। সম্পূরক এ চার্জশিটে মামলার প্রথম চার্জশিটে অভিযুক্ত মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মিজানুর রহমান মিজান ও যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা এস এম মেজবাহ হোসেন বুরুজের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে তাদের দু’জনকে মামলা থেকে অব্যাহতি প্রদানের জন্য আদালতে সুপারিশ করে তদন্ত কর্মকর্তা। সম্পূরক চার্জশিট আমলে নিয়ে সে মাসেই খুলনার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক মামলাটি বিচারের জন্য মহানগর দায়রা জজ আদালতে প্রেরণ করেন। সেসময় সম্পূরক এ চার্জশিটের বিরুদ্ধে নারাজি জানিয়ে মামলার বাদি প্রথম অভিযোগপত্রে অভিযুক্তদের অন্তর্ভুক্ত করে চার্জ গঠনের আবেদন করেন। ৯ নভেম্বর আদালত বাদির আবেদন খারিজ করে দেন। পরে বাদি উচ্চ আদালতে রিভিউ আবেদন করেন। অপরদিকে এ মামলা থেকে অব্যাহতি চেয়ে নগর যুবলীগের আহব্বায়ক অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান পপলু আদালতে আবেদন করেন। উচ্চ আদালতে রিভিউ আবেদনের আদেশ হাতে না পাওয়ায় বাদিপক্ষের কয়েক দফা সময় প্রার্থনার কারণে চার্জ গঠনের দিন বারবার পিছিয়ে যাচ্ছে বলেও আদালত সূত্র জানায়।
চাঞ্চল্যকর এ মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামিদের মধ্যে ইতোমধ্যে দুই আসামি খুন হয়েছেন। এদের মধ্যে ২০১৪ সালের ৮ এপ্রিল এই মামলায় আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেয়া আসামি ফেরদাউস হোসেন ওরফে হিরুর লাশ উদ্ধার করা হয়। বটিয়াঘাটা উপজেলার খুলনা-রূপসা বাইপাস সংযোগ সড়ক এলাকার একটি ডোবার পাশে মাথায় দু’টি, বুকের মাঝখানে দু’টি এবং বাম পাঁজরে একটিসহ মোট পাঁচটি গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তার লাশ পড়ে ছিল। একই বছরের ৩০ অক্টোবর রাত আনুমানিক ১১টার দিকে নগরীর শেখপাড়া বাজারসংলগ্ন কাউন্সিলর অফিসের সামনে দুর্বৃত্তরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মাসুদ রানা (৩৮)-কে হত্যা করে। নিহত মাসুদ রানা সম্পর্কে হিরুর শ্যালক। রানার আপন ভাই সুমন হোসেন রাজু (৩৫) এই হত্যা মামলার আসামি। এছাড়া গত ২০১৫ সালের ১৯ ডিসেম্বর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মামলার প্রথম অভিযোগপত্রে অভিযুক্ত আসামি যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সমবায়বিষয়ক সম্পাদক এস এম মেজবাহ হোসেন ওরফে বুরুজ মৃত্যুবরণ করেছে। এছাড়া মামলার অপর আসামি জীবন ওরফে শবে কাদির, লিয়াকত আলী শিকদার, মো: মনিরুজ্জামান মাসুদ ওরফে তোতা মাসুদ কারাগারে রয়েছে। আসামি নগর যুবলীগের আহŸায়ক অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান পপলু, একরাম হোসেন ওরফে সিয়াম ওরফে আকাশ, সুমন হোসেন ওরফে রাজু জামিনে রয়েছেন। বর্তমানে মামলাটি অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে চার্জ গঠনের অপেক্ষায় রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন