রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

রাব্বানীর স্ট্যাটাসের পর ফের সরব হচ্ছে জাবির আন্দোলনকারীরা

জাবি সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৫ মার্চ, ২০২০, ৭:০৭ পিএম

ছাত্রলীগের বহিস্কৃত সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজ থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির দুর্নীতি নিয়ে দেয়া এক স্ট্যাটাসের পর ফের সরব হচ্ছে আন্দোলনকারীরা। এই স্ট্যাটাসে রব্বানী প্রশ্ন রাখেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ইস্যুতে এত আলোচনা-সমালোচনা, আন্দোলন, লেখালিখি, তথ্যপ্রমাণ দাখিলের পরেও কেন আজ পর্যন্ত একটা তদন্ত কমিটি হলো না?’

রব্বানী বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা ভিসি ম্যামের কাছ থেকে টাকা পেয়েছে, দিন-তারিখ উল্লেখপূর্বক প্রকাশ্য স্বীকারোক্তির পরও কেন সেই টাকার উৎস খোঁজা হলো না?’

জাবি ভিসি প্রতি ইঙ্গিত করে রব্বানি বলেন, ‘মিডিয়াতে ম্যাম বললেন, শোভন-রাব্বানীর সাথে টাকা-পয়সা নিয়ে কোন কথা হয়নি, তাহলে চাঁদা চাওয়ার অভিযোগ করলেন কিসের ভিত্তিতে? শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে?’

‘শিক্ষার্থীর স্বীকারোক্তির জবাবে ম্যাম বলেছেন, আগস্টের ০৯ ও ১০ তারিখ তার সাথে ঐ শিক্ষার্থীর কোন কথাই হয়নি। অথচ ম্যামের কল লিস্ট হিস্ট্রি বলছে, দুইদিনে শিক্ষার্থীর সাথে ম্যামের ০৬ বার কথা হয়েছে! ঐ শিক্ষার্থী কিন্তু মিডিয়াতে স্পষ্ট বলেছে, কথোপকথনের রেকর্ডিং বের করলেই সব ক্লিয়ার হয়ে যাবে।’

এছাড়া স্ট্যাটাসে বলা হয়, গত ৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় আমাদের দায়িত্ব প্রাপ্ত নেতা, শ্রদ্ধেয় জাহাঙ্গীর কবির নানক ভাইয়ের ধানমন্ডির অফিসে আমার আর শোভনের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় ভাই বললেন, ‘তোমাদের দোষ নেই, ভিসি ম্যাডাম যে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে কাজ দিয়েছেন, সেটা আমি জানি। যারা কাজ পেয়েছে, তার মধ্যে একজন ঠিকাদার আমার পরিচিত, সম্পর্কে ভাগ্নে হয়। ও নিজেই আমাকে টাকার বিনিময়ে কাজ পাবার কথা বলেছে।’

বুধবার দেয়া এই স্ট্যাটাসে রব্বানি জাবি ভিসির আর্থিক লেনদেন ও ছাত্রলীগ নেতাদের ফোনালাপের কল লিস্ট তুলে ধরার পর বৃহস্পতিবার হঠাৎ সংবাদ সম্মেলন ডাকে জাবির আন্দোলনকারী শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনের শিক্ষক লাউঞ্চে অনুষ্ঠিত এই সংবাদ সম্মেলনে তারা গোলাম রব্বানির স্ট্যাটাসের বিষয়টিকে জাবি ভিসির ‘দুর্নীতির গোমর ফাঁস’ হিসেবে তুলে ধরেন। পাশাপাশি তারা ভিসি নিয়োগ বাণিজ্য করছেন বলেও অভিযোগ তুলেন সংবাদ সম্মেলনে।

এছাড়া তারা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠার দীর্ঘ ৮ মাস পার হলেও রাষ্ট্রীয় কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। অথচ রাষ্ট্রীয় তরফ থেকে বার বার বলা হয়েছিল তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোন ধরনের তদন্ত না করে রাষ্ট্রীয় এই নির্লিপ্ততা ও পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ অব্যাহত থাকার ফলে প্রশ্ন আসে, তাহলে কি স্বয়ং রাষ্ট্রীয় মদদে দুর্নীতি করবার জন্য ফারজানা ইসলামকে ভিসি পদে বসানো হয়েছে?’

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক দিল আফরোজ বেগম বলেন, ‘রাষ্ট্র নিরব, এমন কথা বলার সুযোগ নেই। আমরা ইউজিসির পক্ষ থেকে তদন্ত করছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটি পক্ষ বিদ্যমান। দুপক্ষই তাদের স্বপক্ষে তথ্য প্রমাণ জমা দিয়েছে। আমরা সেগুলো যাচাই বাছাই করছি। খুব শীঘ্রই তদন্ত প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রনালয়ে জমা দেয়া হবে।’

এদিকে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক উন্নয়নের উদ্দেশ্যে প্রণীত মাস্টারপ্ল্যানের বিচ্যুতি ঘটিয়ে সম্প্রতি বিজ্ঞান কারখানার পাশে শালবনে আইবিএ ভবন নির্মাণের জন্য সয়েলটেস্টসহ আনুষাঙ্গিক কাজ শুরু করে দেওয়া হয়েছে। ফলে কেটে ফেলা হবে এখানকার ২৫ হাজার স্কয়ার ফিটের সকল গাছ। আইবিএ ভবন নির্মাণ অত্যাবশ্যক হলেও কিসের ভিত্তিতে, কাদের মতামত নিয়ে ঐ স্থানে ভবন নির্মানের জন্য অনুমোদন দেওয়া হলো এটা পরিষ্কার নয়। এর আগেও আইবিএ ভবন নির্মানের জন্য আরেকটি ত্রুটিপূর্ণ নকশা অনুমোদন করা হয়েছিল ও খেয়ালখুশিমতো আরেকটি স্থানে গাছ কেটে ফেলা হয়েছিল। এই বন উজাড়ের খেলায় কেন মেতেছেন ফারজানা ইসলাম, এটা জাহাঙ্গীরনগরের প্রশ্ন।’

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘দুর্নীতির কোনো বিচার না হওয়ায় ফারজানা ইসলাম এখন দুর্নীতির মেলা বসিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর জুড়ে। প্রকল্পসহ নিয়োগ বাণিজ্যে ফারজানা ইসলামের সহায়ক হিসেবে এখন যুক্ত হচ্ছেন আরো অনেক দুর্নীতিবাজ শিক্ষক কর্মচারীরা। যাদেরকে ভিসি একাধিক দায়িত্বপূর্ণ পদে বসানো সহ বারবার কয়েক কোটি টাকার কাজ দিয়েছেন। বিভিন্ন আর্থিক বছরে বরাদ্দকৃত বাজেটের দিকে দৃষ্টি দিলে এর সত্যতা পাওয়া যায়।’

এসময় আরও বলা হয়, ‘রাষ্ট্রীয় নীরবতাকে পুঁজি করে ফারজানা ইসলাম উঠে পড়ে লেগেছেন নিয়োগ বাণিজ্যে। সম্প্রতি পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিকস বিভাগে ৩জন প্রভাষক নিয়োগে আর্থিক লেনদেন হয়েছে বলে গুঞ্জন উঠেছে। যেখানে একজন দশম স্থানীয় প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। গুঞ্জন রয়েছে জার্নালিজম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগে যোগ্য অনেককে সাক্ষাৎকারে না ডেকে আর্থিক লেনদেনের বিনিময়ে সিলেকশন দেওয়া হয়েছে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের একাংশের সভাপতির কন্যাকে। এছাড়াও লোকপ্রশাসন বিভাগ, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ, ইন্সটিটিউট অব রিমোট সেন্সিং, সরকার ও রাজনীতি বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগে ১৮ জন প্রভাষক ও গণিত বিভাগের বিএনপিপন্থী এক শিক্ষকের স্ত্রী, জাবি ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতার স্ত্রীসহ ২০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। যেখানে অনৈতিক লেনদেন প্রায় সমাপ্ত বলে গুঞ্জন চাউর হয়েছে।’

ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ তুলে তারা নতুন কর্মসূচী ঘোষণা করেছেন। তারা জানান, ৬ মার্চ শুক্রবার বিকেল ৩টায় বটতলায় ‘ফারজানা ইসলামের অপকর্মের প্রশ্নে রাষ্ট্রীয় নির্লিপ্ততার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী সমাবেশ’ করবেন, ৮ ও ৯ মার্চ ক্যাম্পাসব্যাপী গণ সংযোগ ও প্রচারণা ও ১০ মার্চ বেলা ১২ টায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রধান ফটক থেকে রাষ্ট্রীয় নির্লিপ্ততার প্রতিবাদে পতাকা মিছিল অনুষ্ঠিত হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
Md.Abul khair sikder ৭ মার্চ, ২০২০, ১১:০৮ এএম says : 0
Environmental history of JU, I know that Very wel.Nothing to say about political game. I wish long live of JahangirnagarUniversit.
Total Reply(0)
Md.Abul khair sikder ৭ মার্চ, ২০২০, ১১:০৯ এএম says : 0
Environmental history of JU, I know that Very wel.Nothing to say about political game. I wish long live of JahangirnagarUniversit.
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন