বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত তিনজন রোগী শনাক্ত হওয়ার পর নেট দুনিয়ায় ব্যাপক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা লক্ষ করা যাচ্ছে। হঠাৎ সামাজিক মাধ্যমে হট টপিকসে পরিণত হয় এটি। এনিয়ে ফেইসবুকে সচেতনতামূলক পোস্ট ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে চীন থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া এই ভয়ানক ভাইরাসটির আক্রমণ থেকে বাঁচতে মহান আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছেন মুসলিম প্রধান বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ।
বাংলাদেশে আক্রান্তদের মধ্যে একজন নারী ও দুজন পুরুষ। এদের মধ্যে দুজন ইতালিফেরত। যাদের বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। এ তিনজন ছাড়াও আরও দুজনকে করোনা আক্রান্ত সন্দেহে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।
রোববার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সম্মেলন কক্ষে করোনাভাইরাস সম্পর্কিত নিয়মিত প্রেসব্রিফিংয়ে আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা এ তথ্য জানান। এর পরপরই বাংলাদেশি নেটিজেনদের আলোচনার কেন্দ্র-বিন্দুতে পরিণত হয় করোনাভাইরাস।
সাংবাদিক নয়ন মুরাদ লিখেছেন, ‘‘মৃত্যু আসলে সিন্দুকে তালাবদ্ধ থেকেও লাভ নাই। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে এবং শাক-সবজি খেয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে রাখতে হবে।’’
এম মিজানুর রহমান লিখেছেন, ‘‘চীন নয় ইতালি থেকে আমদানি হলো করোনা। ভয় না পেয়ে সচেতন হোন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন খাবার খান। বিশেষ করে করলা, নিমপাতা ও এ জাতীয় তেঁতো সবজি খেতে হবে। এ রোগের উপসর্গগুলো জেনে নিন, আপনার মধ্যে করোনার কোনো উপসর্গ দেখা গেলে চিকিৎসকের কাছে যান।’’
আবদুল হাশেম মোল্লা লিখেছেন, ‘‘করোনা ভাইরাস নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত আতংকগ্রস্ত হওয়াকে ঈমানের সাথে সাংঘর্ষিক মনে করি। করোনা হলেই কি নিশ্চিত মৃত্যু হয়ে যাবে? মৃত্যু হলেও সমস্যা কী? হার্ট এটাকে মৃত্যু হয় না? রোড এক্সিডেন্টে মৃত্যু হয় না? নির্ধারিত সময় পার হলে এক সেকেন্ডও কি বাঁচা সম্ভব? মৃত্যুকে এত দূরে মনে করাও এক ধরনের জাহেলিয়াত। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগণের মতামত অনুসরণ করা উচিত, সতর্ক থাকা উচিত। যাদের হাতে জনগণের দায়িত্ব তারা যেন দায়িত্বে অবহেলা না করে। অযথা হা হুতাশ করে এক পয়সারও ফায়দা হবে না। আল্লাহর উপর পূর্ণ তাওয়াক্কুল করে দোয়া করা উচিত। সাধ্যানুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত।’’
মনির জারিফ লিখেছেন, ‘‘মোকাবেলা, প্রতিরোধ: এসব শব্দ এড়িয়ে চলা ভালো। স্রষ্টার সঙ্গে মোকাবেলা হয় না। সচেতন হউন, আল্লাহর রহমত কামনা করুন, সুস্থ থাকুন।’’
মো. রাকিব হোসেন লিখেছেন, ‘‘আচ্ছা, ইতালি ফেরত যাদের করোনা ভাইরাস ধরা পড়েছে তারা কি উড়ে উড়ে আসছে নাকি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে আসছে? যদি বিমানেই আসে তাহলে কর্তব্যরত লোকগুলা কই ছিলো যারা থার্মাল স্ক্যানার নিয়ে বসে ছিলো? বাংলাদেশের মতো একটা জনবহুল দেশে করোনার ফলাফল কি হতে পারে তার সম্পর্কে কারও ধারনা আছে? স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মতো অকর্মা যখন দায়িত্বে থাকে তখন থার্মাল স্ক্যানার নষ্ট হওয়াটাই স্বাভাবিক ব্যাপার।’’
উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৬ হাজার ১৯৫ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৬০০ জনে। এছাড়া এই ভাইরাসে আক্রান্ত ৬০ হাজার ১৯০ জন চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে। বিশ্বব্যাপী ১০৩টি দেশ ও অঞ্চলে এই ভাইরাসের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে।
শুধু চীনের মূল ভূখ-েই করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজার ৬৯৬ এবং মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজার ৯৭ জনের। চীনের পর করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি দক্ষিণ কোরিয়ায়। দেশটিতে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৭ হাজার ১৩৪ এবং মৃত্যু হয়েছে ৫০ জনের।
চীনের বাইরে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ইতালিতে। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ৫ হাজার ৮৮৩ এবং মৃত্যু হয়েছে ২৩৩ জনের। অপরদিকে, ইরানে এখন পর্যন্ত ৫ হাজার ৮২৩ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে ১৪৫ জন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন