শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

পাহাড়ে মানুষের ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস

প্রকাশের সময় : ১২ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

দৈনিক ইনকিলাবের খবরে বলা হয়েছে, চট্টগ্রামে ছোট-বড় ৩০টি পাহাড়ে মৃত্যুঝুঁকিতে বসবাস করছে  লক্ষাধিক মানুষ। প্রভাবশালীরা পাহাড় দখল করে অবৈধ বসতি গড়ে দরিদ্র লোকজনকে ভাড়া দিয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, এর সাথে জড়িতদের বেশিরভাগ সরকারি দলের লোক। তারা বিভিন্ন সেবা সংস্থাগুলোকে প্রভাবিত করে অবৈধ বসতিতে গ্যাস, বিদ্যুৎ এবং পানির সংযোগও নিশ্চিত করেছে। এই অবৈধ কর্মকা-ের সাথে সরকারি সংস্থার লোকজনও জড়িত। প্রকাশিত খবরে আরো বলা হয়েছে, প্রতিবারের মত এবারও বর্ষা আসতেই শুরু হয়েছে পাহাড়ে অবৈধ বসতি উচ্ছেদের তোড়জোড়। যেকোন সময় পাহাড়ে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হতে পারে। উচ্ছেদের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে জেলা প্রশাসন। পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সর্বশেষ বৈঠকে ঈদের পর পাহাড়ে অবৈধ বসতি উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত হয়। মনে করা হচ্ছে, দখলদাররা এতটাই শক্তিশালী যে উচ্ছেদ অভিযান সফল হবে না। চট্টগ্রাম মহানগরী ও আশপাশ এলাকার অসংখ্য পাহাড় প্রভাবশালীদের দখলে। তারা অবৈধ বসতি তুলে লোকজনকে ভাড়া দিয়েছে। লাখ লাখ টাকা আয় করছে। এসব ঝুঁকিপূর্ণ বসতিতে চরম ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে লাখো মানুষ। নতুন নতুন পাহাড় দখল করে চলছে বাড়িঘর নির্মাণ। দখলের ফলে পাহাড় ধস হচ্ছে। প্রতিবছর বর্ষায় ভারি বৃষ্টিপাত হলেই পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটছে। এতে বেঘোরে প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার এলাকায় প্রাকৃতিক সুরক্ষা পাহাড় নিয়ে অনেকদিন থেকেই দখল এবং উচ্ছেদের এক ধরনের খেলা চলছে। দেখা যাচ্ছে, সময়মত তদারকি না করায় এসব পাহাড়ে গড়ে ওঠা বসতির কারণে পাহাড় ধসে সাধারণ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। সরকারি হিসেবেই চট্টগ্রামে ৩০টি পাহাড়ে গড়ে ওঠা বসতিতে লক্ষাধিক লোক বাস করছে। গত ১০ বছরে এই অঞ্চলে পাহাড় ধসে কয়েকশ’ মানুষ মারা গেছে। ২০০৭ সালে একদিনের ভারিবর্ষণে পাহাড় ধসে ১২৯ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ঐ ঘটনার পর সরকার পাহাড় সুরক্ষার ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছিল। সরকারি তদন্ত কমিটি পাহাড়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে পাহাড় সুরক্ষায় ৩৫ দফা সুপারিশ করেছিল। বাস্তবত এসব সুপরিশ আলোর মুখ দেখেনি। কমিটি পাহাড় খেকোদের একটি তালিকা প্রকাশ করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বস্তুত উচ্ছেদ এবং দখল নিয়ে চলছে ইঁদুর বিড়াল খেলা। দেখা যায়, প্রতিবছর বর্ষার শুরুতে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করলেও প্রভাবশালীদের সহযোগিতায় আবার পাহাড়ের জমি বেদখল হয়ে যায়। সম্প্রতি চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, পাহাড় যারা দখল রেখেছে তারা প্রভাবশালী। অন্যদিকে দখল প্রক্রিয়ার সাথে সরকারি বিভিন্ন মহলে সম্পৃক্ততা রয়েছে বলেও বলা হয়েছে। প্রভাবশালী মহল ও অবৈধ অর্থের লেনদেনের আভাস মেলে পাহাড়ের বসতিতে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি সংযোগের মধ্য দিয়েও। কারণ যেখানে বসতি স্থাপনই অবৈধ সেখানে এসব সংযোগ কোনোভাবেই থাকতে পারে না। যেসব এনজিও এসব বসতি স্থাপনে ভূমিকা রেখেছে এক্ষেত্রে তাদের দায়ও কম নয়। প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা দখলদারদের যে তালিকা প্রণয়ন করেছে সেখানে প্রভাবশালীদের বিবরণ রয়েছে। প্রকৃত বিবেচনায় প্রভাবশালী বলতে যে সরকারি দলের নেতাদের বুঝান হয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। ফলে একদিকে সরকারের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে উচ্ছেদের অন্যদিকে প্রভাবশালীদের কারণে অশঙ্কাও প্রকাশ করা হচ্ছে। এধরনের প্রবণতা অনাকাক্সিক্ষত ও অনভিপ্রেত।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পাহাড়কে পৃথিবীর খুঁটিরূপে বর্ণনা করেছেন। পাহাড় প্রকৃতিক সুরক্ষা হিসেবে কাজ করে। এটা লক্ষ্যনীয় যে গত বেশকিছু দিন থেকেই এক শ্রেণীর দখলদারদের কারণে পাহাড়ের অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন। অনেক পাহাড় ইতোমধ্যেই বিলীন হয়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ তদারকির অভাব ও উদাসীনতার কারণেই পাহাড়ের বর্তমান বেহালদশা দাঁড়িয়েছে। আলোচ্য ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে সময়মত ব্যবস্থা নিলে কোন অবস্থাতেই সেখানে গ্যাস, পানি, বিদ্যুতের সংযোগ দেয়া সম্ভব হতো না। জেলা প্রশাসন এখন যে মাত্রায় তৎপর সে মাত্রায় আগে থেকে সতর্ক থাকলে হয়ত এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। কখন সিদ্ধান্ত হবে এবং এরপর তারা সতর্ক হবেন এ প্রবণতা সঙ্গত নয়। জরুরি বিষয় হচ্ছে পাহাড়ে বসবাসরতদের সেখান থেকে সরিয়ে নিরপদে স্থানান্তর করতে হবে। প্রভাবশালীরা যতই দাপুটে হোক না কেন তাদের চাপের কাছে মাথানত না করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ দ্রুত নিতে হবে। ব্যাপারটি কেবল সাময়িক বিবেচনায় না ভেবে ভাবতে হবে সামগ্রীক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। সে কারণেই পাহাড় সুরক্ষায় সার্বক্ষণিক কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এজন্য সার্বক্ষণিক মনিটরিং অপরিহার্য। হেলাফেলা করে অনেক মূল্যবান সম্পদ আমরা হারিয়েছি। এখন আর কোনো মহলের প্রভাবের দিকে তাকালে চলবে না। সকল প্রকার দুর্নীতির ঊর্ধ্বে উঠে জাতীয় স্বার্থকে সমুন্নত করা সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। সকলে এব্যাপারে আন্তরিক হবেন- এটাই প্রত্যাশিত।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন