এ কে এম আব্দুল্লাহ, নেত্রকোনা থেকে : ১২৮ বছরের পুরোনো নেত্রকোনা পৌরসভাটি প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা হলেও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অভাব আর নানাবিধ সমস্যা সমাধানে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ায় পৌরবাসী দীর্ঘদিন যাবৎ সকল প্রকার নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
নেত্রকোনা শহরবাসীর নানাবিধ সমস্যার সমাধান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত পরিকল্পিত নগরায়নের লক্ষ্যে ১৮৮৭ সালে নেত্রকোনা পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯২ সালে এটিকে প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা হিসেবে উন্নীত করা হয়। নেত্রকোনা পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে বর্তমানে ১ লাখ ২০ হাজারের অধিক মানুষের বসবাস রয়েছে। প্রতি ৫ বছর অন্তর অন্তর পৌর নাগরিকদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির কথা বলে ট্যাক্স বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পৌর নাগরিকরা নিয়মিত পৌর কর পরিশোধ করলেও তারা তাদের কাক্সিক্ষত নাগরিক সেবা পাচ্ছে না। নির্বাচন আসলে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা নাগরিক সমস্যার সমাধান আর পৌরসভাকে মডেল পৌরসভা গড়ে তুলার জন্য নানা ধরনের প্রতিশ্রæতি দিলেও নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার পর জনগণের কাছে দেয়া তারা তাদের প্রতিশ্রæতির কথা বেমালুম ভুলে যান। মেয়র আসে মেয়র যায় কিন্তু নেত্রকোনা পৌরবাসীর ভাগ্য বদল হয় না। নেত্রকোনা পৌরসভার সবচেয়ে বড় সমস্যা রাস্তাঘাটের বেহাল দশা। পৌর এলাকার অনেক জায়গায় প্রয়োজনীয় পরিকল্পিত রাস্তাঘাট, ব্রীজ কালভার্ট আজো গড়ে উঠেনি। পৌর এলাকায় প্রতিবছর লোকসংখ্যা ও যানবাহন বাড়লেও সেই তুলনায় নতুন ও প্রশস্থ রাস্তাঘাট নির্মিত হচ্ছে না। ফলে জেলা শহরে যানজটের কারণে সাধারণ মানুষের মূল্যবান কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। পৌর এলাকার সর্বত্র সুষ্ঠু ড্রেনেজ ব্যবস্থা গড়ে না ওঠায় সামান্য বৃষ্টিপাতে দেখা দিচ্ছে স্থায়ী পানিবদ্ধতা। নেত্রকোনা পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের গ্রাম সাতপাই ও বর্শীকুড়া, ২নং ওয়ার্ডের পালপাড়া ও সওদাগর পাড়া, ৩নং ওয়ার্ডের মইনপুর ও পুকুরিয়া, ৪নং ওয়ার্ডের বাহির চাপড়া ও রাজুর বাজার, ৬নং ওয়ার্ডের মালনী ও ঋষিপাড়া, ৭নং ওয়ার্ডের কাটলী, জয়নগর, ৮নং ওয়ার্ডের নাগড়া ও আনন্দ বাজার, ৯নং ওয়ার্ডের কুরপাড়, বলাইনগুয়া, খতিব নগুয়া, হাসপাতাল রোড, ধারিয়াসহ বেশ কিছু এলাকায় দীর্ঘদিন যাবৎ পানিবদ্ধতার কারেণে ঐসব এলাকার লোকজনকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এলাকাবাসী বার বার পৌর কর্তৃপক্ষকে পানিবদ্ধতা নিরসনের জন্য আবেদন নিবেদন করলেও কর্তৃপক্ষ পানিবদ্ধতার বিরুদ্ধে কার্যকর কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় নাগরিকদের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। বর্ষাকালে এসব এলাকার রাস্তাঘাট বৃষ্টি ও বাসাবাড়ীর নির্গত ময়লা আবর্জনার পানিতে একাকার হয়ে যায়। পানি নির্গমনের সুযোগ না থাকায় ভারী বৃষ্টিপাত হলেই ময়লা আবর্জনার দূষিত পানি বাসা বাড়ীতে উঠে পড়ে। তখন নাগরিকদের আর দুর্ভোগের সীমা থাকে না। এসব এলাকার বেশীরভাগ নাগরিককে জুতা হাতে নিয়ে চলাফেরা করতে হয়। স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদেরকে ময়লা আবর্জনা কাদা পানি মাড়িয়ে স্কুল কলেজে যাতায়াত করতে হয়। এলাকার মালেক মাষ্টার, মুক্তিযোদ্ধা খোরশেদ আলম, আবুল হোসেন, রেনু বেগম, মোকাম্মেল হক রানা, পুতুল রানী সূত্রধরসহ অনেকেই চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বর্ষা আসলে এই এলাকার কোমলমতি শিশুদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। হাসপাতালে জরুরী ভিত্তিতে কোন রোগী নিয়ে যাওয়া যায় না। দিনরাত ড্রেনের পানি রাস্তায় পড়ে থাকে। বেশি বৃষ্টি হলে হাঁটুপানি পাড়ি দিতে হয়। ঘরের আশপাশে পুকুরের মত পরিস্থিতি হয়। চারদিকে পানি জমা হয়ে থাকে। ছোট বাচ্চাদের নিয়ে ভয়ে ভয়ে থাকতে হয়। নামাজ পড়তে মসজিদে যাওয়া যায় না। শরীর নাপাক হয়ে পড়ে। ঘর থেকে বের হতেই দূর্গন্ধে টিকা যায় না। এসব এলাকায় পানি বাহিত রোগ বালাই বিশেষ করে ডায়রিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এ সকল সমস্যা নিয়ে আমরা একক বা দলগতভাবেও বারবার পৌরসভার কর্তৃপক্ষের কাছে গিয়েছি কোনো লাভ হয়নি।
ভুক্তভোগী নাগরিকগণ অবিলম্বে স্থায়ী পানিবদ্ধতা নিরসনসহ পৌর এলাকার নানাবিদ নাগরিক সমস্যা সমাধানে মেয়র ও কাউন্সিলরদের দ্রæত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার জোর দাবী জানান।
পৌর মেয়র আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম খান পানিবদ্ধতাসহ পৌরনাগরিকদের কিছু কিছু সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, নগর পরিচালন ও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় পানিবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়নে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন